রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

হজরত খানজাহান আলী

খুলনায় ইসলাম ধর্ম প্রচারে মুসলিম সাধক খানজাহান আলীর নাম চিরস্মরণীয়। খানজাহান আলীর পরিচয় সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, ‘খানজাহান’ তার উপাধি। তার আসল নাম কেশর খান এবং পিতার নাম ফরিদ খান। ইতিহাসে তিনি ‘খানজাহান আলী’ নামেই পরিচিত। জীবিকার অন্বেষণে তার পিতা-মাতা তুরস্ক থেকে দিল্লিতে আসেন এবং পিতা দিল্লির সুলতানের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন।

সে সময় দিল্লির রাজনৈতিক অস্থিরতা খানজাহান আলীর ভালো লাগেনি। তাই সম্ভবত তৈমুরের ভারত আক্রমণ ও দিল্লির ধ্বংসলীলার পর খানজাহান আলী দিল্লি হতে বাংলায় আসেন। দিল্লিতে তখন সৈয়দ বংশের রাজত্বকাল এবং বাংলার মসনদে তখন নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহ সমাসীন। খানজাহান আলী বাংলার সুলতানের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, বাংলার সুলতান নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহ খানজাহান আলীকে দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ তথা ইসলাম প্রচারের জন্য পাঠান।

গৌড় (লক্ষণাবতী) ছিল তখন বাংলার রাজধানী। খানজাহান আলী বেশ কয়েকজন অনুচর নিয়ে গৌড় থেকে প্রথম যশোর এবং পরে খুলনার বাগেরহাটে এসে পৌঁছান। বাগেরহাটের পথে খানজাহান আলীকে হিন্দু জমিদার ও রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। এসব যুদ্ধে তিনি জয়ী হন। সব যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া না গেলেও বাগেরহাটের নিকটবর্তী রণবিজয়পুর গ্রামের নাম হতে প্রমাণিত হয় যে, এখানে হিন্দু রাজার সঙ্গে খানজাহান আলীর যুদ্ধ হয়েছিল এবং যুদ্ধে জয়ী হয়ে তিনি এ স্থানের নাম রাখেন ‘রণবিজয়পুর’।

বাগেরহাটের কাছে খানজাহান আলী যেখানে প্রথম শিবির স্থাপন করেন তার নাম বারাকপুর। এখানে তার সেনাবাহিনী ছাউনি ফেলেছিল বলে এ স্থানের ওই নামকরণ হয়। বাগেরহাটের নাম তখন ‘বাগেরহাট’ ছিল না। ভৈরব নদের বাঁকে অবস্থিত ছিল ওই স্থানটি। সম্ভবত পার্শ্ববর্তী লোকেরা এখানে মিলিত হয়ে হাটের ন্যায় বেচাকেনা করত। তাই খানজাহান আলী ওই স্থানের নাম রাখেন ‘বাঁকেরহাট।’ পরবর্তীকালে এই বাঁকেরহাট ‘বাগেরহাট’ নামে পরিচিত হয়। বারাকপুর ও তার আশপাশের এলাকা হজরত খানজাহান আলীর ভালো লেগেছিল।  তাই তিনি তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল হিসেবে এ স্থানটি গড়ে তোলেন।    

 —শাকিল জাহান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর