শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনা

শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনা এক জাতীয় বিপর্যয়ের নাম। দুনিয়ার যেসব দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া এ দেশে সত্যিকার অর্থেই দুষ্কর। কারণ দুর্ঘটনার এক উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পর্কে থানায় কোনো অভিযোগ নথিভুক্ত হয় না। পত্রপত্রিকায়ও এ সংক্রান্ত সব খবর প্রকাশিত হয় না নানা সীমাবদ্ধতার কারণে। তারপরও যে তথ্য-উপাত্ত জনসমক্ষে প্রকাশ পায় তা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— দেশে গত এক বছরে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন ৯২৩ জন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের ভিত্তিতে প্রণীত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইরাক, সিরিয়া বা আফগানিস্তানের ভয়াবহ যুদ্ধের চেয়ে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কোনো অংশে কম নয়। এ নীরব হত্যাকাণ্ড প্রতিদিন ঘটলেও গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এটি দিন দিন গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ করেও বিচার পাওয়া যায় না। জিডিপির দেড় শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতি হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণত্রুটি, ট্রাফিক আইন না মানাসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত হতাহতের হার যে উল্লিখিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি তা সহজে অনুমেয়। আনুমানিক হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর মৃত্যু ও চিরতরে পঙ্গু হওয়ার দুর্ভাগ্য অর্জন করছে অন্তত দশ হাজার মানুষ। তাদের পরিবারের জন্য দুর্ঘটনা যে ট্র্যাজেডি ডেকে আনছে তা কারোর জন্যই প্রত্যাশিত হওয়া উচিত নয়। তারপরও এ বিষয়ে সম্বিত না ফেরার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সড়ক দুর্ঘটনার সিংহভাগই ঘটছে চালক এবং পথচারীদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে।  ট্রাফিক আইন না মানা যেন জাতীয় ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। এগুলো দেখার দায়িত্ব যাদের তারাও আইন মান্যের ব্যাপারে আন্তরিক নয়।  সড়ক দুর্ঘটনার রাশ টেনে ধরতে হলে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যত্নবান হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর