সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

রাজতন্ত্রের পতন

আফগানিস্তানের রাজতন্ত্রের পতন এবং দাউদ সরকারের অভ্যুদয়কে পাকিস্তান আতঙ্কের চোখে দেখেছে। দাউদ আগাগোড়া উগ্র পাকিস্তান বিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের পাকিস্তান ভুক্তির বিরোধিতা করে পাঠান ও বালুচদের জন্য দুটি স্বাধীন দেশ গঠনের প্রস্তাব দেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে পাখতুনিস্তান এবং বেলুচিস্তানের সঙ্গে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচ অধ্যুষিত এলাকা যোগ দিয়ে স্বাধীন বেলুচিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন তিনি। পাখতুন ও বেলুচরা ওই দাবির প্রতি ছিল সহানুভূতিশীল। পাকিস্তানের স্বার্থেই জেনারেল জিয়াউল হকের সরকার আফগানিস্তানের বিদ্রোহীদের মদদ দিতে শুরু করে। শুধু বোরহান উদ্দীন রব্বানী নয় অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপকেও তারা উসকে দেয়। আফগানিস্তানের দাউদ সরকার কমিউনিস্টদের সরকারে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ইরানের রেজা শাহ পাহলবীর গোপন গোয়েন্দা বাহিনী সাভাক একত্রিত হয়ে কাবুলে গোপন তৎপরতা ও নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র শুরু করে। ফলে কাবুলের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট দাউদ বয়স্ক হওয়ায় তার মৃত্যুর পর যাতে নিজেদের পছন্দনীয় সরকার ক্ষমতায় আসে তা নিশ্চিত করতে তিন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা অশুভ তৎপরতা শুরু করে। সেলিং হ্যারিসন এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ‘বৃদ্ধ দাউদের পর কারা ক্ষমতায় আসবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সুযোগে বিদেশি শক্তি তাদের পছন্দনীয় দল উপদলকে গোপনে সহযোগিতা দেওয়া শুরু করে।

আফগানিস্তানের ইসলামপন্থিদের তারা তাদের শিখণ্ডী হিসেবে ব্যবহার করে। আফগানিস্তানের ইসলামপন্থিদের মদদ দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও ইরানি জোট দাউদ সরকারকে কমিউনিস্টদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আনতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এ ব্যাপারে তারা সফল হয়। ১৯৭৫ সালে দাউদ তার সরকার থেকে কমিউনিস্টদের বাদ দেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে সরে গিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল কমিউনিস্টপন্থি সামরিক অফিসারদের অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট দাউদ ক্ষমতাচ্যুত হন। পাঁচ বছর আগে যারা দাউদকে ক্ষমতায় এনেছিলেন তাদের হাতেই তার পতন ঘটে। নূর মুহাম্মদ তারাকি আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন। পাকিস্তান নতুন সরকারকে স্বীকৃতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখলেও বিদ্রোহীদের  প্রতি তাদের সমর্থন বৃদ্ধি করে। আফগানিস্তানের তারাকি সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে।      

            জাফর খান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর