কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, জান্নাতে কোনো কষ্ট থাকবে না। মনের দিক থেকেও না, শরীরের দিক থেকেও না। মানমর্যাদার দিক থেকেও না। আখিরাতের মাঠে প্রত্যেককে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। কাফের হলে চিরস্থায়ী জাহান্নামি আর মুসলমান হলে অপরাধের শাস্তিভোগ করে জান্নাত পাবে। আর যদি নেকির কাজ কর, নিষ্পাপ অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর, যেমন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ, শিশু বাচ্চারা ও প্রকৃত শহীদ, তাহলে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাত পাবে।
কিছু লোক বরযখী জিন্দেগিতেই তাদের অপরাধের শাস্তিভোগ করে জান্নাতে যাবে। আর কিছু লোক হাশরের ময়দান থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে জান্নাতে যাবে। মোটকথা প্রত্যেককে নিজের আমলের বদলা দেওয়া হবে। আখিরাতের জীবনে অনন্তকালের লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার জন্য দুনিয়াতেই আমল করে যেতে হবে এবং সঠিক আমল করতে হবে। দুনিয়াতে নেক আমলের সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো— মৃত্যুর সময় ইমানি মৃত্যু নসিব হবে, কবরে সাওয়ালের সঠিক উত্তর দেওয়া সহজ হবে।
এখন একটি প্রশ্ন হয়, মানুষকে জাহান্নামে কষ্ট দিয়ে বলা হলো যে, তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দেওয়া হলো। তাহলে আল্লাহর দয়া গেল কোথায়? আল্লাহপাক তো গাফফার? এর উত্তরে বলা যায় যে, আল্লাহপাক বলেছেন, জুলুম তথা অবিচার করা হবে না। আল্লাহপাক এক অপরাধীকে বলবেন, তুমি আমার অমুক-বান্দার বাড়িঘর দখল করে তার প্রতি জুলুম করেছ, তাই তোমাকে জাহান্নামে দিয়েছি। তুমি যেমন আমার বান্দা তুমি যার বাড়ি দখল করেছ সেও আমার বান্দা। সে দুর্বল থাকায় তুমি তার প্রতি জুলুম করেছ। সে তোমার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারেনি। আমি তোমার যেমন প্রভু তারও তেমন প্রভু। এখানে তোমাকে সাজা না দিয়ে বেকসুর খালাস দিলে অবিচার করা হবে।দুনিয়াতে যদি একজন আরেকজনকে হত্যা করে আর হত্যাকারীকে আদালতে নিরপরাধ ও নির্দোষ বলে ঘোষণা করে ছেড়ে দেয়, তাহলে আমরা সে বিচারে সন্তুষ্ট না হয়ে অসন্তুষ্ট হই। দুনিয়াতে যেমন আখিরাতে তেমনই। আল্লাহপাক জালেমকে বলবেন, তুমি আমার দুর্বল বান্দার প্রতি জুলুম করেছ এ জুলুমের বিচার যদি না করা হয় তাহলে জুলুম করা হবে। এ জন্য অপরাধীকে অপরাধ পরিমাণ শাস্তিভোগ করার পর জান্নাত দান করা হবে। আল্লাহপাক আমাদের এমন মুত্তাকি ও পরহেজগার বানান— যার দরুন প্রথমেই জান্নাতের টিকিট পেয়ে যাই।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ