বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

জলপথে তেল পরিবহন

জরাজীর্ণ ট্যাংকের ব্যবহার বন্ধ হোক

মেয়াদোত্তীর্ণ জরাজীর্ণ ট্যাংকারে করে জলপথে তেল পরিবহন দুর্ঘটনার হুমকি সৃষ্টি করছে। দেশের জীববৈচিত্র্যের জন্য ডেকে আনছে বিপদ। সারা দেশের তেলের ডিপো ও বিদ্যুেকন্দ্রে যেসব ট্যাংকারে করে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয় তার বেশির ভাগেরই বয়স ৪০ থেকে ৭১ বছর। এসব ট্যাংকার ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের স্বীকৃত মানের অধিকারীও নয়। অধিকাংশ ট্যাংকার বিদেশ থেকে আমদানির পর কেটে বড় করা হয়েছে। নৌযানের শ্রেণি নির্ধারণকারী এজেন্সির দ্বারা এ ধরনের পরিবর্তনের স্বীকৃতিও নেই। জরাজীর্ণ ট্যাংকারে করে তেল পরিবহনের কারণে ইতিমধ্যে বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটেছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে জরাজীর্ণ ট্যাংকার দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার কারণে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটা ট্যাংকার ২৫ বছর ব্যবহার করা যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী ১০ বছর তা ব্যবহারযোগ্য। অথচ অজ্ঞাত কারণে ৭০ বছরের জরাজীর্ণ ট্যাংকারও বাতিল করা হচ্ছে না। ২০/২৫ বছর আগে যেসব ট্যাংকার স্ক্রাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়ার কথা, সেগুলো দিয়ে তেল পরিবহন হলেও তা দেখার কেউ নেই। দেশে মানসম্মত তেলের ট্যাংকার থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ ট্যাংকারে তেল পরিবহন রহস্যজনক। বিদ্যুেকন্দ্রে জ্বালানি তেল সরবরাহকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের আলোকে ২০১০ সালের পর আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শতাধিক নতুন ট্যাংকার তৈরি করা হলেও সেগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে না। নতুন ট্যাংকারে তেল চুরির সুযোগ না থাকায় চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত একটি মহল জরাজীর্ণ ট্যাংকার দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহনে উত্সাহী। নতুন ট্যাংকারে তেল পরিবহনে যেখানে প্রতি নটিক্যাল মাইলে ব্যয় হয় টনপ্রতি ৩.৩২ টাকা সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাংকারে ব্যয় দেখানো হচ্ছে ৩.৮৪ টাকা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে সব জরাজীর্ণ ট্যাংকার বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানের নতুন ট্যাংকারে তেল পরিবহনের কথা থাকলেও ট্যাংকার মালিকদের তদ্বিরে তা কার্যকর করা যায়নি। জরাজীর্ণ ট্যাংকারে তেল পরিবহনের ফলে প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে রাখার এই অবিমৃষ্যকারিতার অবসান হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর