সুশাসন ছাড়া শাসকদের পক্ষে জনগণের হৃদয় জয় করা সম্ভব নয়। ইসলামে শুদ্ধাচারী চার খলিফার শেষ খলিফা হজরত আলী (রা.) মিসরের গভর্নর মালিক আশতারকে উপদেশ দিয়ে যে চিঠি লেখেন তা ন্যায়পরায়ণতা তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় বলে বিবেচিত হতে পারে। হজরত আলী (রা.) তার চিঠির মাধ্যমে মালিক আশতারকে নির্দেশ দেন, ‘তুমি এমন লোকদের সাহচর্য অবলম্বন কর যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং সত্যবাদী। অতঃপর তাদের এ ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তোল যে, তারা যেন এমন কাজের জন্য তোমার প্রশংসা না করে বা তোমাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা না করে, যে কাজ তুমি করনি। কারণ অতিরিক্ত প্রশংসা তোমার মধ্যে গর্ব-অহঙ্কার তৈরি করবে এবং তোমাকে ঔদ্ধত্য আচরণের দিকে ঠেলে দেবে। তোমার কাছে যেন পুণ্যবান ও দুর্বৃত্ত লোকরা সমান মর্যাদা লাভ না করে। কারণ এর ফলে পুণ্যবানদের নেক আমল থেকে বিচ্যুত করা হবে এবং দুর্বৃত্তকে তার দুর্বৃত্তপনায় প্ররোচিত করা হবে।’
হজরত আলী (রা.) সমাজের সব শ্রেণির লোকদের মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে ওই চিঠিতে আরও লেখেন, ‘তোমার জেনে রাখা প্রয়োজন যে, শাসকের জন্য তার অধীন জনগণের ব্যাপারে সুধারণা লাভে সর্বাধিক সহায়ক হচ্ছে তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা, তাদের কষ্ট লাঘব করা এবং তাদের সাধ্যাতীত অসুবিধায় ঠেলে দেওয়া থেকে বিরত থাকা। সুতরাং এভাবে তোমাকে এমন একটি কর্মনীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ফলে তুমি তোমার অধীন জনগণ সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করতে পারবে। কারণ এ সুধারণা তোমাকে অনেক বড় ধরনের উদ্বেগ থেকে রক্ষা করবে। নিঃসন্দেহে তোমার সুধারণা লাভের জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত ওই ব্যক্তি, যার সঙ্গে তোমার আচরণ ভালো ছিল না। মনে রেখ, সাধারণ জনগণ সেসব শ্রেণির লোক যারা কেবল পরস্পরের সহযোগিতায়ই উন্নতি করতে পারে এবং তারা পরস্পর থেকে মুখাপেক্ষীহীন নয়।’
হজরত আলী (রা.) মালিক আশতারকে লেখা তার এ পত্রে বিশেষভাবে সমাজের অভাবী লোকদের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন : ‘সমাজের নিম্নতম স্তরের তথা অভাবী ও অসহায় লোকদের প্রতি দৃষ্টি দাও, যাদের জন্য সাহায্য এবং সহায়তা অপরিহার্য ও তাদের সবার জন্যই আল্লাহর নামে (বায়তুল মাল থেকে) ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য অপরিহার্যতার ভিত্তিতে তাদের প্রত্যেকেরই শাসকের ওপর অধিকার রয়েছে। এ ব্যাপারে শাসক আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে না। এ দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে হবে ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং নিজেকে সঠিক পথ ধরে রাখতে হবে ও এ পথে হালকা বা কঠিন যে কোনো ধরনের কষ্টই আসুক না কেন, তা সহ্য করতে হবে।’লেখক : ইসলামী গবেষক।