বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ধর্ম, জঙ্গিবাদ ও আত্মপরিচয়

ডা. এম এ হাসান

ধর্ম, জঙ্গিবাদ ও আত্মপরিচয়

দেশ যখন জঙ্গি তথাকথিত আইএস এবং মৌলবাদী জামায়াত সমর্থিত নানা সন্ত্রাসী চক্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ এবং সমগ্র পাশ্চাত্য বিশ্ব যখন স্বসৃষ্ট ওই দানবকে রুখতে গিয়ে বিপর্যস্ত তখন যে বিষয়টি সবাই বিস্মৃত হচ্ছে তা হলো ওই বিভ্রান্ত মানুষগুলোর নষ্ট দর্শন এবং তাদের আত্মপরিচয়ের শক্তি। নষ্ট হলেও এটি একটি আত্মপরিচয়। ওই আত্মপরিচয় নির্মাণে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে পাশ্চাত্য শক্তির নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং ভ্রান্তনীতি।  যারা সীমাহীন লোভ ও ক্রোধে ইরান থেকে শুরু করে মিসরের সুয়েজ পর্যন্ত দাপিয়ে বেরিয়েছে, উত্তর আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোতে বহুমুখী স্বার্থের কারণে নিরন্তর রক্তপাত ঘটিয়েছে, পূর্ব এশিয়ায় গণহত্যার লীলাভূমি বানিয়েছে, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার সভ্যতাকে মুছে অগুনতি মানুষের বুক ও পাঁজর দাপিয়ে বিশ্ব সভ্যতার সূতিকাগারগুলো একের পর এক শ্মশান বানিয়েছে তারাই যে তালেবান, আল কায়েদা ও আইএসের স্রষ্টা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের পূর্বসূরি ব্রিটিশ ও অন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো শিয়া ও সুন্নি বিভেদ সৃষ্টি করে সালাফিস্টদের মদদ দিয়েছিল এবং আজও দিচ্ছে। এভাবেই তারা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ও উদ্দেশ্য আড়াল করে প্রাচীন সভ্যতাগুলো মুছে নিজেদের ঝাণ্ডা উড়ানোর চেষ্টা করছে।

আজকের সন্ত্রাসীরা ওই সালাফিস্টদের উত্তরসূরি। এরাই মিসরের ব্রাদারহুড এবং জামায়াতের সমর্থক। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, পাশ্চাত্য বিশ্ব যেমন তার হীনস্বার্থ ও প্রবণতার কারণে একটি নষ্ট মূল্যবোধ ও পরিচয় নির্মাণ করছে, সভ্যতা ও মানবতার কপট বহিরাবরণ ধারণ করেছে তেমনি ওই সন্ত্রাসী চক্র বৃহত্তর বলয়ের মধ্যে ক্ষুদ্রতর বলয় সৃষ্টি করে কল্পিত এক আদিম ও নিষ্ঠুর সত্তাকে আপন মনে করে মানববিধ্বংসী খেলায় মত্ত হয়েছে। এটি গডজিলা সদৃশ্য এক প্রভু এবং তার পোষা নেকড়ের লড়াই। মাঝখান থেকে সারা বিশ্বের মানুষ সীমাহীন মূল্য দিচ্ছে। সঙ্কুচিত হয়ে আসছে আমাদের ভূমি, আকাশ, এমনকি স্বাধীনভাবে বিচরণের আঙ্গিনাটুকু।

এ অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে একদিকে যেমন ধর্মগুলোর সত্যিকার ইতিহাস, আচরণবিধি এবং মূল বক্তব্যগুলো পরিষ্কার করতে হবে তেমনি যুগের ভাণ্ডারে সঞ্চিত সভ্য মানুষগুলোর ‘কোড অফ কন্ডাক্টগুলো’ ব্যাখ্যা করতে হবে। নতুন করে নির্মাণ করতে হবে মূল্যবোধ। এদেশসহ সারা বিশ্বে বারবার এ মূল্যবোধ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। যুদ্ধবিগ্রহ, প্রকৃতিক দুর্যোগ- খরা, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং সাম্প্রতিক গ্লোবালাইজেশনের আগ্রাসন এ মূল্যবোধকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছে।

 

 

খাড়ির প্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ দেশ ও সমাজ। আপন অস্তিত্ব ও পরিচয় বাঁচাতে হলে সর্বশক্তি দিয়ে নির্মাণ করতে হবে নব আত্মপরিচয়। সভ্যতার আকর গ্রন্থ থেকে শুরু করে সব ধর্মগ্রন্থ ও দর্শন; ধর্মগুরু থেকে শুরু করে সাধুসন্ত, পণ্ডিত, দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং প্রধান নবীদের চরিতাবলি ও আচরণলিপির সারবস্তু নিয়ে বিন্দু বিন্দু করে নির্মাণ করতে হবে একটি অবয়ব। ওই ভার্চুয়াল অবয়ব কীভাবে চিন্তা করবে, কীভাবে কাজ করবে, কী করবে, কী করবে না; কী হবে তার আরাধনা- তা মোটা দাগে লিখতে হবে মনের দেয়ালে। এসব প্রোথিত করতে হবে চেতনার আকাশে এবং অবচেতনে। এ ছবিটি পাঠ্যপুস্তকসহ সব মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। নষ্ট চিন্তা ও প্রভাব যাতে দেহ ও মনে প্রবেশ না করে সেই প্রতিরক্ষা ব্যুহটি নির্মাণ করতে হবে আমাদের। মধ্যপথ অনুসারী শান্তিকামী তথা সাহসী, সহিষ্ণু, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি, গোষ্ঠী ও সমাজ নির্মাণে অবদান রাখতে হবে আমাদের সবাইকে।

স্থানীয় উপকথা, রূপক চিন্তা এবং ভালোমন্দ সম্পর্কিত ইথিকস বোধ যখন হৃদয়ের শূন্যতা, ঈশ্বরচিন্তা এবং অন্তরাত্মার আকাক্সক্ষার সঙ্গে ঐকতান সৃষ্টি করে তখনই ধর্মচিন্তা বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র নির্মিত হয়। ধর্মচিন্তাকে আশ্রয় করে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ প্রণয়ন ও প্রয়োগচিন্তা ব্যক্তি ও সমষ্টিকে নানা আচার, অনুষ্ঠান, Rituals  ও বিধিনিষেধে বেঁধে ফেলে।

এসব পরিচয় বা অন্য কোনো পরিচয় যখন ব্যক্তি ও সমষ্টির অন্তরে ভিন্নতার প্রতি বিদ্বেষ, ক্রোধ ও অসহিষ্ণুতার বীজ বুনে দেয় তখনই শুরু হয় সংঘাত। ভিন্ন চিন্তা দোষণীয় নয় তবে ভিন্নতার প্রতি বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতা নিতান্তই অপরাধ। বিশ্ব সমাজের নানা স্তরে, নানাভাবে এ বিদ্বেষ ও ঘৃণার চর্চা চলছে। সম্পদের অসম বণ্টন থেকে শুরু করে মানুষের শান্তি, মর্যাদা, অধিকারের ওপর আঘাত, ভারসাম্যহীন চিন্তা ও প্রণোদনা সৃষ্টি করে। সাধ্য ও স্বপ্নের সঙ্গে আকাক্সক্ষার সংঘাত বেপথু মানুষকে আত্মঘাতী করে তোলে। এ অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নানামুখী নিবিড় শিক্ষা এবং সমঝোতাপূর্ণ আলাপচারিতা প্রয়োজন। সমাজের প্রধান ক্ষতগুলো নিরাময়ে প্রত্যেক জাতি, গোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে আপন ভিন্নতা ও মর্যাদা নিয়ে নিজের ভূমিতে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন। ভিন্নতার প্রতি মর্যাদা যেমন শান্তি ও সাম্যবিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, তেমনি যারা ঈশ্বরে আস্থাবান নয় তাদের সঙ্গেও সেতুবন্ধ নির্মাণ করতে পারে। আমাদের জ্ঞান ও বোধের সীমাকে স্বীকার করে শান্তি ও সহনশীলতার সিংহ দুয়ারটি উন্মোচন করা দুরূহ কোনো ব্যাপার নয়। 

এ শান্তিবাদী সমঝোতামূলক মত প্রচারে আলোচনা এবং অহিংস আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখা প্রয়োজন ১৯০১ সালে ফিনিসরা যে রুশবিরোধী অহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার ফল তারা ঘরে তুলে ১৯০৫ সালে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন এবং ভারতের মাটিতে মহাত্মা গান্ধীর স্বাধীনতা আন্দোলনটা ওই অহিংস আন্দোলনের ফলশ্রুতি। আত্মপরিচয় নির্মাণ করতে গিয়ে মনে রাখতে হবে যে- Self-esteem has as its complement disparagement of others. ‘Vanity and pride beget contempt and hatred. But contempt and hatred are exciting emotions from which people ‘get a kick’ এ ভালো কাজ করতে হলে অহংবোধের উত্তেজনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ক্ষমতাধরদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কমিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাক্সলের বক্তব্য স্মর্তব্য। তিনি ‘এন্ডস এন্ড মিন্স’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন- “The ethics of international politics are precisely those of the gangster, the pirate, the swindler, the bad bold baron. The exemplar citizen can indulge in vicarious criminality, not only on the films, but also in the field of international relations.” আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।

প্রত্যয় ও নিরবচ্ছিন্ন ইচ্ছা থাকলে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব যাবতীয় নষ্ট দর্শন ও নষ্ট কর্ম থেকে। এ জন্য প্রয়োজন পুরান আইডেনটিটি মুছে ফেলা এবং নতুন আইডেনটিটি গ্রহণ করা। এটি সমাজবিজ্ঞানী ও সোশ্যাল সাইকোলজিস্টদের কাজ। তবে এতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সমর্থনটি সবল হতে হবে। সচেতন সমাজের অংশগ্রহণ ছাড়া এ কাজ প্রায় অসম্ভব।

আত্মপরিচয় নির্মাণের ক্ষেত্রে সমাজ ও সংস্কৃতিকে সবকিছুর ওপর গুরুত্ব দিলে, ধর্মকে ব্যক্তির একান্ত বিশ্বাস মনে করলে, রাষ্ট্র থেকে ধর্মাচারকে বিচ্ছিন্ন করতে পারলে, লোক দেখানো বাহ্যিক আচরণ থেকে মুক্ত হয়ে ধর্ম পালন করলে মানব ধর্মবিরোধী অনেক কর্ম থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এতে আস্তিক নিবিড়ভাবে খুঁজে পাবে ঈশ্বরকে, আর মুক্তমনের যুক্তিবাদী মানুষ মুক্ত করতে পারবে আপন আত্মাকে। মানুষের সংস্কৃতি নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। একে প্রভাবান্বিত করে অর্থধর্ম, ইন্দ্রিয়জাত ধর্ম, স্বার্থধর্ম এবং উৎপাদনের সঙ্গে সামাজিক শ্রমের সম্পর্ক তথা শরীর ও আত্মার নানা চাহিদা। এক্ষেত্রে বিচারমূলক ও বিশ্বাসমূলক ধর্ম সংস্কৃতির একটি সমন্বয় প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় সুফিবাদ ও বৈষ্ণববাদ হতে পারে বাঙলার বর্ণিল সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়ের মেরুদণ্ড।

ব্যক্তি যদি ধর্ম ও সংস্কৃতির দাস না হয়ে মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী হতে পারে এবং আপন ভৌগোলিক তথা সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে তাহলেই উত্তরণের পথটি খোলা থাকে। তবে, এক্ষেত্রে মানুষের জেনোটাইপ, তার চিন্তাজগৎ, রূপকল্পনা, জ্যামিতিক চিন্তা, চেতনা, ঝুসনড়ষ নির্বাচন-সামগ্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ভাষা, নানা ভালোলাগা, প্রবণতা, ভিন্নতার প্রতি অনুভূতি ইত্যাদি অসংখ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তথা সামষ্টিক মানস এ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে।

এক্ষেত্রে আরোপিত ধর্ম এবং ধর্মনির্ভর দর্শনের প্রভাব অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ধর্ম যখন রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনের ভিত নির্মাণ করে তখন ধর্মের রূপকল্পনা নানা প্রতীক ও চিন্তাতে এমন গভীর প্রবিষ্ট হয় যে অবচেতন ও চেতনানির্ভর কর্মকাণ্ডসহ ব্যবহারিক জীবনের প্রকাশ ও প্রতিক্রিয়াও প্রভাবান্বিত হয়। এতে করে বাঙলার শ্যামল মাটিতে খেজুর বৃক্ষসহ আরবি ঘোড়া এবং তলোয়ার জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। হেজাব ও জোব্বার মতো বহিরাবরণগুলো মুখ্য হয়ে ওঠে। নানা মতভেদ ও সংঘাত নিরসনে সমঝোতার চেয়ে জিহাদ বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এ জিহাদ আত্মার মুক্তি নয়। এটি আত্মার দাসত্ব। নষ্ট কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধতাকে আপন করে নিতে হলে আত্মার জিহাদ প্রয়োজন। এমন জিহাদ আজ বিস্মৃত।

বলাবাহুল্য, সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে শক্ত মূল্যবোধের প্রয়োজন। আর এই মূল্যবোধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মুক্তচিন্তা, বিজ্ঞানচর্চা, দর্শন পাঠ এবং শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের গুরুত্ব কম নয়। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না সেটাও একটা বিশ্বাস। তাদেরও একটি নৈতিকতার মাপকাঠি আছে এবং জীবনের শৃঙ্খলা আছে। প্রায় প্রতিটি ধর্মে বিশ্বাসের জায়গাটিকে আলাদা করে রাখলে জাতিগত শিক্ষা এবং নৈতিকতার একটি বড় স্থান থাকে। অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারটিকে যদি পরিহার করা যায় তাহলে ওই শিক্ষা ও নৈতিকতা একটি জাতির নৈতিকতা নির্মাণে কোনো না কোনো ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে যেসব ধর্মে নেতিবাচক উপাদান বেশি, তার চেতনার স্তরকে ঊর্ধ্বমুখী করে চরিত্র নির্মাণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেসব ধর্ম মনকে আঁধারে আচ্ছন্ন করে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিষবাক্য ছড়ায় তা একটি জাতির মনন ও সংস্কৃতিতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব রাখে। এরা নিজেদের জন্য তো বটেই অপরের জন্যও বিপজ্জনক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের নেতিবাচক ধর্মগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। জৈন ধর্ম, বুদ্ধ ধর্মের মতো আলোকিত ধর্মগুলো যারা মানবতা ও ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়েছে, যারা মানুষের নেতিবাচক প্রবণতাগুলোকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে মানুষকে মুক্তচিত্তে প্রায়োগিক ধর্মে উদ্বুদ্ধ করেছে তারা দীর্ঘকাল এদেশে টিকতে পারেনি। ফাঁকফোকর দিয়ে বৈষ্ণব ধর্ম ও চৈতন্যবোধের মতো বিভিন্ন মতবাদ এবং ক্ষুদ্র ধর্মগুলো টিকে গেছে। ইসলামের সুফিবাদ মার খেয়েছে কট্টরবাদীদের কাছে। বৌদ্ধধর্ম ভারত থেকে চীনমুখী এবং পূর্ব এশিয়ামুখী হতে পারলেও চীনের তাওবাদ বা কনফুসিয়াসবাদ ভারত ও বাংলার মাটিতে কোনো শেকড় গাড়তে পারেনি। বিস্ময়কর হলেও সত্য, হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের মতো খ্রিস্টান ধর্মও একক ধারায় স্থির থাকেনি। প্রায় সব ধর্ম অনেক মতবাদ এবং বিশ্বাসের সমাহার। এতে মূল ধর্ম থেকে অনেক বিচ্যুতি হয়েছে নানাভাবে। এ কারণে দক্ষিণ স্পেন, সিসিলি, উত্তর ইউরোপ এমনকি মেক্সিকোর চার্চগুলো অনেকটা প্যাগান মন্দিরের মতো। ভারত ও বাংলায় যে খ্রিস্টান ধর্ম চর্চিত হয় তাতে হিন্দু ধর্মের ছোঁয়া লেগে আছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা কেবল মহাজন ও হীনজনে বিভক্তি না হয়ে আরও বহু উপধারায় বিভক্ত হয়ে আছে।

যুক্তিবাদী ধর্মগুলোর ওপর ব্যক্তি অহঙ্কার, মাহাত্ম্যবাদ এবং নানা সঙ্কুচিত চিন্তা তথা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থচিন্তা প্রভাব বিস্তার করেছে।  মুক্ত করা প্রয়োজন সব ধর্মের সারকথা; সামনে আনা প্রয়োজন প্রায়োগিক দর্শনের ‘কোড অব কন্ডাক্ট’।

- লেখক : আহ্বায়ক, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর