মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টির সেরা মানবরূপে সৃষ্টি করার পর মানের বলে বলীয়ান করেছেন। তিনি আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী সায়্যেদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আমরা মুসলমান। আমাদের পরিচয় হলো, আমরা আমাদের নবী (সা.)-এর প্রকৃত অনুসারী। আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলামের প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখা জেনে আমলে রূপান্তরিত করাই ইসলামের দাবি। আমরা নবীজীর উম্মত হিসেবে তিনি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বাতলিয়ে গেছেন। সাহাবায়ে কেরামদের বিশাল জামাতের মাধ্যমে কোরআন-হাদিসের বাস্তব রূপরেখা রেখে গেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আলে-ইমরানের ১০২নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুসলমান! অন্তরে আল্লাহকে সেভাবে ভয় কর, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। সাবধান অন্য কোনো অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে। বরং এ অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু আসে যে, তোমরা মুসলমান।’ আলোচ্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা একটি মূলনীতির আলোকপাত করেছেন, তা হলো তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্থাত্ তাঁর অপছন্দনীয় কাজকর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকা। নিজেকে দীন-ইসলামমুখী করা। বদদীন, শারারাত ও খোরাফাত থেকে নিজেকে, অপর ভাইকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখার সাধ্যমতো চেষ্টা করা। ইমানি হালাতে যেন মৃত্যু হয় তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনে প্রত্যেক নামাজের পর দোয়া করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন। তাকওয়ার অর্থ হলো, প্রত্যেক কাজকর্মে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা। জীবনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহকে হাজের নাজের মনে করা। কখনো ও কোনো অবস্থাতেই আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া। (বাহরে মুহিত) আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার তার সব অবলম্বন করা। আর আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জিত হয় সেজদার মাধ্যমে। হজরাতে আম্বিয়ায়ে কেরামরা আল্লাহপাককে সার্বক্ষণিক নিজের সঙ্গে আছে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। যেমন হজরত মূসা (আ.) বনি ইসরাইলকে বলেছিলেন, ইন্না মাইয়া রাব্বি (আমার রব আমার সঙ্গে আছেন)। হজরত রসুলে আরাবি (সা.) মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করার সময় পথিমধ্যে সোরাকা বিন মালেককে দেখার কারণে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছিলেন, সে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের কাছে এসে পড়বে। তখন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে রসুল (সা.) বলেন, লা-তাহযান ইন্নাল্লাহা মায়ানা (কোনো চিন্তা কর না আমাদের সঙ্গে আল্লাহ আছেন)। পবিত্র কোরআনের অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্পর্কেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।’ (সূরা ক্বাফ : ১৬) বস্তুত আল্লাহর ভয় ও নৈকট্যতা অর্জন হয় ইবাদতের মাধ্যমে। আর আল্লাহর ভয় সৃষ্টি ও ইবাদতের স্বাদ ওই ব্যক্তির ভিতরে থাকে, যার মধ্যে এত্তেবায়ে সুন্নত তথা সুন্নতের অনুসরণ আছে। সুন্নতের মুহাব্বত তখনই আসবে যখন মুসলমান জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থাত্ পোশাকে-লেবাসে, চলনে, বলনে খানা-পিনায় রসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অন্তরে স্থান দেবে এবং সুন্নতি জীবনযাপন করবে। কোনোভাবেই সুন্নত থেকে পিছপা হবে না।
লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।