বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

রুহবানিয়াত সম্পর্কে রসুল (সা.)-এর ভাষণ

মাওলানা মুহম্মাদ আবদুল খালেক

এক দিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দান করলেন। তিনি কেয়ামতের বর্ণনা দিলেন। জনগণের মন বিগলিত হলো। তাদের চোখ থেকে অশ্রুর ধারা প্রবাহিত হলো। এ প্রেক্ষাপটে ১০ জন বিশিষ্ট সাহাবি উসমান বিন মা’আজুনের ঘরে একত্রিত হলেন। এ মাহফিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন হজরত আবু বকর, আলী বিন আবু তালিব, আবদুল্লাহ বিন মাসউদ, আবদুল্লাহ বিন উমর, আবু জর গিফারি, সালিম মাওলা আবু হুজায়ফা, মিকদাদ বিন আসওয়াদ, সালমান ফারসি, মাকল বিন মাকরু এবং গৃহকর্তা উসমান বিন মা’আজুন (রা.)।

তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পর্যালোচনা করলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য তারা সংসার-ধর্ম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তারা সাধু-সন্ন্যাসী ও সুফিদের মতো জীবনযাপন করবেন, ছিন্নবস্ত্র পরিধান করবেন। সর্বদা দিনের বেলা রোজা রাখবেন। সারা রাত ইবাদত-বন্দেগি করবেন। বিছানায় ঘুমাবেন না। গোশত, চর্বি এবং পুষ্টিকর কোনো খাদ্য গ্রহণ করবেন না। স্ত্রীলোকের কাছেও যাবেন না। সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত এবং গুহার মধ্যে বসবাস করবেন। তাদের এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সংবাদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি উসমান বিন মা’আজুনের ঘরে এলেন। উসমান তখন ঘরে ছিলেন না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান বিন মা’আজুন (রা.)-এর স্ত্রী খাওলা বিনতে আবু উমাইয়াকে বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। খাওলা নিজ থেকে কিছুই বললেন না। ঘটনাটি চেপেও গেলেন না। শুধু বললেন, আপনার কাছে যখন সংবাদ পৌঁছেছেই তখন তা কী করে মিথ্যা হতে পারে। কিঞ্চিত্ অপেক্ষা করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। উসমান বিন মা’আজুন কিছুক্ষণ পর ঘরে এলেন। স্ত্রীর কাছে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সংবাদ পেয়ে তত্ক্ষণাত্ সঙ্গীদের নিয়ে তাঁর দরবারে রওনা হলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিষয়ের সত্যতা জিজ্ঞাসা করলে তারা ঘটনাটি খুলে বললেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি যে তাদের কাম্য তা তারা তাকে জ্ঞাত করলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বক্তব্য শুনে এ ভাষণটি দিলেন : ‘তোমাদের ওপর তোমাদের নফসের হক রয়েছে। নফল রোজা রাখ এবং (কোনো কোনো সময়) তা থেকে বিরত থাক। রাতের বেলা (কিছু সময়) তাহাজ্জুদের নামাজ পড় এবং (কিছু সময়) ঘুমাও। আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ি এবং ঘুমাইও। কোনো কোনো সময় রোজা রাখি। আবার কোনো কোনো সময় রোজা ত্যাগ করি। গোশত খাই, চর্বিও খেয়ে থাকি। স্ত্রীদের কাছেও যাই। (শোনো!) যে আমার সুন্নত-তরিকা (পন্থা) ত্যাগ করে, সে আমার (উম্মতের) অন্তর্ভুক্ত নয়। রুহবানিয়াত—বৈরাগ্যবাদ মুসা (আ.)-এর উম্মতদের আসমানি দীনের পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়েছে।’ দীনের নামে প্রচলিত রুহবানিয়াত কর্মবিমুখ এবং বিভ্রান্ত করেছে ঈসায়ি ও ইহুদিদের। তাই আল্লাহর রসুল (সা.) তাঁর ১০ জন বিশিষ্ট সাহাবিকে নসিহত করেই ক্ষান্ত হলেন না। বৈরাগ্যবাদের এ মারাত্মক ব্যাধি সম্পর্কে সাহাবাদের সতর্ক করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করলেন। সাহাবায়ে কিরামদের মসজিদে সমবেত হওয়ার জন্য তিনি ঘোষণা দিলেন।

সর্বশেষ খবর