সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ইহলৌকিক উন্নতিরও পক্ষে ইসলাম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইহলৌকিক উন্নতিরও পক্ষে ইসলাম

এক সময় মুসলমানদের দ্বারা বিশ্ব শাসিত হয়েছে। মুসলমানরা তখন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী ছিল এবং অঙ্ক, বিজ্ঞান,  জ্যোতির্বিদ্যা, প্রকৌশল এবং নির্মাণশৈলীতে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। মুসলিম দেশগুলো একজন খলিফার অধীনে একীভূত ছিল। মুসলমানরা পার্থিব উন্নতি ও পরকালীন কল্যাণ উভয়ের জন্য কোরআনের নির্দেশকে পালন করতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কিছুসংখ্যক তথাকথিত আলেমদের উদ্ভব হলো— যারা শুধু আখেরাতের কথাই প্রচার করল। (তারা ইহজগেক দারুণভাবে অবহেলা করলেন এবং মনে করলেন যে এ পৃথিবীটা তৈরি হয়েছে শুধু বিধর্মীদের জন্য যারা শুধু পৃথিবীতেই আনন্দ উপভোগ করে যাবে, পরকালে কিছুই পাবে না)। এ ধরনের প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা শুধু ধর্মীয় বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ে পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ হারালো। কালক্রমে (শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে) মুসলমানরা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান এবং অবশেষে তাদের শক্তিও হারালো। আজ তারা সম্পূর্ণ দুর্বল, পরনির্ভরশীল এবং অনেক সময় শক্তিধরদের কৃপাপ্রার্থী। পার্থিব উন্নতির জন্য ইসলাম প্রকৃতপক্ষে কোনো বাধা নয়, দক্ষ পরিচালনা ও উন্নয়ন, দক্ষতার সঙ্গে শিল্প ও ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক, তাদের প্রয়োজনে শক্তি সঞ্চয় করা, এ সমস্ত কোনো কাজের জন্যই ইসলাম অন্তরায় নয় আর জগৎ সংসারের মালিক তাঁর বান্দাকে উভয় জগতেই সফলকাম দেখতে চান তাই তো পবিত্র কোরআনের সূরা জুময়ার ১০ নং আয়াতে বলেন— অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। সূরা নাবার ১০-১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন— রাত্রিকে করেছি আবরণ এবং দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়। আল্লাহতায়ালা সূরা কাহাফের ২৩ নং আয়াতে বলেন, ‘আর মনে রাখবে কোনো জিনিস সম্পর্কে কখনো এ কথা বলবে না, আমি কাল এ কাজ করব। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন সৎ ও দক্ষ মুচি একজন অসৎ ও অদক্ষ সুলতান হতেও উত্তম।’ রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাঁর ওই বান্দাকে দেখতে অপছন্দ করেন, যে ইহকাল ও পরকালের কর্ম থেকে বিমুখ। বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, আমি কয়েক কিরাত মজুরিতে মক্কাবাসীদের বকরি চরাতাম, এই বিশ্ব মানবতাকে উন্নতির শিখরে আরোহণ করাতেই হজরত দাউদ (আ.) লৌহের কাজ করেছেন, আদম (আ.) কৃষিকাজ করেছেন, ইদ্রিস (আ.) দর্জির কাজ করেছেন, মুসা (আ.) ছাগল চরিয়েছেন। বিশ্বনবী (সা.) ভিক্ষুকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করার জন্য নিরলস কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে এই ওয়াদাবদ্ধ হবে যে, সে কোনো দিন ভিক্ষা করবে না তার জান্নাত লাভের দায়িত্ব আমি নিলাম।  এরপরও কী বলবেন ইসলাম উন্নতির পথে অন্তরায়?

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর