রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তিস্তায় পানির হাহাকার

পানি বণ্টনের প্রতিশ্রুত চুক্তি আর কতদূর

নভেম্বরেই পানির অভাবে হাহাকার অবস্থায় পড়েছে এক সময়ের প্রমত্ত নদী তিস্তা। ভারতের গজলডোবার প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের বিপরীতে দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণের পরিণতিতে তিস্তা উপকূলে কার্তিকের দ্বিতীয়ার্ধেই দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। মাত্র কয়েক বছর আগেও তিস্তা ছিল প্রমত্ত এক নদীর নাম। তিস্তা অববাহিকার এক কোটিরও বেশি মানুষ এ নদীর ওপর নির্ভরশীল। উজানে যথেচ্ছভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে ভাটি এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটের মুখে পড়েছে। নদীতে পানি না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল চাষিরা বিপাকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তিস্তার পানিপ্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে যেখানে প্রয়োজন ৪ হাজার কিউসেক পানি, সেখানে বর্ষা শেষ না হতেই ব্যারাজ এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র আড়াই হাজার কিউসেক। এক মাস পরই সেচনির্ভর ইরি-বোরো ও রবি আবাদের কার্যক্রম শুরু হবে। বর্তমানে যে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এ পানি দিয়ে সেচ কার্যক্রম চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পানির অভাবে তিস্তা অববাহিকায় যে সংকট দেখা দিচ্ছে তার জন্য দায়ী উজানের পানি প্রত্যাহার। ভারতের বিগত সরকারের পক্ষ থেকে তিস্তার পানি সমবণ্টনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাগড়ায় শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। আশার কথা, ভারতের বর্তমান সরকার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসায় প্রতিশ্রুত তিস্তা চুক্তির জন্য তার দলের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক যেহেতু ভারতের জন্যও প্রত্যাশিত সেহেতু তিস্তার পানি বণ্টনে অপেক্ষার অবসান একান্তই কাক্সিক্ষত। ভারত এ মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখছে সোয়াশ কোটি মানুষের এ দেশটি। এ প্রত্যাশা পূরণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা ভারতের জন্যও অপরিহার্য।  নতুন ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ রেখে ভারত তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর