রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইতিহাস

যুদ্ধবাজ জেনেসারী

রোডস দ্বীপ জয়ের দুই বছরের মধ্যে সুলতান সোলায়মান অধিকৃত অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। জেনিসারী বাহিনী দীর্ঘদিন নিস্পৃহ থাকায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং যুদ্ধের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তারা প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম পাশাসহ বহু উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীর গৃহ লুণ্ঠন করে। সোলায়মান সেনাবাহিনীর বিশৃঙ্খল আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বয়ং বিদ্রোহ দমন করেন এবং তিনজন জেনিসারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন। তাদের দলপতি এবং অন্য বিদ্রোহী নেতাদের হত্যা করা হয়। অপরাপর জেনিসারীদের ক্ষমা প্রদর্শন এবং উপঢৌকন দ্বারা ক্ষান্ত করা হয় কিন্তু সুলতান এই ঘটনার রণসজ্জা করতে বাধ্য হন। হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে সোলায়মান প্রথমে দুইবার পরে আর একবার যুদ্ধাভিযান করেন এবং এর মূলে বিশেষ কতকগুলো কারণ ছিল; প্রথমত হাঙ্গেরির রাজা দ্বিতীয় লুই তুর্কিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে বেলগ্রেড পতনের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে থাকেন। এতে সোলায়মান তুর্কিদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে সমরাভিযান করেন; দ্বিতীয়ত, এলান বুলকের ভাষায়, ‘এমনকি কনস্টান্টিনোপলের শোচনীয় পতনেও ইউরোপ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয় যে, একমাত্র সংঘবদ্ধ ঐক্যজোটেই অটমান আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। পরবর্তী শতাব্দীতে ফরাসি রাজা এবং হাফসবুর্গ সম্রাট ক্যাথলিক এবং নব-প্রতিষ্ঠিত প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে বিরোধিতা সাফল্যজনক প্রতিরোধের আশাকে ম্লান করে দেয়।’ বলা বাহুল্য, স্বীয় স্বার্থে ফরাসি সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস অস্ট্রিয়ার হাফসবুর্গ বংশের সম্রাট পঞ্চম চার্লসের কাছে ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে পাভিয়ার যুদ্ধে পরাস্ত হলে তিনি সোলায়মানকে হাঙ্গেরি আক্রমণে প্ররোচিত করেন; কারণ এর ফলে ফরাসি থেকে চার্লসের দৃষ্টি পূর্ব দিকে নিবদ্ধ হবে; তৃতীয়ত, ধর্মীয় কোন্দল ও বিভেদ খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বিভক্ত করে এবং প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা খ্রিস্টান ইউরোপকে দ্বিধাবিভক্ত করায় সোলায়মান হাঙ্গেরির আক্রমণে উৎসাহবোধ করেন। চতুর্থত, যুদ্ধলিপ্সা, ধনলিপ্সা ও মর্যাদালিপ্সা হাঙ্গেরি অভিযানের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। বিদ্রোহী জেনিসারী বাহিনী সদাসর্বদা যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাইত, কারণ একদিকে যেমন এটা তাদের নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততা দূর করত অপরদিকে ধনসম্পদ লুণ্ঠন করে তারা লাভবান হতো। বলা বাহুল্য, গৌরবমণ্ডিত অটমান তুরস্কের মেরুদণ্ড ছিল এই জেনিসারী বাহিনী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর