মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উদারতা

মুফতি মুতীউর রহমান

হজরত মুহাম্মদ (সা.) স্বভাবতই অতিশয় উদার ছিলেন। তার দানশীলতা ও উদারতা এত অধিক ছিল যে, জীবনে কাউকে তিনি ‘না’ বলে ফিরিয়ে দেননি। একদা একজন দরিদ্র লোক তাঁর কাছে এসে কিছু চাইল। নবীজির একপাল ছাগল তখন ঘাস খাচ্ছিল। তিনি গোটা ছাগলের পালটিই প্রার্থনাকারীকে দিয়ে দিলেন। তাঁর উদারতা দেখে লোকটি মুসলমান হয়ে গেল। নবীজি কখনো একা খেতেন না। একদল সাহাবি সব সময়ই তাঁর আহারসঙ্গী হতেন। তাঁর কাছে কোনো হাদিয়া এলে তা বণ্টন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্থির হতে পারতেন না। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, একদিন ঘরে ফিরলে নবীজিকে খুব উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বললেন, আগের দিন তাঁর কাছে সাতটি দিনার হাদিয়া এসেছিল। কিন্তু এযাবৎ তা বিতরণ না হওয়ায় তিনি প্রশান্তি পাচ্ছেন না। হজরত  আবু জার (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) তাকে বলেছেন, যদি এই উহুদ পর্বতটিও আমার জন্য সোনায় পরিণত করে দেওয়া হয় তবে নিজের ঋণ পরিশোধের জন্য একটি দিনার রাখা ছাড়া সমুদয় সম্পদ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে তার তিন দিনও লাগবে না।

দানশীলতার ক্ষেত্রে নবীজির সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কারও তুলনা হয় না। তিনি যখন যা হাতে পেতেন সঙ্গে সঙ্গে দান করে দিতেন। নিজের প্রয়োজন থেকে অন্যের প্রয়োজনকেই সব সময় বড় করে দেখতেন। নিজে বহু অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়েছেন। কিন্তু অভাবীর অভাব দূর না করা পর্যন্ত তাঁর চোখে ঘুম আসত না। নবীজির দানের পদ্ধতিও বিভিন্ন। কখনো উপহার হিসেবে দিতেন। কখনো যা ঋণ নিতেন তার চেয়ে অনেক বেশি ফিরিয়ে দিতেন। কেউ তার কোনো উপকার করলে তিনি তার পরিবর্তে অনেক গুণ বেশি উপকার করতেন। কৃপণতাকে তিনি খুবই অপছন্দ করতেন। বলতেন, আল্লাহ দানশীল, তিনি দানশীলতা পছন্দ করেন। দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জনগণের নিকটবর্তী; দোজখ থেকে দূরবর্তী। নবীজির গোটা জীবনই ছিল দানশীলতা ও উদারতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তিনি তাঁর সাহাবায়ে কিরামকেও দানশীলতা ও উদারতার নির্দেশ দিতেন। বর্বর সমাজে তাঁর বদান্যতা মানুষকে ইসলামের কাছে টেনে এনেছিল। মুসলমানরা নবীজির এ আদর্শ বাস্তবায়ন করলে গোটা বিশ্ব ইসলামের সামনে নত হবে।

লেখক : খতিব, মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, শায়খে সানি চৌধুরীপাড়া মাদ্রাসা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর