মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

না লিখে উপায় কী?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

না লিখে উপায় কী?

আমি মারা গেলে অত লোক শোক জানাবে কিনা জানি না। কত চিঠি, কত ফোন, শামসুজ্জামান স্যার বললেন বাবা কী হলো? লেখা পাই না। গতকাল রৌমারীর পথে ছিলাম, কী বলব মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে? জানি ভদ্রলোক খুবই পরিশ্রম করেন। তবু শুধু সাভার বাজার পার হতেই দুই ঘণ্টা লেগেছে। বরিশালের স্বরূপকাঠির কয়েক দোকানি ছুটে এসে হাত ধরে চুমু খেয়ে বললেন, আপনাকে আমরা বড় ভালোবাসি। কদিন থেকে লেখা পাই না। আপনার লেখার জন্যই বাংলাদেশ প্রতিদিন কিনি। কী হয়েছে দয়া করে লিখবেন। কথা শুনে চোখে নয় বুকে কান্না ঝরেছিল। কথা দিয়েছিলাম দয়া করে কেন পাঠকের জন্য ভালোবেসে লিখি ভালোবেসেই লিখব। তাই লিখছি।

যখন খুব ছোট ছিলাম তখন গ্রামের বাড়িতে সপ্তাহে এক দিন একজন চুল কাটতে আসত। সে নাপিত। সাধু ভাষায় শীল। এখনো সেই ছোটবেলার চুল কাটা কাঁচির খচখচ শব্দের চমৎকার ঝঙ্কার কানে বাজে। চুল কাটা কাঁচির ঘা সহ্য করা গেলেও অনেক সময় সম্পাদকের ঘা সহ্য করা খুবই কঠিন।

কিছুদিন হলো কুড়ি মামণি লন্ডনে। লোকজনে এখনো বাড়ি ভরা তবুও মেয়েটার জন্য বুকটা কেমন যেন খালি খালি লাগে, হাহাকার করে। কুশি আর ওর মায়ের বাথরুম খুুবই ছোট। সেটা একটু বড় করার ইচ্ছা ছিল। সেই সঙ্গে কুশিমণির জন্য একটা বাথটাব বসানো। তাই বাথটাব কিনতে হাতিরপুল গাজী শাফায়াত হোসেনের বাঁধন নামের দোকানে গিয়েছিলাম। চমৎকার দোকান। দোকানের মালিক আরও চমৎকার। বেসিন, বাথটাব, কমোড এবং নানা ধরনের ফিটিংস থরে থরে সাজানো। বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করছিল। প্রথম যা দেখানো হয়েছিল তা ২৪ হাজার, আরেকটা ১৮ হাজার। পছন্দ হচ্ছিল না। দোকানদার বুঝতে পারছিল না আরও ওপরে না নিচে যাবে। দেশি কোনো বাথটাব আছে কিনা, বলায় ১৬ হাজারের একটা, আরেকটা ৭ হাজার ৫০০ টাকার দেখাল। গরিব মানুষ ৭ হাজার ৫০০টাই আমার পছন্দ। শাওয়ার এবং ফিটিংস আরও ৫ হাজার। টাকা-পয়সা দিয়ে যখন উঠি উঠি করছিলাম তখন দোকানদার বলছিল আমার এখানে কিছু খেলে খুব ভালো লাগত। খেতে ইচ্ছা ছিল না। শেষে ভদ্রলোক এক বোতল পানি এনে দিল। আমার বাথটাবের কল খারাপ। আরেকটা দরকার বলতেই লোকটি যেন কেমন হয়ে গেল, স্যার আপনার আরেকটা দরকার সেটা আমি উপহার দেব। অনেক জোরাজুরি করেও দাম দিতে পারলাম না। বেরিয়ে আসার সময় দরজার কাছে একটা ডাবল বাথটাব দেখলাম। দাম জিজ্ঞাসা করলাম সাড়ে সাত না আট লাখ। কী যে হবে ওই বাথটাব দিয়ে! দেশের কোটি কোটি মানুষ যাদের পুরো পরিবারের আট লাখ টাকার সম্পদ নেই। আর ধনী লোকের এক বাথটাবের দাম আট লাখ। জায়গাটা হাতিরপুল। গুলশানে হলে ওটাই যে আশি লাখ হবে না তাই বা কে বলবে!  তারপর এক টাইলসের দোকানে গিয়েছিলাম। দাম হয়েছিল ৮ হাজার ২৫০ টাকা, ২৫০ টাকা কম দিতে চেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল তাতে দোকানির কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তারা ১০০ টাকার বেশি কমাতে পারবে না। পরে ৮ হাজার ২৫০ টাকাই দিয়েছিলাম। গাড়িতে বসে ভাবছিলাম দুজনের পার্থক্য কত। এক জায়গায় সাড়ে বার হাজারের জিনিস কিনেছিলাম। সে ৫ হাজার টাকার বাথটাবের ফিটিংসের পয়সা নেয়নি। জোরাজুরি করেও দিতে পারিনি। আর ৮ হাজার ২৫০ টাকার মালে অন্য দোকানির ২৫০ টাকা কম নিতে জান কোরবান। এই হলো মানুষে মানুষে তফাত।

সেদিন গিয়েছিলাম বসুন্ধরার নিউজ টোয়েন্টিফোরের আনুষ্ঠানিক শুভযাত্রায়। নঈম নিজাম চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও। এর আগে বসুন্ধরা যেতে কখনো অত ফাঁকা পাইনি। দাওয়াতপত্রে ছিল ৪টা। ৩টা ৪৫-এ পৌঁছে গিয়েছিলাম। মনে হলো আমিই সবার আগে গেছি। খুবই যত্ন করে সামনের তিন সারি ছেড়ে বসিয়েছিল। একাই ছিলাম, বেশ কিছুক্ষণ পর পেছনে কথাবার্তার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখি ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ। পাশাপাশি বসেছিলাম। বহুদিন পর অনেক কথা হলো। তোফায়েল আহমেদ যখন এসেছিলেন তখন ৪টা ৪-৫ মিনিট হবে। আয়োজকরা তখনো সবাই আসেনি। তোফায়েল আহমেদ একসময় বললেন ঠিক সময়ে অনুষ্ঠানে আসা তার অভ্যাস। একদিন বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারে খুলনা যাচ্ছিলেন। তিনি ২ মিনিট পর গিয়ে দেখেন হেলিকপ্টার উড়ে গেছে। তখন মোবাইল ছিল না, যোগাযোগের উপায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু পরে বলেছিলেন, ‘তোকে শিক্ষা দিতে চলে গিয়েছিলাম। জিনিসটা আজীবন মনে রাখবি।’ তিনি তা মনে রেখেছেন। একটু পর এলেন আমির হোসেন আমু। প্রবীণ-বর্ষীয়ান নেতা। আমরা ’৭৫-এ একসঙ্গে জেলা গভর্নর ছিলাম। তিনি ছিলেন বরিশালের আর আমি টাঙ্গাইলের। তারপর হাসানুল হক ইনু এলেন। তথ্য মন্ত্রণালয় তার হাতে। ডানে বসেছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল। অনুষ্ঠান শুরু হয় ৫টায়। অনুষ্ঠানটা বেশ ভালো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ জনাব আহমেদ আকবর সোবহান প্রায় সব অতিথির সঙ্গে মেলামেশার চেষ্টা করেছেন। যা দেখে আমার সত্যিই খুব ভালো লেগেছিল। অমনই হওয়া উচিত। যা তিনি করেছেন। ৬টা ৫-৭ মিনিটের দিকে বেরিয়ে এসেছিলাম। নামাজের সময় চলে যাচ্ছিল বলে খারাপ লাগছিল। চ্যানেলটির শুভ সূচনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে নঈম নিজাম বার বার অনুরোধ করছিল। কিন্তু সেদিন তার অনুরোধ রাখতে পারিনি। ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে এসেছিলাম। এক সাধারণ সৈনিকের অসাধারণ মন্তব্যে মনপ্রাণ হৃদয় ময়ূরের মতো নেচে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল এমন নির্ভয় সাহসী মানুষ এখনো আছে? আরও সাহস পেয়েছিলাম, নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম জাহাঙ্গীর গেট পার হয়ে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরের কাছে। আমার আগে আগে উল্টো পথে এক প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি ছিল। আমি ছিলাম তার পিছে। এক সার্জেন্টকে প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি উল্টো পথ থেকে সোজা পথে ঘুরিয়ে দেওয়া দেখে আমি কোনো উচ্চবাচ্য না করে মন্ত্রীর গাড়ির পিছু নিয়েছিলাম। উল্টো পথে শুধু আমার গাড়ি থাকলে আর সার্জেন্ট সেটা সোজা পথে ঘুরিয়ে দিতে চাইলে হয়তো কিছু মনে করতাম। তার কথামতো হয়তো নাও ঘুরতে পারতাম। আইন অমান্য করে যাওয়ার পথে আইন মানতে বলায় তার ওপর হয়তো অসন্তুষ্টও হতাম। কিন্তু সামনে মন্ত্রীর গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল এদের কারও কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমাদের। আমরা চালাতে পারি না তাই দেশ ভালো চলে না। না হলে একজন সার্জেন্ট কোনো মন্ত্রীর গাড়ি উল্টো পথ থেকে সোজা পথে ঘুরিয়ে দিতে পারে? ’৮৮-এর পর এমন সর্বগ্রাসী বন্যা আর হয়নি। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই দুর্গতদের পাশে কিছু সময় থাকতে, তাদের ব্যথায় শরিক হতে এসেছি। কতটা কী পারব জানি না। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ মানুষের যদি কিছুটা কষ্ট দূর করতে পারি সেটাই হবে আমার জন্য গৌরবের। ’৮৮-এর বন্যার সময় ভারতে নির্বাসিত ছিলাম। সে সময় আমার সমর্থকরা গণস্বাস্থ্যের প্রাণপুরুষ ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরীর কাছ থেকে আটা নিয়ে সারা দিন রুটি বানিয়ে মিরপুরে বিলাত। সে বন্যায় নৌকা নিয়ে মিরপুরে দোতলায় ওঠা যেত। আমিও এবার তিস্তা, যমুনা, ধলেশ্বরীর দুই পাড়ে যেখানেই সুযোগ পাব, সেখানেই সারা দিন রুটি বানাব, ভাত রাঁধব, খিচুড়ি করব। বাড়িঘর ছাড়া বানভাসি মানুষের সঙ্গে খাব, রাত কাটাব— এটাই হবে আমাদের প্রধান কাজ।

গতকাল শুরু করেছি কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে। এই রৌমারীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার পরিচয়। ’৭১-এর ১৬ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে মেঘালয়ে গিয়েছিলাম। সেই সুবাদে আমার রৌমারীতে যাওয়া। সে সময় জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্স তেলঢালাতে ছিল। তাদের সঙ্গেই একত্র হতে রৌমারী গিয়েছিলাম। সেখানে বীরউত্তম জিয়াউর রহমানকে যেমন পেয়েছিলাম, তেমন পেয়েছিলাম শাফায়াত জামিল বীরবিক্রম, আবদুল গাফ্ফার বীরউত্তম, আরও অনেককে। তারপর অনেকবার রৌমারী গিয়েছি। রৌমারী হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আজিজ মাস্টার আমার খুবই প্রিয়। তার বাড়িতে থেকেছি, খেয়েছি। রৌমারীর হান্নান, জয়নাল, আজিজুল ওরা ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে আমার সঙ্গী ছিল। সেই রৌমারী থেকে শুরু করছি বন্যাদুর্গতদের মাঝে আমাদের এই যাত্রা। এর আগে ৩ আগস্ট সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনার পাড়ে আফজালপুরে গিয়েছিলাম। দুর্গতদের দেখে বুক ফেটে গিয়েছিল। চোখে পানি রাখতে পারিনি। ’৭১-এ পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণে সর্বহারা শরণার্থীরা যে কষ্ট করেছে তার চেয়েও কষ্টে বানভাসিরা দিন কাটাচ্ছে। হৃদয়হীন ডিজিটাল বাংলাদেশে দুর্গতদের সামনে দিয়ে মাইক বাজিয়ে নৌপথে প্রমোদ ভ্রমণের নির্দয় কারবার দেখে নিজেকে মানুষ বলতে কষ্ট হয়েছে। যেখানে মানুষের মুখে আহার নেই, পানিবন্দী মানুষ ঘরে চাল-ডাল থাকতেও হয়তো রান্না করে খেতে পারছে না, পানির কারণে কতদিন ঘুমাতে পারেনি কেউ জানে না। সেখানে শহরের ধনবানরা মাইক বাজিয়ে নেচে-গেয়ে প্রমোদ ভ্রমণে আনন্দ-ফুর্তি করছে। দু-এক জায়গায় নদীর পাড়ের অসহায় লোকজন এই বোধহীন নির্দয় প্রমোদ ভ্রমণকারীদের আক্রমণও করেছে। তবুও শহুরে বিলাসীদের প্রমোদ ভ্রমণের বিরাম নেই। ৩ তারিখ সারা দিন এই হৃদয়হীন কাণ্ড দেখে বড় বেশি মর্মাহত হয়েছি। আলীপুরের চরে প্রায় ৩ ফুট পানি সরে যাওয়ার পরও কাদা-মাটি-পানিতে সব একাকার। এক মহিলাকে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রশ্ন করেছিলাম আপনি এ শাকপাতা দিয়ে কী করবেন? আমার ধারণা ছিল সিদ্ধ করে নিজেরা খাবেন। তিনি বললেন, ছাগলকে খাওয়াব। একদিকে দুর্গত মানুষের সামনে প্রমোদ ভ্রমণকারীরা নেচে-গেয়ে আনন্দ করছে, অন্যদিকে নিজেদের খাবার, শোবার, বসার জায়গা নেই। সে অবস্থায়ও গ্রামের এক যুবতী নারী তার ছাগলের খাওয়ার কথা ভোলেননি; যা আমরা শহর-বন্দরে মা-বাবার জন্যও দেখতে পাই না। ছোট এক শ্যালো নৌকায় দুজন বসে ছিলেন। ইঞ্জিন স্টার্ট করার সময় জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনারা কোথায় যান? দুজন সমস্বরে বলেছিলেন গরু-ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে। গ্রামের গরিব-দুঃখী এরাও মানুষ আর শহরের প্রমোদ ভ্রমণকারীরাও মানুষ। কী আসমান-জমিন পার্থক্য! এক হুজুর মওলানা ভাসানী ছাড়া আর কেউ অমন করে পশুপাখি- হাঁস-মুরগির কথা ভাবত না।

আমাদের সাহায্যসামগ্রী তেমন কীই বা ছিল। সামান্য চিঁড়া, গুড়। আর হাসমত নেতা সারা দিন রুটি বানিয়েছিল। যখন কাগজে প্যাকেট করা সেই রুটিগুলো লোকজনের হাতে হাতে দিচ্ছিল আমি তখন চুপচাপ বসে ছিলাম। আর ভাবছিলাম যারা মাটি ফালা ফালা করে চষে ফসল ফলিয়ে আমাদের খাওয়ায় তারাই আজ অভুক্ত, নিরন্ন। যখন বিদায় হচ্ছিলাম, কয়েকশ মানুষ বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা হাসমত নেতার পরিবার-পরিজনের সারা দিনের পরিশ্রমের রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল দেখে কী যে প্রশান্তি লাগছিল তা শুধুই অনুভবের, প্রকাশের নয়। শখ করে এক বাচ্চার কাছে হাত পেতেছিলাম। সে আমায় এক টুকরো রুটি দিয়েছিল। খেয়ে বেশ ভালো লেগেছিল। সেটা হাসমত নেতার পরিবার-পরিজনের পরম মমতায় তৈরির কল্যাণে নাকি অসহায় অভুক্ত দরিদ্র শিশুর স্পর্শের কারণে— বলতে পারব না। তবে প্রতিদিন সকালে লাল আটার রুটি দিয়ে নাস্তা খাই। কিন্তু বানভাসি চরের উদাম সেই ছোট্ট ছেলেটির হাতের এক টুকরো রুটির অমৃতের স্বাদ কখনো পাইনি।

অকামা মানুষ আমি। সারা জীবন বেগার খেটেই শেষ। জীবনের শুরু কবে বুঝতেই পারিনি। প্রায় শেষের পথে কেন যেন গরিবের মাঝে নিজেকে বড় বেশি সাবলীল মনে হয়। আলীপুরে যখন বসে ছিলাম শত শত নারী-পুরুষ-শিশুর মধ্যে মনে হচ্ছিল যেন নিজের ঘরে নিজের বাড়ি এসেছি। কিন্তু বেশি সময় থাকতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে জোগার চর হয়ে রাতেই ফিরতে হয়েছিল। কারণ পরদিন ৪ তারিখ বিরোধী দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ছিল। রাত ৮টা থেকে ১০টা ১০-১২ মিনিট পর্যন্ত কখনো দলবদ্ধ, কখনো একক আলোচনা হয়েছে। এবার তাকে অনেকটা আন্তরিক মনে হয়েছে। আজকাল বিজ্ঞানের জমানায় প্রচারমাধ্যমের কোনো  অভাব নেই। একদল সাংবাদিক ও ক্যামেরা অপেক্ষায় ছিল। কী বলব, বলার কিছুই ছিল না। যা ভাবী, চিন্তা করি, অন্তরে লালন করি তাই বলেছি। বলেছি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া রাজনীতি করব না, যতক্ষণ বেঁচে থাকব বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে আল্লাহ, রসুল (সা.)-কে হাজির-নাজির জেনে বেঁচে থাকব। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনীতি করব না। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অরাজনৈতিকভাবে উত্খাত, ধ্বংস বা হত্যার ষড়যন্ত্রে শরিক হব না। বরং জানতে পারলে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করব। ঠিক তেমনি বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বিএনপি-প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকেও অন্যায়ভাবে অপমান-অপদস্থের চেষ্টা হলে প্রতিহত করব।

পরদিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আরও দু-চার কথা বলেছি। যা পারলে পরে আলোচনা করব। কিন্তু দুর্গত মানুষের কথা চিন্তা করে ঢাকায় থাকতে পারিনি। এসেছি রৌমারীতে। রৌমারী, রাজীবপুর হয়ে ভাটির পথে ভাসছি। আজ কেবল শুরু। দেখি কতটা কী করতে পারি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। দেখি পথে পথে কতটা সহযোগিতা পাই। যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন। সেই ভরসায়ই উন্মুক্ত আকাশের নিচে পথে নেমেছি। যেমনটা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলাম।

     লেখক : রাজনীতিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর