মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ধরিত্রী বাঁচানোর প্যারিস চুক্তি

বিশ্ববাসীর ঐকমত্যের প্রতিফলন

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বিশ্ব উষ্ণতা রোধে ঐতিহাসিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের নেতারা। দুই সপ্তাহ ধরে তুমুল বিতর্কের পর শনিবার রাতে তারা এ সমঝোতায় উপনীত হন। চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। তবে তা দেড় ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতেও তারা সর্বতোভাবে চেষ্টা চালাবেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণের লাগাম টানবে সব দেশ। কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারেও একমত হয়েছে প্যারিস সম্মেলন। ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর উন্নত দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এ খাতে সহায়তা বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করবে। প্যারিস চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ বেশি মাত্রায় কার্বন নির্গতকারী দেশগুলো। স্বল্পোন্নত দেশগুলোও চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে। তবে এ চুক্তি বিশ্ব উষ্ণতার কুপ্রভাব থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে চুক্তির সব অংশ মানা বাধ্যতামূলক না হওয়া এর একটি দুর্বল দিক। কার্বন নির্গমন কমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ, এ-সংক্রান্ত দলিল জমা দেওয়া এবং তা পুনর্মূল্যায়নের বিষয় বাধ্যতামূলক করা হলেও কোন দেশ কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমাবে সে ব্যাপারে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এ চুক্তি থেকে শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু পাবে না— এ আশঙ্কার কথাও বলা হচ্ছে। কারণ ২০২০ সাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার দেওয়ার কথা বলা হলেও তা শেষ পর্যন্ত শুভঙ্করের ফাঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এ টাকা কে দেবে, কোথা থেকে আসবে এবং কাকে দেওয়া হবে সে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি।

চুক্তির নানা নেতিবাচক দিক থাকলেও বিশ্ব উষ্ণায়ন হ্রাসে বিশ্বের সব দেশের ঐকমত্য নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত, সে বিষয়টি চুক্তিতে স্বীকৃত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিশ্বজনীন সমস্যা মোকাবিলায়

এ ঐকমত্য এক বড় অর্জন।

সর্বশেষ খবর