শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুমিনের সাফল্যের জন্য ধৈর্য

মুফতি মুহা. আবুল বাশার নুমানী

অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে মন মেজাজ ঠিক রেখে যুক্তিসঙ্গত আচরণ করাকে বলে ধৈর্য। ধৈর্যশীল ব্যক্তি ইমানের ওপর অটল থাকতে পারে; বেশি বেশি নেক কাজ করতে পারে; বদ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে এবং বিপদের সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। তাই তার অন্তর যাবতীয় হতাশা-নিরাশা ও চঞ্চলতা থেকে মুক্ত থাকে এবং সে জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে। কোরআন পাকে সত্তরেরও অধিক স্থানে এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু হাদিসে সবর ও এর ফায়েদার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন— মহান আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যধারীদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারাহ-১৫৩)

উক্ত আয়াতে আল্লাহতায়ালা সালাতের আগে ধৈর্যের কথা বলেছেন এবং সেই সঙ্গে জানিয়েছেন সালাত দ্বারা যেমন সাহায্য লাভ করা যায়, তেমনি ধৈর্যশীলতা দ্বারা আল্লাহর সাহায্য লাভ করা যায়। সূরাতুল আসরে যে চারটি সাফল্যকর কাজের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে ধৈর্য অন্যতম। ধৈর্যের ফায়দা সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত পুরস্কার দেওয়া হবে। (সূরা যুমার-১০)

অবশ্য এ জন্য আল্লাহতায়ালা নানাভাবে পরীক্ষা করে শুধু ধৈর্যশীলদের পুরস্কৃত করবেন বলে জানিয়েছেন সূরা বাকারার ১৫৫-১৫৬নং আয়াতে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন তার কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তখন তিনি দুনিয়ায় তার প্রতি বালা-মুসিবত দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে তিনি যখন তার বান্দার অকল্যাণ চান, তখন তাকে গুনাহের মধ্যে ছেড়ে দেন। অবশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পাকড়াও করবেন। (তিরমিজি) রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান বান্দা যদি বিপদে পড়ে বা কোনো রোগে আক্রান্ত হয় বা কোনো চিন্তাভাবনায় পড়ে, কোনো শোক-দুঃখে পতিত হয় অথবা কোনো কষ্ট ও ক্লেশে পতিত হয়, এমনকি যদি তার শরীরে একটি কাঁটাও বিদ্ধ হয়, তবে এর পরিবর্তে আল্লাহপাক তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) রসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন, ইমানদার নর-নারীর জানমাল ও সন্তানাদির ওপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ সমীপে উপস্থিত হয় এমন অবস্থায় যে, তার আর কোনো গুনাহই থাকে না। (তিরমিজি)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলেন। আমি তাকে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ আপনি তো প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছেন! তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের মতো দুজনের সমান জ্বরে কাঁপছি। আমি বললাম, এটি কি এ জন্য যে, এতে আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ, ঠিক তাই। মুসলিম ব্যক্তি কাঁটা কিংবা অন্য কোনো বস্তু দ্বারা কষ্ট পেলে আল্লাহ অবশ্যই সে কারণে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তার ছোট ছোট গুনাহগুলো গাছের শুকনো পাতার মতো ঝরে পড়ে যায়। (বুখারি ও মুসলিম)

এ জন্য কোনো সমস্যায় পড়লেই ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না, বরং আল্লাহতায়ালার সাহায্য কামনা করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায় আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে ব্যক্তি কারও মুখাপেক্ষী হতে না চায়, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে তোলেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করে।  আর ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোনো জিনিস কাউকে দেওয়া হয়নি।  (বুখারি ও মুসলিম)।

লেখক : খতিব, কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর