রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভুলের খেসারত আর কত দেবে বিএনপি

কাজী সিরাজ

ভুলের খেসারত আর কত দেবে বিএনপি

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল কাছাকাছি সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির কাউন্সিলের তারিখ ১৯ মার্চ নির্ধারিত থাকলেও শাসক লীগের কাউন্সিল ঘোষিত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে যে, নীতিনির্ধারকরা তারিখ পেছানোর কথা ভাবছেন। দুই দলই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি। রাজনৈতিক মহলে বেশি আলোচনা হচ্ছে বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে।  সাংগঠনিক সংকট কিন্তু দুই দলেই বিদ্যমান। তবে দুই দলের সংকটের চিত্র ভিন্ন। দুটি দলই ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনমুখী পেটি বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দল। এ ধরনের দল গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন, আইনের শাসন তথা সুশাসন কায়েমের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আদর্শবাদী-নীতিবান ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে এমন দলে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সঙ্গে দেশপ্রেমিক জাতীয় বুর্জোয়াদেরও সমাবেশ ঘটে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুই প্রধান দলের ধনীক-বণিক গোষ্ঠীর যেসব ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের ব্যবসা ও পুঁজি গঠনের সূত্র সততা ও পরিচ্ছন্নতানির্ভর নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, তাই জাতীয় রাজনীতি লুটেরা সংস্কৃতিনির্ভর হওয়ার জন্য দায়ী করা হয় দুই দলের শান-শওকতের সঙ্গে জোরালো অবস্থান নিয়ে থাকা এসব ধনীক-বণিককে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিছু দিন আগে বলেছেন, জাতীয় সংসদের ৬৬ ভাগ সদস্যই অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী শ্রেণির লোক। একজন প্রবীণ ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ হিসেবে এটা তার হতাশার কথা। মহামান্য প্রধান বিচারপতিও প্রায় একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। দুই দলের যে-ই রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক, লুটেরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুসরণ ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রক্ষমতার প্রয়োগের সুবিধায় তা অপপ্রয়োগের মাধ্যমে চলে নানা বিতর্কিত পন্থায় সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতা। অসুস্থ এমন প্রতিযোগিতায় দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে খান খান হয়ে যায়, রাজনীতি, আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হয়। উপর থেকে নিচে সর্বত্র বিরাজ করে একই অবস্থা। যার যার মতো করে চলে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ার দুর্দমনীয় অভিযান। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তারা যেমন এ কাজটি করেছে, বর্তমানে শাসক লীগের লোকজনও একই কাজে বেপরোয়া। ফলে দলের বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি তথা হালুয়া-রুটির ভাগাভাগি নিয়ে চলছে নিজেদের মধ্যে কলহ, এমনকি খুনোখুনি। লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর তাদের দলের উঁচু-নিচু পর্যায়ের যত লোক খুন হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলের লোকের হাতেই খুন হয়েছে দলের লোক। যার জন্য অনেক প্রভাবশালী নেতা-কর্মী হত্যার বিচারও নানা কায়দায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে নিচের স্তরে সংগঠন অধিকতর শক্তিশালী করার নতুন যোগ্য নেতৃত্ব নির্মাণ করার ঝুঁকি নিচ্ছে না শাসক লীগ। তাদের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত স্রেফ হালুয়া-রুটির ভাগ-বাটোয়ারা এবং আর্থিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ, থানা-জেলার নেতৃত্ব দখলে রাখার অথবা দখলে নেওয়ার জন্য। বিএনপি যেহেতু এখন ক্ষমতায় নেই, তাদের সংকটের চরিত্রটা পুরোপুরি তেমন নয়। তবে বিভিন্ন বাস-ট্রাক টার্মিনাল, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বড় অফিসে যেখানে শত শত কোটি টাকার কাজ হয় সেখানে শাসক দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে ৭৫%-২৫% অথবা ৮০%-২০% ভাগাভাগির একটা অলিখিত সমঝোতার কথা বেশ জোরেশোরেই শোনা যায়। তবে বিএনপির মূল সমস্যা ভিন্ন।

বলা হয়ে থাকে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপির আদশ্যচুতি ঘটেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভুল, ভীরুতা, দুর্বলতাকে ঘুচিয়ে দিয়ে যে বীরের কণ্ঠে মানুষ শুনেছিল ‘আমি মেজর জিয়া বলছি...’ সেই নেতার দল এখন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করছে বলে জনতার আদালতে অভিযুক্ত। বিএনপিকে এখন ‘রাজাকারের দল’ বলতেও সাহস করে অনেকে। পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদেরও তামাশা করে বলে, ‘ভাই রাজাকার হয়ে গেলেন? এমন অপবাদ সইতে না পেরে অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, কেউবা দলই ছেড়েছেন। পঁচাত্তর সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, চারটি দৈনিক পত্রিকা সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ হরণ করে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তি দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃ প্রবর্তন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যে মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি গণতন্ত্রের কখনই মিত্র নয় বলে ইতিহাসের রায় আছে, সেই শক্তির ওপর রাজনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে নিজ দলের রাজনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন দলটির বর্তমান কর্ণধাররা। আদর্শচ্যুত বিএনপি তাই বিপথগামী হয়েছে। স্রেফ ক্ষমতার লোভে স্খলিত হয়েছে দলটি। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, প্রগতিশীল গণতন্ত্রী ক্যারিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের সাইডলাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য, ১৮ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৩৮ জন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা (এরাও ভাইস চেয়ারম্যান সমপর্যায় পদের), চার শতাধিক ব্যক্তির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আছে দলে, কিন্তু গত সাত বছরে (এর মধ্যে দলের কোনো কাউন্সিল হয়নি) এসব কমিটির কয়টি সভা হয়েছে? তাহলে এর মধ্যে অনেক বড় বড় যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দলটিকে ডুবিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সেসব সিদ্ধান্ত হলো কী করে? বলা হয়, দলটি এখন একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়েছে। এটি এখন অনেকটাই ব্যক্তি মালিকানাধীন পারিবারিক সম্পত্তি। পরিচালনা পদ্ধতি করপোরেট হাউসের মতো। এখানে নেতা তৈরি হয় না, ‘নেতা’ বানিয়ে দেওয়া হয় সুপার ইম্পোজিশনের মাধ্যমে। চেয়ারপারসনের নিয়োগপত্রের মাধ্যমে এক একজন নিযুক্ত হন ‘স্টাফ অফিসারের’ মতো। মালিকের সন্তুটি অনুযায়ী কাজ না করলে ‘পত্রপাঠ বিদায়’। সিদ্ধান্ত নেন মাতা-পুত্র দুজন। অন্যরা হাত তুলে সমর্থন দেন। হাত না তুলে উপায় নেই, চাকরি থাকবে না হাত না তুললে। জাতীয় কাউন্সিল নামে ১৯ মার্চ কয়েক ঘণ্টার জন্য যে ‘মেলা’ বসবে তা লোক দেখানো। কাজ যা হওয়ার মূল কাজ তো হয়েই গেছে। দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার গত ৬ মার্চই বেগম খালেদা জিয়াকে চেয়ারপারসন এবং তারেক রহমানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করে দিয়েছেন। কী দরকার ছিল এই তামাশার? পদ দুটি বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়ে বলে দিলেই হয়, এই দুই পদের দিকে অন্য কেউ তাকালে একদম ‘কবিরাহ গুনাহ’ হয়ে যাবে। অবশ্য এ প্রক্রিয়াটি শাসক লীগেও হুবহু এক। এর ফলে দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা নেই, থাকে না। কোনো দলেই না। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কারও নূ্যূনতম কোনো ভূমিকা রাখারই সুযোগ নেই। যারা ‘স্টাফ অফিসার’ নিযুক্ত হন ম্যাডাম আর ভাইয়ার মন জোগাতে জোগাতেই তাদের জীবন শেষ! বিএনপির বড় ভুলগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে স্থায়ী রাজনৈতিক জোট গঠন— যা অনেকটা আদর্শিক জোটে রূপান্তরিত হয়েছে। ২. জামায়াতের শলায় মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। সদ্যবিগত সরকারি দল হিসেবে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ না নিলে ওই নির্বাচন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলে দেশে-বিদেশে কোথাও স্বীকৃতি পেত না। ৩. ক্ষমতাসীন সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘সর্বদলীয় সরকারের’ অধীনে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা। স্মরণযোগ্য যে, বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছিল। অপরদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারি দল ছিল বদ্ধপরিকর। অবস্থার গুরুত্ব অনুভব করে সরকার তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করেছিল। তারা নির্বাচনকালে ‘সর্বদলীয় সরকারের’ প্রস্তাব দিয়েছিল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পছন্দের মন্ত্রণালয় বেছে নিতে বলেছিল বিএনপিকে। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জামায়াতের প্রভাবে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হয়েছিল বিএনপির জন্য। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরা কঠিনই হয়ে যেত, ৪. দলীয় শক্তি বিবেচনা না করে জামায়াতের ভরসায় নির্বাচন প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত। কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীকে বিপদগ্রস্ত করা ছাড়া কিছুই করতে পারেনি তারা, ৫. হেফাজতে ইসলামের কেয়ারঅবে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা, ৬. ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির নামে হঠকারী সিদ্ধান্ত এবং সংগঠনকে মহাবিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া। নির্বাচনে বিএনপির এজেন্ডা থাকে ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই করা। কিন্তু তাদের প্রধান জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর এজেন্ডা ভিন্ন। নেতাদের রক্ষা, দল রক্ষা, ক্যাডারদের রক্ষা, দলের বিপুল সম্পদ রক্ষাই যাদের কাছে মুখ্য। তারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছে বলে মনে হয়েছে। তাদের হয়তো ধারণা ছিল, একটি অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করে দিতে পারলে সরকারের পতন হবে, তৃতীয় কোনো পক্ষ ক্ষমতা নিয়ে নেবে। তারা বেঁচে যাবে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে সততার সার্টিফিকেট দিয়েছিল। ভেবেছিল সেই সার্টিফিকেট কাজে লাগবে। সহিংসতা, নাশকতায় তিন মাসের পেট্রলবোমায় ঝলসে গেল শতাধিক নিরীহ মানুষ, দেশের বিপুল সম্পদ বিনাশ হলো, বিপন্ন পরিবেশ আরও বিপন্ন করে দেওয়া হলো ব্যারিকেড দেওয়ার নামে হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন করে। সেই গাছ আবার বিক্রি করে খেয়েছে শাসক দলের লোকেরাই। এমন সহিংস রাজনীতিতে অনভ্যস্ত বিএনপি বেশি বিপদে পড়ে গেল। হাজার হাজার কর্মী জেলে গেল, মামলা, মোকদ্দমা হলো প্রায় লাখের মতো, আসামি করা হলো নামে-বেনামে সীমাহীন নেতাকর্মী-সংগঠককে। রাজনৈতিক নেতাদের মূল্য দিলে, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলে এমন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ত না বিএনপি। সংগঠনের ভিত্তি অনেক আগে থেকেই দুর্বল। কোথাও, কোনো জেলা বা থানায় সাংগঠনিক কর্মসূচি এবং কাউন্সিল বা সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়নি, কমিটি হয়েছে ঢাকা থেকে। যারা ঢাকার ‘পাইকারদের’ ম্যানেজ করতে পেরেছে তারাই হয়েছে জেলার, থানার ‘নেতা’। কেনা-বেচার এসব কমিটির পদ-পদবিধারীরা তিন মাস কোথায় ছিলেন কেউ জানে না। নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাই হয়েছে পরিস্থিতির শিকার। এসব কারণে সর্বত্র এখন দলের প্রকৃত নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ। ক্ষোভ পকেট কমিটির বিরুদ্ধে, ক্ষোভ পদ-পদবি বেচা-কেনার বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে দল পুনর্গঠনের কাজ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ প্রায় এক বছর আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে, দল পুনর্গঠন করে দলটি আবার ‘সরকার পতনের’ আন্দোলনে যাবে। সরকার কিছু দিন বেশ সহনশীল আচরণ করছে বলেই মনে হয়। বিএনপির বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান এখন স্থগিত দেখা যাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, কয়েকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, দুজন যুগ্ম-মহাসচিবসহ বেশ কজন সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এমন সুবিধাজনক অবস্থায় দল পুনর্গঠনের কাজ স্থগিত ঘোষণার কারণ দলের অভ্যন্তরীণ সংকট। এটা এখন স্পষ্ট। আলোচনা বিএনপিকে নিয়ে হচ্ছে এ কারণে যে, জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে দল পুনর্গঠনের একটা সুযোগ তাদের সামনে এসেছিল। কর্মী-সংগঠন-সমর্থকদের মধ্যে একটা জাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু সে পথে হাঁটল না বিএনপি। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দল পুনর্গঠনের চেয়ে দলে পারিবারিক মালিকানা দলিল নবায়ন ও ‘মিউটেশন’ সম্পন্ন করাই এ কাউন্সিলের উদ্দেশ্য। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এখনো বিএনপির যে বিপুল নীরব জনসমর্থন আছে, সঠিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব পেলে শুধু দলটি নয়, জাতিও উপকৃত হতো। সরকারি দলের একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকলেই একটি দেশে কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিএনপি কি সে সুযোগই দেবে। নিজে কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী মানসিকতা ধারণ ও লালন করে অপরকে গণতন্ত্রী হওয়ার সবক দেওয়া যায় না। কথায়ই তো আছে যে, ‘আপনি আচরি ধর্ম/পরেরে শেখাও।’

একটি ব্যক্তিগত কৈফিয়ৎ

গত ৫ মার্চ ‘শহীদ জিয়ার স্বপ্ন ও জাতীয়তাবাদী আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ’ আয়োজিত ‘শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক একটি সেমিনারে গিয়েছিলাম অতিথি বক্তা হিসেবে। সভাপতিত্ব করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছোটভাই আহমেদ কামাল। সেমিনারে আমি নির্ধারিত বিষয়ের ওপরই আলোচনা করেছি। সেমিনারে নতুন দল গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি এবং এ ব্যাপারে আগে-পরে কারও সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনাও হয়নি। শুনেছি সেমিনার শেষ হওয়ার পর আহমেদ কামাল নতুন দল গড়ার কথা বলেছেন।  আমি জেরবার হয়ে যাচ্ছি নানাজনের প্রশ্নবাণে। আমার সহজ ও স্পষ্ট জবাব, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।  তবে সবার প্রশ্নের ও কথার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে যে, শহীদ জিয়ার অনেক অনুসারী মনে মনে চান এমন একটা কিছু হোক।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর