রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নোবেল প্রাইজ

আফতাব চৌধুরী

নোবেল প্রাইজ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ বইখানি লিখে যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন এটা সবার জানা। নোবেল পুরস্কার লাভ করার পরই পৃথিবীর বহু দেশ কবিগুরুকে চিনেছে, জেনেছে। তার পরিচিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের সর্বত্রই রবির রশ্মি পড়েছে। হয়েছেন তিনি বিশ্বকবি। এখনো প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় এবং পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার বিজেতা হয়ে ওঠেন আলোচনার বিষয়বস্তু। খবরের কাগজ, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট- সর্বত্রই এদের নাম, এদের কথা মুখে মুখে ফিরতে থাকে। কিন্তু নোবেল প্রাইজ এমন কী ব্যাপার, যার জন্য একে এত অপরিসীম গুরুত্ব দেওয়া হয়? নোবেল পুরস্কার কাকে দেওয়া হবে সেই ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপনীয় রাখা হয়। বোধহয় এই গোপনীয়তার জন্য নোবেল প্রাইজের এত সম্মান। এর গৌরব আজ পর্যন্ত অন্য কোনো পুরস্কার ম্লান করতে পারেনি। প্রত্যেক বিজয়ীকে একটি করে সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়। প্রতি বছর আলফ্রেড বার্নহার্ডের মৃত্যুর দিন ১০ ডিসেম্বর এক সুন্দর মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান করে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠান সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে হয়ে থাকে। নোবেল প্রাইজ কী করে আরম্ভ হলো? আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেলের নামই বা কেন এই পুরস্কারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে? এর কারণ, আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল ১৮৩৩ সালে সুইডেনে জম্ন গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত রাসায়নিক পণ্ডিত ও যন্ত্রশিল্পী। তার সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক পদার্থ আবিষ্কার, যার নাম হলো ডিনামাইট। পাহাড় বা অন্য বিরাট কঠিন জিনিস ভাঙার কাজে যে ডিনামাইট ব্যবহার হয় তাই নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে এর প্রয়োজন আরও বেশি। যুদ্ধে ডিনামাইটের বিধ্বংসী ভূমিকা মনে রেখেই বা এর সাহায্যে যুদ্ধকালে অসংখ্য মানুষের জীবনহানি হতে পারে এটা বুঝতে পেরে আলফ্রেড গভীর মনোকষ্ট পান। তাই তিনি ১৮৯৫ সালে, মৃত্যুর এক বছর আগে নিজের হাতে উইল লিখে তার সম্পত্তির অধিকাংশ দিয়ে যান বিশ্বজগৎকে। তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ ডলার। এই সঞ্চিত টাকা থেকেই ঘোষিত হলো নিম্নোক্ত বিষয়ে নোবেল পুরস্কার- পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তি। এই হলো নোবেল প্রাইজ। সুইডেনের নোবেল ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। ১৯০০ সালের ২৯ জুন এই ‘নোবেল ফাউন্ডেশনে’র সৃষ্টি হয়। সংস্থাগুলোর নাম ও পুরস্কারের বিষয় হলো রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স (পদার্থবিদ্যা ও রসায়নশাস্ত্র), রয়াল ক্যারোলিন ইনস্টিটিউট (শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাশাস্ত্র) এবং সুইডিস সাহিত্য একাডেমি (সাহিত্যে)। সব মিলিয়ে এই সংস্থাগুলোর  মোট সভ্য সংখ্যা ২৪০। ১৪০ জন সুইডেনবাসী আর ১০০ জন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আর বড় বড় গবেষণাগারের পরিচালকদেরও পরামর্শ নেওয়া হয় এই পুরস্কারটি দেওয়ার জন্য। প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নোবেল কমিটি যদি শেষ পর্যন্ত দুজনের নাম পান তো একজনের নাম বাতিল করার চেষ্টা করেন। অবশ্য, কোনো কোনো বিষয়ে একের অধিক ব্যক্তিকে বহুবার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো প্রতিভাবান ব্যক্তিকে একাধিকবারও নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর