সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মায়ের ভাষায় ধর্ম পাঠ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মায়ের ভাষায় ধর্ম পাঠ

মানুষ তার মায়ের ভাষায় কথা বলে। মায়ের ভাষায় কোনো গ্রন্থ পাঠ করে সে যতটা উপকৃত হয় অন্য ভাষায় তা হয় না। আজ সময় এসেছে মায়ের ভাষায় সহজ করে কোরআন তর্জমা করার। নিপুণ কারিগর আল্লাহতায়ালার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি যেন তারই একাত্মবাদের সাক্ষী। মহান স্রষ্টার পরিচয় লাভের জন্য কোরআন-হাদিসের বড় বড় মুফতি-মুফাসসির-মুহাদ্দিস হওয়ার প্রয়োজন নেই। মানবদেহ নামক মাটির খাঁচায় আল্লাহ প্রদত্ত রূহ পাখির রহস্য বুঝতে পারলেই প্রভুকে চেনা যাবে। আধ্যাত্মিক সাধক লালন ফকির বলেন, ‘আপনারে আপনি চেনা যদি যায়, তবে তারে চিনতে পারি সেই পরিচয়।’ প্রজ্ঞাবানরা বলেন, ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু। অর্থাত্ যে আপনাকে চিনল সে তার প্রভুকে চিনল।’ কথাটি হাদিস না হলেও চরম বাস্তব এবং কোরআন সম্মত। নিজেকে চেনার প্রথম সবক পাই মায়ের কাছে মায়ের ভাষায়। আব্বা-আম্মা আল্লাহ-ইল্লাল্লাহ এভাবেই কথার ফুল ফোটে শিশু মনে। মায়ের কাছে শেখা ভাষায় জগত্ চিনি। প্রভুকে চিনি। বই পড়ি। বই লিখি। লিখি কোরআনের কথা, হাদিসের বাণী। বিষণ্ন মনে ব্যথিত বদনে প্রভু সমীপে সেজদায় লুটিয়ে পড়ি। মনের যত আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ প্রকাশ করি মাবুদের কাছে মায়ের ভাষায়। হে প্রভু! তোমার কাছে ঋণী বাংলা ভাষার জন্য। তোমার কাছে ঋণী এ দেশকে সালাম-বরকতদের মতো পুণ্যবান সন্তান দানের জন্য। যারা বুকের তাজা খুন ঢেলে মাতৃভাষার প্রতি প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ভাষার মাসের এই দিনে তাদের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহতায়ালা মায়ের ভাষার স্বীকৃতি দিয়ে বলেন— ‘আমি নিজের বাণী পৌঁছানোর জন্য যখনই কোনো রসুল পাঠিয়েছি, সে তার সম্প্রদায়ের ভাষায় বাণী পৌঁছিয়েছে। যাতে সে তাদের খুব ভালো করে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারে।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪) আমাদের নবী আরবিভাষী ছিলেন। তাই আল্লাহতায়ালা আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছেন। আমরা বাংলাভাষী। আমাদের উচিত বাংলা ভাষায়ও কোরআন চর্চা ও গবেষণা করা। আজকের দিনে এ কথাটি সবাই সাদরে গ্রহণ করলেও শত বছর আগে এটি ছিল ঘোর বিরোধী কথা। বাংলা তথা হিন্দুদের ভাষায় কোরআন চর্চা! কোরআনের এত বড় অপমান হতে দেব না— এভাবেই চেঁচিয়ে উঠেছিল বিরূপ মন্তব্যকারীরা। বিরূপ মন্তব্যকারীদের তোয়াক্কা না করে কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদ করে ফেলেন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন। গিরীশ চন্দ্রের অনুবাদ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন অনেকে। তবে বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চায় পাঞ্জেরির ভূমিকা পালনের জন্য জনম জনম মুমিন আত্মার কৃতজ্ঞতা অঝর ধারায় বইবে গিরীশ ভাইয়ের আত্মায়। শত বছর পরও আজ ভাষা নিয়ে আমাদের সেই ধারণা বদলায়নি। হে ধর্মদিল বান্দা, আসুন আমরা উদার হই; চিন্তাকে প্রসারিত করি। তবেই আমরা কামিয়াব হব।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর