ভূত তাড়াতে নাকি সরিষার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেই সরিষায় ভূত সওয়ার হলে কী অবস্থার উদ্ভব হয় তা সহজেই অনুমেয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কোনো বিকল্প নেই। পুলিশহীন সমাজ, সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা সভ্য সমাজে কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপকতা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা এ বাহিনীর সুনামের জন্যই বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। একশ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যের নানা অপকর্ম, অনিয়ম ও অপরাধের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনী নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ কখনো কখনো আমলে আনা হলেও অধিকাংশ তদন্ত প্রতিবেদনই থেকে যায় আড়ালে। অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রত্যাহার, সাময়িক বরখাস্ত, বদলির মধ্যেই আটকে থাকে শাস্তি। বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতি ও অনিয়ম ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এমনকি গত ১৭ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডিএমপি সদস্যদের শুধরে চলার ওয়ার্নিং দিলেও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের নিরস্ত করার ক্ষেত্রে খুব একটি সাফল্য অর্জিত হয়নি। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক আওতাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের দ্বারা এমন সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে আশা করা হয় না। মিথ্যা মামলায় জড়িত করার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় অনেক পুলিশ সদস্যের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার যেসব নির্দেশনা জারি করেন তা প্রতিপালিত হলে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ এবং সাধারণ মানুষের হয়রানি অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব হবে। পুলিশের ভাবমূর্তিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু এসব নির্দেশনা কতটুকু পালিত হচ্ছে তা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। গুটিকয়েক অসৎ ও দুর্বিনীত সদস্যের জন্য পুলিশের সুনাম বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি যে কোনো মূল্যায়নে দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করব শুধু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ এবং নির্দেশনা দেওয়া নয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুলিশের সুনামের স্বার্থেই এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আপসহীন হতে হবে।