তাবলিগ জামাত মুসলিম উম্মাহর একটি দাওয়াতি কাফেলা, নিঃস্বার্থ ও সুশৃঙ্খলভাবে যারা কোরআন ও সুন্নাহর বাণী নিয়ে দুনিয়ার দেশে দেশে অসংখ্য জনপদে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষকে সিরাতে মুস্তাকিমের পথে নিয়ে আসতে এ কাফেলার সদস্যরা নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রমের এক মহা সম্মিলন। বিপথগামী মানুষকে আল্লাহ এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পথে আনার জন্য দেওবন্দের নিবেদিতপ্রাণ মুরব্বি হজরত ইলিয়াস (রহ.) ভারতের মেওয়াতে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম শুরু করেন। স্বল্প পরিসরে তিনি গুটিকয়েক সঙ্গীকে নিয়ে পথভোলা মানুষকে হেদায়েতের পথে আনার যে মিশন শুরু করেন তা মানুষের মধ্যে সাড়া জাগায়। ১৯৪১ সালে মেওয়াতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ইজতেমা। বাংলাদেশে এ দাওয়াতি কার্যক্রম ১৯৪৪ সালে সম্প্রসারিত হয়। মাত্র দুই বছর পর ১৯৪৬ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। এর দুই বছর পর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা শুরু হয়। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে তুরাগ তীরে টঙ্গীর ভবেরপাড়ে অনুষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত তুরাগ পাড়ের ওই স্থানের ১৬০ একর জায়গায় তাবলিগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা বা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ আল্লাহর পথে ফিরে আসছে। নামাজ রোজাসহ ইবাদতে নিজেদের সমর্পণ করছে। ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে তুলছে এ জামাতের সদস্যরা। সদাচরণ এবং ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করাকে তারা কর্তব্য বলে বেছে নিচ্ছে। বিশ্ব ইজতেমায় আল্লাহপ্রেমিকরা ছুটে আসেন মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির আশায়। জাগতিক লোভ লালসার ঊর্ধ্বে ওঠার মহৎ গুণ অর্জনের যে শিক্ষা তারা পান তাবলিগের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তা হানাহানি মুক্ত একটি শান্তির সমাজ গড়ার ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। তাবলিগ জামাত মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ নিশ্চিত করার সুমহান মিশন হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ যে ধর্মপ্রাণ, সেই সত্যটি দুনিয়ার সব দেশের মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার মতো একটি মহতী উদ্যোগ প্রতিবছর সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে। বিশ্ব ইজতেমার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একাত্মতা দেওবন্দের দাওয়াতি কার্যক্রমের বিজয় নিশানকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। লেখক : ইসলামী গবেষক।