বায়ুদূষণে মানুষ শুধু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে না অকাতরে জীবনও হারাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃত্যুর যে সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে তা আঁতকে ওঠার মতো। বায়ুদূষণ যে দীর্ঘস্থায়ী নানা রোগ ও অসুস্থতার কারণ এটি জানা থাকলেও এটি মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেওয়ার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধানের তাগিদও দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। সন্দেহ নেই বায়ুদূষণ এক বিশ্বজনীন সমস্যা। আমাদের গ্রহের অধিবাসীদের স্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি হয়েও দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক তথ্য হলো— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান চতুর্থ। ৯১টি দেশের এক হাজার ৬০০টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ২৫টি শহরের তালিকায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপের ফল অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর ২৫টি শহরের তালিকায় নারায়ণগঞ্জের অবস্থান ১৭তম। গাজীপুর ২১তম ও ঢাকা ২৩তম অবস্থানে। তালিকায় সবচেয়ে বেশি দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লিকে। সবচেয়ে বেশি দূষণের দেশের তালিকার শীর্ষে আছে পাকিস্তান। এরপর কাতার ও আফগানিস্তান। তালিকায় ১০ নম্বরের মধ্যে থাকা অন্য দেশগুলো— ইরান, মিসর, মঙ্গোলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত ও বাহরাইন। বায়ুদূষণের ফলে যেসব রোগে মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটছে তার মধ্যে রয়েছে তীব্র শাসকষ্টজনিত রোগ, ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী রোগ, ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে প্রতিদিন ১০৩ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বায়ুদূষণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদেরই ভুলে। বিশেষত দেশের নগর এলাকাগুলো মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। অথচ মানুষ একটু সতর্ক হলেই বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে তেমনি যেসব কারণে বায়ুদূষণ ঘটছে তা রোধে প্রশাসনকে কঠোর মনোভাব দেখাতে হবে।