বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

হজরত ফাতেমা (রা.) -এর ফজিলত

মাওলানা মাহমূদুল হাসান

হজরত ফাতেমা (রা.)-এর ফজিলতের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে— রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অত্যন্ত সম্মান করতেন, ভালোবাসতেন এবং নিজের গোপন ভেদের কথাও তাকে অবহিত করতেন। হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক প্রিয়তমা, গভীর স্নেহের পাত্রী এবং তার মনের শান্তি। তার মনের চাহিদার প্রতি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক লক্ষ্য রাখতেন এবং তার প্রয়োজন মিটাতে এগিয়ে আসতেন।

তিরমিজির রেওয়ায়েতে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.)কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, ‘হজরত ফাতেমা এবং পুরুষদের মধ্যে তার স্বামী হজরত আলী। আমার জানা মতে, তিনি সর্বদা রোজা পালন করতেন এবং অধিক পরিমাণে নফল নামাজ পড়তেন।’ অনুরূপ হজরত বুরাইদা (রা.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ফাতেমা এবং তার সন্তানরা অত্যন্ত সত্যবাদী ছিলেন।

হজরত আনাস (রা.)-এর হাদিসে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মহিলাদের মধ্যে চারজন শ্রেষ্ঠ মহিলা হলেন— মরিয়ম বিন্তে ইমরান, খাদিজা বিন্তে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিন্তে মোহাম্মদ এবং ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।’ বুখারি এবং মুসলিম শরিফের হাদিসে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ফাতেমাকে বলেন, ‘হে ফাতেমা! তুমি সন্তুষ্ট থাক,  কেননা তুমি সব মুমিন নারীর নয় বরং সব নারীর সর্দার।’ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর হাদিসে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘খাদিজা এবং ফাতেমা জান্নাতি নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।’

এরূপ অসংখ্য হাদিসের মধ্যে হজরত ফাতেমা (রা.)-এর ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ফাতেমাকে না দেখলে অস্থির হয়ে পড়তেন, যে কারণে ঘন ঘন তার জিয়ারত করতেন, আর তার থেকে দূরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করতেন। তিনি প্রায় সময় হজরত ফাতেমার কাছে উপস্থিত হতেন এবং দীর্ঘ সময় তার কাছে বসে আলাপ-আলোচনা করতেন। তার ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। তার সন্তানদের এবং ঘরের ভিতর-বাইরের বিষয়াদির খোঁজখবর নিতেন। ভালো-মন্দ অবস্থার সন্ধান নিতেন এবং সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তিরমিজি, ইবনে হিব্বান এবং হাকিমের রেওয়ায়েতে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে সাহাবি হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন যে, আমি রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়িতে সাক্ষাতের উদ্দেশে হাজির হয়ে শুনতে পেলাম যে, তিনি হজরত ফাতেমার কাছে আছেন, আমি সেখানে হাজির হয়ে দরজায় আওয়াজ দিলে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় বের হয়ে আসলেন যে, চাদরের নিচে বুকের সঙ্গে যেন কোনো বস্তু রাখা আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! চাদরের নিচে কী? আমার প্রশ্ন শুনে রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি হাসলেন এবং বললেন, ‘আমার দুই নাতি— হাসান, হুসাইন’। অতঃপর তিনি  দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! এদের দুজনকে এবং যারা এদের মহব্বত করে আপনি তাদের মহব্বত করবেন।

লেখক : গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর