সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ভারতের শেষ মোগল সম্রাট

পুরো নাম আবুল মুজফ্ফর সিরাজ উদ্দিন মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ গাজি। তিনি হলেন ভারতের শেষ মোগল সম্রাট। ২৪ অক্টোবর ১৭৭৫ সালে দিল্লির লালকেল্লায় জন্ম এবং ৭ নভেম্বর ১৮৬২ সালে বর্তমান মিয়ানমারের ইয়াংগুনে তার মৃত্যু হয়। তিনি সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ ও সম্রাজ্ঞী লাল বাঈর দ্বিতীয় পুত্র। তার বংশতালিকা বিশতম স্তরে গিয়ে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবরের সঙ্গে মিলেছে। নানা কারণে বাহাদুর শাহ জাফরের জীবন ভারতের সাহিত্য, সংগীত, আধ্যাত্মিকতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ‘জাফর’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। পিতার মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এবং পিতা সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহর মতো দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পেনশনভোগী ছিলেন। তিনি বার্ষিক এক লাখ টাকা ভাতা পেতেন। পিতার মতোই নিজের এবং মোগল খানদানের মর্যাদা ও ভরণপোষণের জন্য ভাতা বৃদ্ধির যথেষ্ট চেষ্টা করেন কিন্তু হিন্দুস্থানের বাদশাহ উপাধি পরিত্যাগ ও লালকেল্লার বাইরে গিয়ে সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাপনের শর্ত মেনে নেননি। এ ছাড়া দিল্লির সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নিয়েও ইংরেজদের সঙ্গে সম্রাটের মনোমালিন্য চলছিল। দিল্লির সম্রাটের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে ইংরেজ কোম্পানি নানাভাবে উদ্যোগী হয়। ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও সম্পদ এক কথায় সব হারিয়ে দিল্লির নামে মাত্র সম্রাট ও ইংরেজদের দয়ার পাত্র হয়ে প্রাসাদের চার দেয়ালের মধ্যে জীবন কাটাতে লাগলেন। অমর্যাদা ও দুঃখ ভুলে থাকার জন্য মোগল সম্রাট লেখালেখির জীবন বেছে নেন। তিনি সারাক্ষণ শায়ের-মুশায়রা ও গজলে নিমগ্ন থাকতেন। লালকেল্লায় বসাতেন সাহিত্য-সংগীতের জলসা। উর্দু-ফার্সি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বিদগ্ধ সমাজ সম্রাটের আহ্বানে সাড়া দিতেন। সম্রাট নিজেও কাব্যচর্চা করতেন, লিখতেন নিজের জীবনের কষ্ট ও বিষাদে ভরা গজল-শায়ের। মানবতাবাদী, দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক ও সুফি কবি বাহাদুর শাহ তার কবিতার প্রতিটি ছত্রে দুঃখ ও বিষাদের সঙ্গে ফুটিয়ে তোলেন দেশ ও জাতির পরাধীনতার গ্লানির কথা।

১৮৫৮ সালের ৭ অক্টোবর বৃদ্ধ সম্রাট, সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল, দুই শাহজাদা, শাহজাদি, আত্মীয় ও ভৃত্যদের নিয়ে জাহাজে করে ব্রিটিশ সৈন্যরা দিল্লি ত্যাগ করে। ৯ ডিসেম্বর সে জাহাজ ইয়াংগুন (রেঙ্গুন) পৌঁছে। ক্যাস্টেন নেলসন ডেভিসের বাসভবনের ছোট্ট গ্যারেজে সম্রাট ও তার সঙ্গীদের বন্দিজীবন শুরু হয়। মাতৃ-পিতৃভূমি ভারত থেকে বহুদূরে ইয়াংগুনের মাটিতে তিনি চরম অমর্যাদার, অনটন ও দুঃখের মধ্যে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটান।

পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন সম্রাট। চার বছরের বিড়ম্বনাময় জীবনের অবসান ঘটে ১৮৬২ সালে। অতি গোপনীয়ভাবে তাকে কবরস্থ করা হয়, ঘিরে দেওয়া হয় বাঁশের বেড়া দিয়ে। ইংরেজদের ধারণা ছিল, একসময় বাঁশের বেড়া বিলীন হবে, ঘাস গোটা কবরকে আচ্ছাদিত করে ফেলবে। কোথায় শেষ মোগল সম্রাট শায়িত আছেন তার চিহ্ন কেউ খুঁজে পাবে না। ইংরেজরা জানত, ভারতবাসীর মনে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের মর্যাদা কতটুকু। সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী জিনাত মহল মারা যান ১৮৮৬ সালে, সম্রাটের কবরের পাশে হয়েছে তার কবর। এ দুটি কবর দেশপ্রেমিকদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।     আফতাব চৌধুরী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর