শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাড়ে তিন কোটি মধ্যবিত্ত

সাংঘর্ষিক রাজনীতির অবসানে ভূমিকা রাখুক

বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা এখন তিন কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজারেরও বেশি। দেশের ১৬ কোটি মানুষের ২২ শতাংশের বেশি মানুষ এখন মধ্যবিত্তের তকমাধারী। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্রুত উত্থানের এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আর ১৫ বছর পর ২০৩০ সাল নাগাদ মধ্যবিত্তের সংখ্যা দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। বিআইডিএসের বিবেচনায় দৈনিক দুই থেকে তিন ডলার যারা আয় করেন তারা মধ্যবিত্তের পর্যায়ে পড়েন। আন্তর্জাতিকভাবেও এটি একটি স্বীকৃত বিষয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, মধ্যবিত্তদের এক বিরাট অংশ চাকরিজীবী। তারা এখন ফ্ল্যাটে থাকে কিংবা জমির মালিক। ইন্টারনেটও ব্যবহার করেন তারা। টাকা-পয়সা রাখেন ব্যাংক হিসাবে। দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্রুত বিকাশ একটি ইতিবাচক ঘটনা। অর্থনীতিবিদদের মতে, একটা দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা যত বাড়বে, প্রবৃদ্ধি তত বেশি টেকসই হবে। মধ্যবিত্তের বিকাশে সেবা খাত বিস্তৃতি লাভ করে। দেশজ উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি যেহেতু সেবা খাত থেকে আসে সেহেতু টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে মধ্যবিত্তের বিকাশ অবদান রাখে। তবে বিআইডিএসের গবেষণার সীমাবদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। শুধু আয় দিয়ে মধ্যবিত্তের হিসাব করাকে যান্ত্রিক বলে অভিহিত করছেন যারা তাদের মতে, মধ্যবিত্তের মূল্যবোধগুলোও বিবেচনায় আনা উচিত। বিতর্ক সত্ত্বেও সন্দেহ নেই মধ্যবিত্তের বিকাশ বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত। স্বাধীনতার পর গত চার দশকেরও বেশি সময়ে চারদিকের সীমাহীন সমস্যা সত্ত্বেও দেশ দারিদ্র্য মোচনে সাফল্য দেখিয়েছে। আশার কথা, এ ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। আজকে যারা মধ্যবিত্ত এদের বেশির ভাগই দুই তিন দশক আগে ছিলেন নিম্নবিত্তের অন্তর্ভুক্ত। এদের কেউ কেউ দারিদ্র্য এবং হতদরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে আসতে পেরেছেন। মধ্যবিত্তের বিকাশ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যেহেতু সমান্তরাল পথে চলে সেহেতু এ বিকাশ দেশকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে নেওয়ার পথ দেখাবে এমনটিই আশা করা যায়। অযুত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের বিকাশ আরও দ্রুত হতো যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা যেত। সাংঘর্ষিক রাজনীতিকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হতো।  আমরা আশা করব মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ ব্যাপারে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। দেশের রাজনীতিকদের সঠিক পথে চলতে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখলে তা হবে একটি বড় ধরনের অর্জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর