প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মিয়ানমারের অবিসংবাদিত নেত্রী স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির চিঠি নিয়ে তার বিশেষ দূত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উ চ থিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গত বুধবার সন্ধ্যায় দেখা করতে এলে তাকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের দূতকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার তাগিদ দেন এবং বলেন, দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের বিশেষ দূতকে বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসের ব্যাপারে কোনো ছাড় না দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ তার ভূখণ্ড প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে ব্যবহৃত হতে দেবে না। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সম্পর্ক আরও জোরদারে তিনি প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবেন। বাংলাদেশের বিস্ময়কর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ উন্নয়ন অভিজ্ঞতা থেকে মিয়ানমারও শিখতে পারে। তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত নিয়ে কখনো কোনো বিরোধ দানা বেঁধে ওঠেনি। জল সীমান্ত নিয়ে বিরোধ থাকলেও আন্তর্জাতিক শালিসি আদালতের মাধ্যমে তার সুরাহা টানা সম্ভব হয়েছে এবং মিয়ানমারও সে শালিস মেনে নিয়ে সৎ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা দুই দেশের সুসম্পর্কের ওপর কালো মেঘ হয়ে বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সমস্যা নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু রোহিঙ্গা জঙ্গিদের অপতত্পরতা মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি সৃষ্টি করছে তেমনি কয়েক লাখ সাধারণ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ বাড়তি ঝামেলার উদ্ভব ঘটিয়েছে। মিয়ানমার তার দেশের নাগরিকদের সসম্মানে ফেরত নিলে প্রকারান্তরে তা রাখাইনের সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক হবে। কতিপয় সন্ত্রাসীর দায় কোনোভাবে সাধারণ নাগরিকদের ওপর চাপানো বাঞ্ছনীয় নয়। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সমর্থন আদায়ের স্বার্থেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে।