সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুলিশের ভাবমূর্তি : কলঙ্ক ঘুচবে কবে?

তুষার কণা খোন্দকার

পুলিশের ভাবমূর্তি : কলঙ্ক ঘুচবে কবে?

হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন চীনে এক ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বিশেষ করে সম্রাট তাইজং তার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানোর জন্য যে সব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার মধ্যে পুলিশি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আভাস পাওয়া যায়। চীনের সম্রাটের কাছ থেকে নিয়োগ পেয়ে কয়েক ডজন প্রিফেক্ট সে সময় চীন সাম্রাজ্যের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার দেখভাল করত। প্রাচীন চীনের পুলিশি ব্যবস্থা চীনের সীমানা ছাড়িয়ে জাপান এবং কোরিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপর প্রাচীন চীনের পুলিশি ব্যবস্থার ভিন্ন আদলের সন্ধান মেলে প্রাচীন গ্রিসে। তবে প্রাচীনকালের পুলিশি ব্যবস্থা কখনোই তেমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়নি কারণ সমাজব্যবস্থা তখনো গায়ের জোরের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময়ের রাজ-রাজরারা সিভিল পুলিশের ওপর ভরসা না রেখে রাজ্য জয় থেকে শুরু করে ছিঁচকে চোরের শাস্তির বিধান সব কাজই সেনা সদস্যদের দিয়ে সারতেন। সত্যিকার অর্থে সুসংগঠিত পুলিশি ব্যবস্থার জন্ম প্যারিসে ১৬৬৭ সালে রাজা লুইসের হাতে। রাজা লুইস প্যারিসের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রেনিকে পুলিশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে নিয়োগ দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পুলিশি ব্যবস্থার সূচনা করেন। ফ্রান্সে পুলিশি ব্যবস্থা ভালো জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপ্তি প্যারিস ছাড়িয়ে সারা ফ্রান্সে ছড়িয়ে পড়ে। ইউনিফরম পরে পুলিশের দায়িত্ব পালনের রীতিও ফ্রান্সেই প্রথম শুরু হয়। ফ্রান্সের লাগোয়া দেশ ব্রিটেন কিন্তু পুলিশ সৃষ্টির ব্যাপারে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ছিল। বেনিয়া জাত ব্রিটিশ সব কাজের মধ্যে টাকার অঙ্কে লাভ খোঁজে। ব্রিটেনের লোকজন ভাবল, আমাদের মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য গাঁটের টাকা খরচ করে কিছু লোক পুষবো! এ বড় তাজ্জব ধারণা! এই উদ্ভট কাজে বাজে খরচের মানে কি? তা ছাড়া ব্রিটেনের চিরশত্রু ফ্রান্স পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করেছে। ব্রিটেন যদি ফ্রান্সের দেখাদেখি পুলিশ নিয়োগ দেয় সেটা ব্রিটেনের জাত্যাভিমানের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। এমন অবস্থায় স্কটিশ কাপড় ব্যবসায়ী প্যাট্রিক কলকুহান ব্রিটেনবাসীর মনস্তত্ত্ব বুঝতে পেরে সমস্যার একটা দারুণ সমাধান আবিষ্কার করলেন। প্যাট্রিক তার জীবনের একটা অংশ আমেরিকায় কাটিয়ে এসেছিলেন। বেশ কয়েক বছর স্বজাতি থেকে দূরে আরেক মহাদেশে আরেক জাতের মানুষের সঙ্গে বসবাস করে তার মাথা খুলে গিয়েছিল। তিনি দেখলেন, টেমস নদীতে ভিড়ে থাকা বাণিজ্য জাহাজে বারো মাস ছিঁচকে চোরের উপদ্রব লেগেই আছে। ছিঁচকে চোরের দল ঘাটে ভিড়ে থাকা জাহাজ থেকে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ পাউন্ডের মালামাল চুরি করে কোম্পানিগুলোকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ঘাটে ভেড়া জাহাজ থেকে ছিঁচকে চোর তাড়ানোর কাজে প্রথমে তিনি টেমস রিভার পুলিশ সৃষ্টি করলেন। চোর তাড়ানোর কাজে পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা দেখিয়ে প্যাট্রিক ব্রিটেনের ব্যবসায়ী সমাজকে দেখালেন, পয়সা খরচ করে পুলিশ পোষা দান খয়রাতের বিষয় নয়, এটা আসলে ব্যবসার অংশ। পয়সা খরচ করে পুলিশ পুষলে ব্যবসায় লাভের অঙ্ক বেড়ে যায়। সে সময় থেকে ইংল্যান্ডে পুলিশি ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে শুরু করে। এরপর, প্যাট্রিক  কলকুহান তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একখানা বই লিখেছিলেন ঞযব ঈড়সসবত্পব ধহফ চড়ষরপরহম ড়ভ ঃযব জরাবত্ ঞযধসবং.

আসলে আজ আমি পুলিশের ইতিহাস লিখতে বসিনি। বাংলাদেশের পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে লিখতে বসে পুলিশের জন্মতত্ত্ব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করাও আমার মতলব নয়। আমি আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কলকুহানের থিওরির প্রয়োগ জনগণকে দেখাতে চাচ্ছি। কলকুহান বলেছেন, পুলিশের নজরদারি থাকলে ব্যবসায়ীরা নির্ভাবনায় ব্যবসা করতে পারে। অর্থাত্ পুলিশের সজাগ নজরদারির কাজ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর চমত্কার ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তার ফলে ব্যবসায়ীরাও দুই পয়সা লাভের মুখ দেখে। পুলিশ পোষার জন্য জনগণের অর্থ বিনিয়োগ এবং সেই বিনিয়োগের বিপরীতে যে লাভের অঙ্ক সেই হিসাব ব্রিটেনের জন্য হয়তো সঠিক ছিল এবং এখনো কার্যকর। কিন্তু কলকুহানের মতামত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একবার মিলিয়ে দেখুন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারির সুফল স্বপ্নে মিললে মিলতে পারে, কিন্তু বাস্তবে এমন কাজের কুফল ফলতে দেখে আমরা অভ্যস্ত। আমার মনে হয়, কলকুহান অনেক আগে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের হালহকিকত তিনি জানার সুযোগ পাননি। বাংলাদেশের বাস্তবতা দেখার দুর্ভাগ্য হলে তিনি সুর পাল্টে বলতেন, পুলিশের নজরদারি বাড়ালে ব্যবসায়ীর বাণিজ্য লাটে উঠে পুলিশের বাণিজ্যে তেজি ভাব দেখা দেয়। পথে পথে চাঁদাবাজির রমরমা বাণিজ্যে পুলিশের পকেট ভারী হয়ে ওঠে। পুলিশের চাঁদাবাজির অত্যাচারে পণ্যের দাম বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। পণ্যের চালান এক জেলা থেকে আরেক জেলায় পরিবহনের পথে পুলিশের চাঁদাবাজির খবর এখন প্রকাশ্য সত্য। পণ্যের চালান নিয়ে চলাচলকারী লরি ড্রাইভাররা পুলিশের চাঁদাবাজির খবর আজকাল গণমাধ্যমের সামনে খোলাখুলি বলতে দ্বিধা করেন না। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে পুলিশের চাঁদাবাজির খবর ফলাও করে প্রচারও হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল কি সে সব খবর নিজের কানে শোনেন না?

পণ্য পরিবহনের গাড়ি থেকে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ উঠায় আশির দশকের একটি ঘটনা মনে এলো। আমি তখন সবে দৈনিক সংবাদে কাজে যোগ দিয়েছি। বংশালের ছোট্ট অফিসে বসার জায়গার খুব অভাব। সংবাদ সম্পাদক বজলু ভাইয়ের রুমের পাশে ছোট একটা রুমে সন্তোষদার পাশের টেবিলে বসি। সে সময় পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হলো, পুলিশের এক সার্জেন্ট পণ্যবাহী ট্রাকের ড্রাইভারের পাশের জানালা দিয়ে শরীরের অর্ধেক ঢুকিয়ে দিয়ে চাঁদাবাজির কাজে ব্যস্ত। ছবিটির ক্যাপশন কী ছিল সেটা আজ আর মনে নেই। তবে পরের দিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতিক্রিয়া আমার আজও মনে আছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের একজনকে সাংবাদিকরা ছবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন ‘ট্রাক ড্রাইভারের জানালা গলে উপুড় হয়ে থাকা পুলিশ সদস্যের যে ছবি পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে সেটি জঘন্য অশ্লীল একটি ছবি’। পুলিশের উঁচু মহলের মুখে এমন উদ্ভট কথা শুনে আমি তখন ‘বিস্ময়ে বাকবন্ধ’। কোনো মতে ঢোক গিলে প্রবীণ সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্তকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘দাদা, এটা কেমন কথা? পুলিশ অফিসারের কথা শুনে মনে হচ্ছে চাঁদাবাজির কাজে ব্যস্ত পুলিশ সদস্যের কোনো দোষ নেই। লোকটি ট্রাকের ভিতর মাথা ঢুকিয়ে জনগণকে তার শরীরের কোন অংশ দেখাচ্ছেন সেটা বড় কথা নয়। কোন মতলবে পুলিশ ট্রাক ড্রাইভারের জানালা দিয়ে মাথা গলিয়েছেন সেই কারণ জেনে তার প্রতিকার না করে সিনিয়র পুলিশ অফিসাররা ছবির শ্লীলতা-অশ্লীলতা নিয়ে উদ্ভট মন্তব্য করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কেন?’

জবাবে সন্তোষদা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, পুলিশ অফিসারের শব্দ চয়নের দিকে নজর দাও। তাহলেই তোমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে। পুলিশের চাঁদাবাজির ছবিকে পুলিশ অফিসার অশ্লীল বলেছেন। উনি বলেননি, ছবিটি তার জন্য ভারি লজ্জার। অর্থাত্ ছবিটির মধ্যে তিনি পুলিশ বাহিনীর জন্য লজ্জার উপকরণ খুঁজে পাননি। কারণ, তিনি নিশ্চয়ই নিয়মিত ভাগ পান তাই তিনি লজ্জা পান না।

পুলিশের লোক ৫০ টাকা চাঁদা না পেয়ে ঢাকা শহরের এক চা বিক্রেতাকে আগুনে ঝলসে মেরেছে। এই ঘটনার সূত্র ধরে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যথারীতি তার অতি আবেগি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের উদ্ধত আচরণ দিনকে দিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অভিভাবক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষ পুড়িয়ে মারার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছেন বলে মনে হলো না। ৫০ টাকা চাঁদার দাবিতে পুলিশ একজন চা বিক্রেতাকে পুড়িয়ে মেরেছে এমন ঘটনা সাংবাদিকদের কাছে শুনে তিনি বললেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। এ কথা বলার পরে পরম পরিতৃপ্তি নিয়ে তিনি বললেন, ঘটনা যাই হোক, আর লোকজন যে যাই বলুক, দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটলেও পুলিশের ভাবমূর্তি দিন দিন বে-এ-শ উজ্জ্বল হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কথা স্রেফ উনার মুখের কথা। বাস্তবে তার কথার কোনো মূল্য নেই এই সত্য আমরা এতদিনে জেনে গেছি।  কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের মানুষের জানমালের হেফাজতকারী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে। পুলিশের ভাবমূর্তির বর্তমান উজ্জ্বলতায় তার যদি চোখ ধাঁধিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দেশবাসী সত্যি বিপদে আছে। যে দেশে পুলিশের দৌরাত্ম্যে দেশবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর একটু দায়িত্বশীল উক্তি করলে আমরা আশার আলো না দেখলেও অন্তত আলেয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে অবুঝ মনকে সান্ত্বনা দিতে পারি।

পুলিশের হরেক রকম অপরাধ সম্পর্কে পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন এক বা একাধিক খবর ছাপা না হলে বলতে হবে দিনটি বাঙালির জীবনে একটি ব্যতিক্রমী দিন। পুলিশ সম্পর্কে যেসব খবর ছাপা হচ্ছে সেগুলো পুলিশ কীভাবে নিচ্ছে জানি না, তবে পত্রিকায় ছাপা হওয়া খবর পড়ে দেশের মানুষ স্বস্তিতে নেই। পুলিশের বড় কর্তারা বলছেন, পুলিশ অবিরল অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু সেগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রচার মাধ্যমে আসছে না। পুলিশের কর্তাব্যক্তি বলেছেন, পুলিশ সাফল্যের সঙ্গে অনেক অস্ত্র উদ্ধার করেছে, সন্ত্রাসীদের অনেক আস্তানায় হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে এবং সন্ত্রাসীদের জমিয়ে তোলা অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করেছে। সেসব কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে, বিনয়ের সঙ্গে পুলিশকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, তারা যে কাজ করেছেন সেটিই পুলিশের কাজ। জনগণ তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকা খরচ করে জনজীবন নিরাপদ রাখার জন্য বেতন-ভাতার জোগান দিয়ে দেশে একপাল আমলা-পুলিশ পুষছে। এত টাকা খরচ করে পুলিশ বাহিনী পোষার পরেও ঢাকা শহরের মধ্যে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসজ্জিত আস্তানা গড়ে ওঠে কি করে সেটি আমাদের প্রশ্ন। আমরা ভাবি, পুলিশের কড়া পাহারার মধ্যে কোথাও নিশ্চয়ই এমন কোনো ফাঁক রয়ে যাচ্ছে যার সুবাদে ঢাকা শহরে এমন অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে উঠার সুযোগ পাচ্ছে। পুলিশ যখন জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেড ফাটিয়ে বাহবা কুড়াতে ব্যস্ত আমরা তখন আতঙ্কে কুঁকড়ে যাই। ভাবি, এক আস্তানায়ই এত গ্রেনেড, আরও আস্তানা আরও অনেক গ্রেনেড আমাদের আশপাশে রয়ে যায়নি তো?

ব্যবসায়ীরা সরকারের কোষাগারে অর্থের মূল জোগানদাতা। ব্যবসায়ীরা খেয়ে না খেয়ে সরকারি কোষাগারে যথেষ্ট অর্থের জোগান দিয়েছে এ কথা দেশের কোনো মানুষ কখনই অস্বীকার করেনি। কিন্তু তারপরও গত কয়েক দশক ধরে দেশের ভিতর ব্যবসায়ীরা নিজেদের অরক্ষিত ভাবছে। রাস্তার পাশের চা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় পুঁজির  ব্যবসায়ী প্রত্যেকের মধ্যে অনিশ্চয়তার ছায়া। পত্র-পত্রিকার খবর পড়ে মনে হয় দেশের ব্যবসায়ীরা সবাই চাঁদাবাজির জালে চিরকালের জন্য আটকে গেছে। রাস্তার পাশের চা ব্যবসায়ী পুলিশকে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে পারেনি বলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে যে মারা হয়েছে এটিও নাকি শেষ কথা নয়। দুর্ভাগা চা ব্যবসায়ীর পরিবার বলছে, পুড়ে মরার আগে ওই চা ব্যবসায়ী তার প্রতিবেশী মাদক ব্যবসায়ী পারুলির নামে নালিশ জানানোর দুঃসাহস দেখিয়েছিল। পুলিশ বলছে, চা বিক্রেতা নিজেও মাদক ব্যবসায়ী ছিল। বেশ তো, আমি ধরে নিলাম, পারুলি নয়, চা বিক্রেতা নিজেই একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার অর্থ কি এই যে, পুলিশ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে আগুনে পুড়িয়ে জানে মেরে ফেলার অধিকার রাখে? চা ব্যবসায়ী মাদক ব্যবসায়ী ছিল এই মর্মে পুলিশের কাছে যদি যথেষ্ট তথ্য থাকে তাহলে পুলিশের দায়িত্ব ছিল রাস্তার পাশের চা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত প্রমাণসহ তাকে আদালতে হাজির করা। কোনো ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী হলে তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার অধিকার পুলিশের নেই পুলিশকে এই সত্য জানানোর দায়িত্ব কার সেটাও আমরা ভালো বুঝতে পারছি না।

গত তিন মাসে পত্রিকার পাতা খুললে প্রতিদিন পুলিশের অপকর্মের একাধিক খবর পাওয়া গেছে। এমন অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন দেশে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। মন্ত্রীর মুখে পুলিশের ভাবমূর্তির গল্প শুনে দেশে প্রচলিত ছোট্ট একটি গল্প মনে পড়ল। এক বাসের ড্রাইভার বাস ছাড়ার আগে তার কিশোর হেল্পারকে ডাক দিয়ে বলছে, এই পিচ্চি ভালো করে দেখ দেখি, বাসের ছাদে কেউ আছে নাকি? জবাবে কিশোর হেল্পার বলছে, আছে ওস্তাদ, দুজন মানুষ আর একজন পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই গল্পটি শুনেছেন।

তিনি ভালো করেই জানেন, এদেশের একটি কিশোর ছেলেও পুলিশকে মানুষ বলে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। কিশোর ছেলেটির গল্পই জনমনে পুলিশের ভাবমূর্তি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের প্রচলিত নেতিবাচক ভাবমূর্তি ভেঙে নতুন আদলে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়তে পেরেছেন বলে দাবি করছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের ভাবমূর্তির বিষয়টা আর একটু ব্যাখ্যা করে বললে আমরা কিশোর ছেলেটির মতামত অগ্রাহ্য করে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে একমত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতাম।

     লেখক : কথাসাহিত্যিক।

সর্বশেষ খবর