রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফারাক্কার অভিশাপ

এখন পানিতে ডুবছে দেশ

ফারাক্কা বাঁধের প্রায় সব কটি গেট একসঙ্গে খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীতে পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত শুক্রবার বিপদসীমার সামান্য নিচে দিয়ে প্রবাহিত হলেও যে কোনো সময় তা সীমা অতিক্রম করে ভয়ালরূপ ধারণ করতে পারে। বিহারে বন্যা দেখা দেওয়ায় সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাবির মুখে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ সিদ্ধান্ত বিহারের জন্য স্বস্তি বয়ে আনলেও ভাটির দেশ বাংলাদেশকে যে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সম্মুখীন করছে তা এক কথায় দুর্ভাগ্যজনক। ইতিমধ্যে পদ্মা অববাহিকার বিপুল পরিমাণ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজশাহীতে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলে তা বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে। কুষ্টিয়া প্রান্তে পদ্মা উপকূলবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। শরীয়তপুরে শত শত ঘরবাড়ি পানির তোড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফারাক্কায় বাঁধ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা বন্দরের নাব্য রক্ষার জন্য। অভিন্ন নদীতে একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। ভারতের পরিবেশবাদীরাও নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ক্ষুণ্ন করাকে অন্যায় বলে অভিহিত করে। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা ওঠে দুই দেশের বোদ্ধাজনদের মধ্যেও। বিহারের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির জন্য ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করার ফলে প্রমাণিত হলো এ বাঁধ ভারতের জন্যও বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। বিহারের বন্যা এবং ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের কোনো দায় না থাকলেও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে ফারাক্কার সব কটি গেট একসঙ্গে খুলে দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে। এ বিবেচনাবর্জিত সিদ্ধান্ত বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মানুষের আস্থার সম্পর্কে চির ধরাচ্ছে। সুসম্পর্কের স্বার্থেই ফারাক্কা থেকে বেপরোয়াভাবে পানি ছাড়ার বিষয়টি যেমন বন্ধ করা উচিত তেমন দুই দেশের জন্য দুর্ভোগ হয়ে ওঠা এ বাঁধ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা উচিত। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার মধ্যেই যে সবার কল্যাণ এ বিষয়টি যত দ্রুত উপলব্ধি করা যাবে ততই মঙ্গল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর