সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

দুই বিদেশি হত্যা প্রসঙ্গে যত কথা

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

দুই বিদেশি হত্যা প্রসঙ্গে যত কথা

সম্প্রতি বাংলাদেশের মাটিতে দুই বিদেশি নাগরিকের নিহত হওয়া প্রসঙ্গে যত কাজ হওয়ার দরকার ছিল, তার থেকে কথা হচ্ছে অনেক বেশি। ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার গুলশানে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন। প্রায় তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেল, এই লেখাটি শেষ করা পর্যন্ত (শুক্রবার) হত্যার দায়ে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যদিও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, দ্রুতই দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হবে এবং সব রহস্য বের হবে।  গত ছয়-সাত বছরে উগ্রবাদী জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কৃত্বিত প্রশংসনীয়। ফুল প্রুফ (fool proof), অর্থাৎ শতভাগ নিরাপত্তা সর্বত্র সব সময় থাকবে তা কেউ আশা করে না। কিন্তু দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার এবং আইনে সোপর্দ হবে সেটাই মানুষ প্রত্যাশা করে। প্রাথমিকভাবে এতটুকু কাজ হলেই সবার ভিতর আস্থা ফিরে আসে। মানুষ ভীত হয় না। দুর্বৃত্তরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পুনরায় এমন ঘটনা সহজে ঘটাতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহজাত কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সাধারণ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যায় জড়িত দুর্বৃত্তদের ব্যাপারে অনেক সময় অনেক দুর্বলতা ও ঘাটতি দেখা গেলেও তা নিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয় না। কিন্তু দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির সমীকরণে এক বা একাধিক দেশি-বিদেশি গোষ্ঠী এই সময়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে, সেটা দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়মিত পরিস্থিতি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হওয়ার কথা। ইতালীয় নাগরিককে হত্যার প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রাষ্ট্র, সরকার এবং চলমান উন্নয়ন অগ্রগতির বিরুদ্ধে যে ভয়ানক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে সেটা তো যথার্থ কর্তৃপক্ষের অগোচরে থাকার কথা নয়। গোয়েন্দাদের নিরবচ্ছিন্ন পরিস্থিতি মূল্যায়নে এসব ষড়যন্ত্রের কোনো আভাস কি তারা পাননি? পেয়েছেন, কি পাননি, তা হয়তো কোনো দিন জানা যাবে না। কিন্তু গুলশানের যে জায়গায় এবং যে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে তাভেলা হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে তার দিকে তাকালে মনে হয় এমন ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর কোনো পূর্ব ব্যবস্থা ছিল না। পত্রিকায় পড়লাম, যে জায়গায় তাভেলা সিজার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেই জায়গার ও দুর্বৃত্তদের পালানোর রাস্তায় সিসি ক্যামেরা ওই সময়ে সঠিকভাবে কাজ করেনি। এ কথা সত্য হলে পুলিশের চেইন অব কমান্ডের কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সব সময়, সব জায়গার, সব কিছুর কার্যকারিতা কমান্ড পর্যায়ে নিশ্চিত করা যায় না। এ কথা মানার পরেও বলতে হয়, সময় ও পরিস্থিতির বিবেচনায় কোনো কোনো জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে ‘চেক অ্যান্ড রিচেক’ পদ্ধতিতে শতভাগ নিশ্চিত করতে হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্ন বলে কথা। গুলশানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নম্বর প্লেটহীন মোটরসাইকেল প্রবেশ করল, দাঁড়িয়ে থাকল এবং কাজ সেরে বেরিয়ে গেল। কারও চোখে পড়ল না। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সোর্স ও গোপন নেটওয়ার্কের কি হলো? প্রত্যেকটি মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল। দূর থেকে ছবি তোলা ও ভিডিও করা কোনো ব্যাপার নয়। রাত দুপুরে সংঘটিত ঘটনার ছবি এবং ভিডিও কে বা কারা ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েছে, এমন ঘটনারও নজির আছে। আর সন্ধ্যায় গুলশানের মতো জায়গায় একজন বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হলো, অথচ কেউ তার ছবি বা ভিডিও করেনি! রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঢাকায় তাভেলা সিজার এবং রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে দেশি-বিদেশি কোনো চক্র হত্যা করে থাকতে পারে, এই সন্দেহটি দিন দিন প্রবল হচ্ছে। কিন্তু হোশি কোনিওর বেলায় যেহেতু সহায়- সম্পত্তির বিষয় আছে এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ জড়িত, তাই এখানে হত্যাকারীরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। সন্দেহভাজন কয়েকজন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে তাভেলা সিজার সম্পর্কে যতটুকু তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে তাতে ব্যক্তিগত শত্র“তা অথবা কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তাকে হত্যা করেনি বলেই প্রতীয়মান হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাভেলা হত্যাকাণ্ডটি ঘটার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, কেউ যেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের ভিত্তিহীন অজুহাতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই মুহূর্তে তাদের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আওতায় থাকা পূর্বপরিকল্পিত ঘটনাটি ঘটিয়ে দিল। ইতালির নিরীহ নাগরিক তাভেলা সিজারের জীবন প্রদীপ হয়তো একটু আগেই নিভে গেল। এতে বোঝা যায় হত্যাকারীরা অনেক আগেই তাকে টার্গেট করে রেখেছে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পিত হত্যাকারীরা সব সময় Soft and Defenseless মানুষকে টার্গেট করে। এটা নিরীহ মানুষের দুর্ভাগ্য। তাভেলাকে আইএস হত্যা করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ যে তথ্য প্রদান করেছিল, তার কোনো ভিত্তি এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। গোয়েন্দা তথ্যে এখন এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, তাভেলা হত্যাকাণ্ডের কয়েক মিনিটের মধ্যে ঢাকার গুলশান থেকেই একটা টুইট বার্তা ছেড়ে দেওয়া হয় এই মর্মে যে, এই হত্যাকাণ্ড আইএস জঙ্গিরা করেছে। এটাও বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ বলে মনে হয়। আইএস যে কৌশলে ও পদ্ধতিতে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং যেভাবে প্রচারণার উপাদান তৈরি করে তার সঙ্গে তাভেলা হত্যাকাণ্ডের কোনো মিল নেই। আইএস, আল-কায়েদা আজ পর্যন্ত তাদের কাছে অভিযোগহীন ও নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্নভাবে হত্যা করেনি। আইএস, আল-কায়েদার টার্গেট তালিকায় পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ থাকলেও ইতালি এবং জাপানের নাম নেই। তাছাড়া আইএস এখন ইরান-সিরিয়ায় ত্রিমুখী আক্রমণে নাস্তানাবুদ। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম প্রধান দেশে তারা এই মুহূর্তে কী লক্ষ্য অথবা কী অর্জন করার জন্য একজন নিরীহ ইতালীয়কে হত্যা করবে?

 

 

কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের ওপর আক্রমণ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত ব্লগার নিহত হয়েছেন, তাদের সবার বিরুদ্ধে স্থানীয় জঙ্গিরা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সতর্কবার্তা জারি করেছে, হুমকি দিয়েছে এবং কার্যসম্পাদনের পর তার দায় স্বীকার করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। তাভেলা সিজার এবং হোশি  কোনিওর বেলায় কিন্তু এর কিছু দেখা যায়নি। সুতরাং তাভেলা সিজার ব্যক্তিগত কোনো কারণে নিহত হননি এটা প্রায় নিশ্চিত। আবার আইএস, আল-কায়েদা বা বাংলাদেশের স্থানীয় কোনো জঙ্গি তাকে হত্যা করতে পারে এমন কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যারা তাভেলাকে হত্যা করেছে তারা নিশ্চয়ই কোনো লক্ষ্য অর্জন বা সুবিধা পাওয়ার জন্য করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকাটাকেই প্রাধান্য দেয়, যা আমরা এ যাবৎ দেখে আসছি। সুতরাং এই সময়ে রাষ্ট্র যদি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যদি বাধাগ্রস্ত হয়, বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা এবং বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা যদি বাংলাদেশ থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয়, তাহলে কারা বা কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী সবচেয়ে লাভবান হবে, তা তো অনুমান করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এই সময়ে বিএনপি ও জামায়াতের দুজন মশহুর যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার দিনক্ষণ প্রায় সমাসন্ন। এই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য জামায়াত তো মরিয়া। বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে বড় নেতারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলের দাবি শুরু থেকেই করে আসছে। তাদের এ অবস্থানের কোনো পরিবর্তন এখনো হয়নি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এখনো বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য। সাকা চৌধুরীর লোকজন বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে পূর্বেই রায়ের কপি রায় প্রকাশের পূর্বেই বের করে আনার দুর্ধর্ষ সাহস দেখিয়েছে। আর এখন সাকা চৌধুরীর জীবন রক্ষার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে, এমন সন্দেহ তো অমূলক হতে পারে না। বিএনপির মহাসচিব একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, জঙ্গি দমনের জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আপাত দৃষ্টিতে এর থেকে উপযুক্ত কথা আর হতে পারে না। কিন্তু জনাব ফখরুল ইসলাম এ কথা অন্তর থেকে বলেছেন কিনা, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠেছে। প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট ব্যাকগ্রাউন্ড কারণ এবং ভিত্তিও রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কমিটি এবং দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত একটি জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠন। ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়া জেএমবি প্রধান মাওলানা সাঈদুর রহমানের নিজের স্বীকারোক্তি ও তার কাছে প্রাপ্ত ডকুমেন্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে জেএমবিতে যোগদানের পূর্বে তিনি জামায়াতের বড় নেতা ছিলেন। হেফাজত নেতা এবং একই সঙ্গে বিএনপির জোট সঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলামের চট্টগ্রামের লালখান বাজারের মাদ্রাসায় ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর বিশাল বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। পরে দেখা যায় মাদ্রাসার একটা রুমকে তারা বোমা তৈরির কারখানা বানিয়েছিল। মুফতি ইজহার এখন জেলে আছেন। এই মুফতি ইজহার গত শতকের নব্বই দশকে আফগানিস্তান থেকে ফিরে এসে লিখেছিলেন, মোল্লা ওমরের তালেবানি আফগানিস্তানে তিনি বেহেস্ত দেখে এসেছেন। বিএনপির আরেক জোট সঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোটের আরেক অংশের প্রয়াত নেতা বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের তালেবানরা তো বিশ্বে বড় জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠন। এই জঙ্গি উৎপাদনকারী ও জঙ্গিতন্ত্রে বিশ্বাসীদের জোট সঙ্গী করে বিএনপি যখন বলে জঙ্গি দমনে জাতীয় ঐকমত্য চাই, তখন সেটিকে প্রহসন ও বাগাড়ম্বরের মতো শোনায়। জামায়াত, তালেবানপন্থি ইসলামী ঐক্যজোটসহ উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে পরিত্যাগ করে বিএনপি যেদিন জঙ্গি দমনে জাতীয় ঐক্যের কথা বলবে সেদিন শুধু জঙ্গি দমন নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক চেহারা সম্পূর্ণ বদলে যাবে। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শগত জায়গায় এমন বিপরীতমুখী রাজনীতি বিশ্বের কোনো দেশে নেই। এর প্রধান কারণ, ১৫ বছরের সামরিক শাসন এবং এখনো সেই লেগেসির সরব উপস্থিতি। যাক, সেটি ভিন্ন ইস্যু আজ আর সে কথায় যাব না। তাভেলা হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের ওপর সামান্য আলোকপাত করে লেখা শেষ করব। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তাভেলাকে আইএস হত্যা করেছে কিনা, সেটি তারা খতিয়ে দেখছেন এবং আইএস থাকলে তা দমনে যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রকার সহায়তা প্রদান করবে। এ কথাটিও আপাত দৃষ্টিতে স্বাগত জানানোর মতো কথা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জঙ্গি উত্থান, তাদের তৎপরতা এবং তার আগে ও পরে সংশ্লিষ্ট দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা মূল্যায়ন করলে রাষ্ট্রদূতের উপরোক্ত কথায় আশা ও শঙ্কা দুটোই সৃষ্টি হয়। কারণ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও সোমালিয়া অন্তত এই চারটি রাষ্ট্রের কথা বলা যায়, যেখানে জঙ্গিদের উত্থান ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক ও করপোরেট স্বার্থ উদ্ধারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্ব অঙ্গনের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এটা পরিষ্কার যে, ভূ-রাজনৈতিক ও করপোরেট স্বার্থ উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু করতে পারে।  নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের পর জঙ্গি দমনে যা করণীয় তাও যুক্তরাষ্ট্র করবে। সেখানেও তাদের অনেক লাভ, অস্ত্র ব্যবসা, ঠিকাদারি ব্যবসা ইত্যাদি।  উপসংহারে শুধু এতটুকু বলতে চাই, কথার চাইতে কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রমাণ করতে হবে, এই সময়ে বিশ্ব মানবতা ও সভ্যতার এক নম্বর শত্র“ উগ্রবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য সংকীর্ণ স্বার্থকে বাদ দিয়ে সর্বাগ্রে দাঁড়াতে সবাই প্রস্তুত আছেন।

  লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

 

সর্বশেষ খবর