শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর মিরাজ

মুফতি আমজাদ হোসাইন

রসুল (সা.)-এর মিরাজ

সূরা বনি-ইসরাইলের ১নং আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন। পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দা মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য রাতে ভ্রমণ করিয়েছেন। মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত— যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।  আলোচ্য আয়াতে ইসরা ও মিরাজের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মিরাজের রজনীতে রসুল (সা.)-এর সমগ্র সফর যে শুধু আত্মিক ছিল না বরং মানুষের সফরের মতো দৈহিক ছিল, এ কথা পবিত্র কোরআনের ওই বক্তব্য ও অনেক মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। (মুতাওয়াতির হাদিস বলতে সংক্ষেপে আমরা বুঝি, যা রসুল (সা.)-এর পর থেকে আমাদের পর্যন্ত একাধিক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে সমানভাবে বর্ণিত হয়ে এসেছে) ওই আয়াতে বিশেষভাবে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. আল্লাহপাক আয়াতের শুরুতে ‘সুবহান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এই শব্দটি প্রত্যেক আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর বিষয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন আমাদের সামনে যদি কোনো আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর বিষয় ঘটে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে বলি ‘সুবহানাল্লাহ’। অনুরূপভাবে আল্লাহপাক এখানে ‘সুবহান’ শব্দ উল্লেখ করে তাঁর দুনিয়াবাসীকে বুঝিয়েছেন আমি রাতের কিছু অংশে আমার হাবিব মুহাম্মদ (সা.)-কে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করিয়েছি তা বড়ই আশ্চর্যজনক বিষয়। বোঝা গেল যে রসুল (সা.)-এর মিরাজ সশরীরে হয়েছে। আল্লামা কাযী আয়ায (রহ.) তার কিতাব ‘শেফাতে’ মিরাজের বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। কিছু কিছু মানুষের এক স্বভাব আছে, যদি কারও কোনো কিছু বুঝে না আসে তখন সে তা অস্বীকার করে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের বিশ্বায়ন রসুল (সা.)-এর মিরাজ সশরীরে হয়েছে, এর পক্ষে অনেক বড় দলিল। কারণ বর্তমান উন্নত বিশ্বে এমন এমন কতিপয় বস্তুর আবিষ্কার হয়েছে যা অতীতকালের লোকদের কাছে সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার হবে। তাদের কাছে বিস্ময়কর ব্যাপার হোক আর না হোক মানুষ কিন্তু তা আবিষ্কার করেই চলছে। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট মাখলুখ হয়ে যদি এমন এমন বস্তুর আবিষ্কার করতে পারে তবে কি যিনি স্রষ্টা তিনি কি তাঁর এক বান্দাকে মুহূর্তের মধ্যে ঊর্ধ্ব জগতে ভ্রমণ করাতে সক্ষম নন? অবশ্যই সক্ষম। তাফসিরে ইবনে কাছিরে হাফেজ আবু নায়িম ইস্পাহানীর হাওলায় উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত আবু সুফিয়ান (রা.) কাফের থাকাকালীন রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে ছিলেন। তার কাছে ইলিয়ার যিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের সর্বপ্রধান যাজক ও পণ্ডিত ছিলেন। তিনি সম্রাটের পেছনেই দাঁড়ানো ছিলেন। তিনি বললেন, আমি সে রাত্রি সম্পর্কে জানি। রোম সম্রাট তার দিকে ফিরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ সম্পর্কে কিরূপে জানেন? সে বলল, আমার অভ্যাস ছিল, বায়তুল মোকাদ্দাসের সব দরজা বন্ধ না করে আমি শয্যা গ্রহণ করতাম না। সে রাত্রিতে আমি আমার অভ্যাস আনুযায়ী সব দরজা বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু একটি দরজা আমার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব ছিল না। আমি আমার কর্মচারীদের ডেকে আনলাম তারা সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করল কিন্তু দরজাটি বন্ধ করা তাদের পক্ষেও সম্ভব হলো না। কোনোভাবেই দরজাটি তার স্বস্থান থেকে নড়ছিল না। মনে হচ্ছে আমরা যেন কোনো বড় পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লাগাচ্ছি। অপারগ হয়ে আমরা মিস্ত্রি আহ্বান করেছি। তারা সাধ্যাতীত চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলে দিল যে, আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সকালে দেখা যাবে কী করা যায়। প্রধান ধর্মযাজক বলেন, আমরা দরজা খোলা রেখেই রাতযাপন করলাম। সকালে দরজার সামনে গিয়ে দেখি একটি পাথর দরজার সামনে পড়ে আছে। মাঝে ছিদ্র রয়েছে। মনে হয় এখানে কোনো কিছু বাঁধা হয়েছে। আমি বুঝে নিলাম যে, এখানেই আখেরি নবীর আগমন ঘটেছে। (তাফসিরে ইবনে কাছির তৃতীয় খণ্ড ২৪পৃ.) রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াস সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বিশ্বাস করলেন এবং ঘোষণা করে দিলেন বর্তমানে আখেরি নবীর পক্ষেই এমনটি সম্ভব। অন্য কারও পক্ষে তা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।  রোমের সম্রাট একজন অমুসলিম হয়েও যদি রসুল (সা.) মিরাজ সশরীরে হয়েছে শোনামাত্র বিশ্বাস করতে পারেন। তাহলে আমরা মুসলিম হয়ে কেন বিশ্বাস করতে পারব না? রসুল (সা.)-এর মিরাজ সশরীরে হয়েছে এই একীন ও বিশ্বাস করা একজন মুসলমানের ইমানের দাবি। আল্লাহপাক আমাদের সঠিকভাবে ইসলামের ওপর চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর