সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট

শাইখ সিরাজ

কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুতের অংশ হিসেবে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়। এর আগে দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আলোচনা করে থাকেন। এটি প্রচলিত রেওয়াজ। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে জাতীয় আয়ের বৃহৎ একটি অংশ কৃষি; প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষিতে ৭০ ভাগ মানুষ নিয়োজিত থাকার পরও প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ শ্রেণি-পেশার মানুষের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। কারণ এদের কোনো সংগঠন নেই। বিষয়টি আমি উপলব্ধি করে আসছি। সেই সঙ্গে চিন্তা করেছি কৃষককে কীভাবে জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা যায়। চ্যানেল আইতে ২০০৪ সালে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান শুরু করার পর পরবর্তী বছরেই এর একটি পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নিই। ২০০৫ সালে জাতীয় বাজেটের আগে কৃষকের মাঠে গিয়ে যখন জানতে চাই এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা আছে কি না তখন বড়ই হতাশ হই। একজন কৃষকের কাছ থেকেও বাজেট সম্পর্কিত জানা-বোঝার কোনো নমুনা পাইনি। তখনই মনে হলো এ বিষয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আমার বা আমাদের অনেকটা করণীয় রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সাল থেকে শুরু হলো তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনা কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট। সন্ধ্যার পর প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে আলো জ্বেলে কয়েক হাজার কৃষকের সমাবেশ। সব পর্যায়ের কৃষক, খামারি ছাড়াও এই কার্যক্রমে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করারও ব্যবস্থা করি। আমন্ত্রণ জানাই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বুদ্ধিজীবীদের। এর মধ্য দিয়ে গত এক যুগে কৃষি, কৃষক, গ্রামীণ অর্থনীতি ও পল্লী জীবনের ভালোমন্দ, সমস্যা-সম্ভাবনা প্রতিটি বিষয়ের বার্ষিক একটি সমীকরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতি বছরই বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃষকের দাবি ও চাহিদার আলোকে প্রণীত একটি সুপারিশমালাও তুলে ধরা হচ্ছে। ভালো লাগে যখন দেখি এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষকদের মধ্যে অনেকখানি সচেতনতা এসেছে। একইভাবে, সরকারি নীতি পরিকল্পনায় এমন কিছু বিষয় স্থান পেয়েছে যা কৃষকের পক্ষে সরকারের কাছে পৌঁছানো কঠিন ছিল। গত অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪৮টি স্থানে প্রায় তিন লাখ কৃষকের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা করেছি।

এ বছর তেরোবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো তৃণমূল পর্যায়ে প্রাক-বাজেট আলোচনা কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট। দেশের ছয়টি স্থানে যথাক্রমে রাজশাহীর পবা, নোয়াখালীর সুবর্ণচর, চাঁদপুরের হাইমচর, ঝালকাঠি সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও রাজবাড়ী সদরে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় উল্লিখিত জেলাগুলো ছাড়াও সংলগ্ন আরও একাধিক জেলার ২০ হাজার কৃষক ও খামারি অংশগ্রহণ করেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে ঝালকাঠিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, রাজবাড়ীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, রাজশাহীর পবায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, চাঁদপুরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এমপি উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও আলোচনায় উল্লিখিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক অংশ নেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বাজেট প্রণেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন।

কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রম দেশের সামগ্রিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন তথা খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক পরিবর্তনে বহুমাত্রিকভাবে কাজ করে চলেছে। সরকারের মন্ত্রিপরিষদের প্রভাবশালী সদস্যবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সুবাদে দেশের কৃষি ও কৃষকের বর্তমান পরিস্থিতি, চাহিদা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে সম্যক অবহিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এটি তাদের রাজনীতি ও সরকার পরিচালনার নানাবিধ কার্যক্রমের ভিতর প্রভাব ফেলে মনে করি। তার মধ্য দিয়ে কৃষকের প্রত্যাশাগুলো, বক্তব্যগুলো কোনো না কোনোভাবে সরকারের কাছে ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছে। সেসব বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে। আমরা যার বাস্তব প্রতিফলন দেখছি।

কৃষকের জ্ঞান ও সচেতনতার প্রসার ঘটছে। কষিকাজে নিমগ্ন থেকে কৃষক ভুলেই ছিলেন দেশের নাগরিক হিসেবে অন্তত তার কাজের জায়গাটি নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে তার বোঝাপড়ার সুযোগ রয়েছে। এক সময় কৃষি কাজকে কৃষক তার একান্ত ব্যক্তিগত নিয়তি হিসেবে বিবেচনা করে গেছে। ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ কার্যক্রম শুরুর পর কৃষক অনেক বেশি উজ্জীবিত। তারা এখন তাদের স্বার্থের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিরূপণ করতে সমর্থ হয়েছেন, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

এ বছর কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমে কৃষকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমাদের জাতীয় সাফল্যগুলো। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তায় সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশ যে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেসব বিষয় আমরা তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর মধ্যে দেশের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর যে অবদান তা তুলে ধরেছি। এর ফলে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্বের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট— এ উত্থাপিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত সরকারের নেওয়া মোটাদাগে কয়েকটি পদক্ষেপ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথমত, কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমের শুরু থেকে অর্থাৎ ২০০৬ সাল থেকে আমাদের পর্যবেক্ষণ ছিল সরকারি খাদ্যসংগ্রহ অভিযানে সরাসরি কৃষকের অংশগ্রহণ নেই। অর্থাৎ কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে পারে না। বরাবরই এর সুফলভোগী হন মিল মালিক। বিষয়গুলো বারবার সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়। মাননীয় অর্থমন্ত্রী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান খাদ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন সদস্যের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। দীর্ঘদিনের অনিয়মের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেঙে এবার ঠিকই সম্ভব হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনা।

‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ কার্যক্রমের শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে উত্থাপিত হয়ে আসছিল শস্যবীমা। বিশেষ করে দুর্যোগে ফসলহানির পর কৃষক যাতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে, সে জন্য পৃথিবীর উন্নত কৃষিপ্রধান দেশের অনুশীলনগুলো অনুসরণ করে শস্যবীমা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কৃষকের দাবির ভিত্তিতে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করে আসছিলাম। এর ভিত্তিতে সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে ‘আবহাওয়ার সূচকভিত্তিক শস্যবীমা প্রকল্প’। বাস্তবায়ন করছে আবহাওয়া অধিদফতর ও সাধারণ বীমা করপোরেশন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তহবিলে দেশের তিনটি এলাকা রাজশাহী (খরাপ্রবণ), সিরাজগঞ্জ (বন্যাপ্রবণ) ও নোয়াখালী (ঘূর্ণিঝড়প্রবণ) জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে এ পাইলট প্রকল্পে। এ প্রকল্পের আওতায় তিনটি জেলায় ২০টি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২ হাজার কৃষককে এফজিডির মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পলিসি গ্রহণ করেছেন তিন জেলার ৬ হাজার ৭৭২ জন কৃষক। আগামী জুন মাসে এ পাইলট প্রকল্প শেষ হবে। আশা করি, সরকার এবারের বাজেটে এ শস্যবীমা কার্যক্রমকে দীর্ঘমেয়াদে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেবে।

কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট-এর দাবি ও সুপারিশের ভিত্তিতে পোলট্রি ও মাছের খাদ্যের আমদানিকৃত উপকরণের ওপর থেকে শুল্ক কর তুলে শূন্য করা হচ্ছে। এর ফলে খোলাবাজারে মাছ এবং মুরগির খাদ্যের দাম কমার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। সুফল পাচ্ছে খাদ্য উৎপাদন কারখানার মালিক পক্ষ। কার্যত তারা খাদ্যের দাম কমাচ্ছে না। যার ফলে খামারিরা সুফল পাচ্ছে না। গত কয়েক বছরের মতোই কৃষি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে এ প্রাক-বাজেট আলোচনায় একটি বিষয় খুব স্পষ্টভাবে উঠে আসছে। তা হলো, সরকারি উন্নয়ন পদক্ষেপ সম্পর্কে কৃষক তথা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সচেতনতা খুবই কম। দেশের ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদে, ৩২১টি পৌরসভায় ও সিটি করপোরেশনের ৪০৭টি ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, আইনি সহায়তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আইনের প্রয়োগসহ বেশির ভাগ সরকারি সেবাই সব পর্যায়ের জনগণের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত তথ্যের সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করে এ তথ্যসুবিধার অবকাঠামো তৈরি করলেও লক্ষ্য করেছি স্থানভেদে প্রান্তিক পর্যায়ে মাত্র তিন শতাংশ কৃষকও এ সেবা সম্পর্কে অবগত নন। সরকারি সহায়তা সম্পর্কে কৃষক তথা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ধারণা বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি প্রান্তিক জনগণের ভিতর সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

আগামী দিনের কৃষিতে উদ্যোক্তার সঙ্গে কৃষকের অংশীদারিত্বের ব্যাপারে শক্ত নীতিমালা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন সর্বাধুনিক ও উচ্চমানের যান্ত্রিক কৃষিতে পৌঁছে গেছে, সেখানে আমাদের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। কৃষিকে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য ভর্তুকি ও সহায়তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বের প্রবণতা অনুযায়ী আধুনিক কৃষির হিসেবে কৃষি জমিতেই বিনিয়োগকারীদের গ্রিন হাউস তৈরি হবে। কৃষকের জমির মূল্য বিবেচনায় উদ্যোক্তার পাশাপাশি এখানে বিনিয়োগকারী হিসেবে কৃষককে যুক্ত রাখার ক্ষেত্রে সরকারি একটি নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে কৃষকের নিজের জমিতে শ্রমিক হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকবে। ইতিমধ্যে বড় বড় উদ্যোক্তাদের কিনে নেওয়া কৃষি জমিতে কৃষকের শ্রমিক হয়ে পড়ার নজিরও বিগত সময়ে আমরা দেখেছি।

প্রাকৃতিক ও মানুষসৃষ্ট কারণে হাওরাঞ্চলে ফসলহানি বাড়ছে। গত ষাট বছরে এবার সবচেয়ে বেশি ফসলহানি ঘটেছে হাওর অঞ্চলে। হাওরের দ্বিতীয় ফসল মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে হাওরে এ ধরনের দুর্যোগের প্রবণতা বাড়ছে। এ বিবেচনায় হাওরের জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে হাওরের নদীগুলোর খনন করা। প্রতি বছর বাঁধ দেওয়া, প্রভাবশালী মহলের পুকুর খননসহ নানা কারণে হাওরগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

হাওরের প্রাকৃতিক অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে হাওরের উপযোগী ফসল জলজ খাদ্যশস্য উৎপাদন, প্রাকৃতিক ও বন্য জলজ ধান (জিজানিয়া জাত) এর সঙ্গে দেশীয় জাতগুলোর সংমিশ্রণে কার্যকর গবেষণা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে হাওরের উপযোগী ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ গবেষণা ও বরাদ্দ দরকার।

হাওর উন্নয়ন অধিদফতর নামে সরকারের একটি অধিদফতর চালু হয়েছে। এ জন্য আঞ্চলিক দফতরও গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ওই দফতরের কোনো কার্যক্রম নেই। দফতর চালুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া এবং সে সঙ্গে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

দেশের কৃষকের ফল-ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার স্বার্থে কৃষিপণ্যের উৎপাদন মৌসুমে আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি আমদানি শুল্ক বাড়ানো দরকার। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এবার প্রথমবারের মতো ভারতের মালদা থেকে আম আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার শুল্ক ১০ শতাংশের স্থলে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। দেশের উৎপাদিত আমের বাণিজ্যে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের এ সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। একইভাবে, শাকসবজি, মাছ, আদা, রসুন, পিয়াজসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও এ কাজটি করা দরকার। তাহলে দেশের কৃষক কিছুটা হলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কৃষকের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন এবং কৃষকদের দাবি-দাওয়া পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে গত কয়েক বছরে কৃষকের উত্থাপিত অনেক সংকটেরই সমাধান হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি রয়ে গেছে অপরিবর্তিত। সেসব ক্ষেত্রে কৃষক সমস্যার পুনরাবৃত্তি করেছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আসন্ন। এর আগে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে এবারের প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ চলতি সপ্তাহের কোনো এক সময় হস্তান্তর করার আশা রাখি। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার এসব সুপারিশের দিকে দৃষ্টি দেবে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

            [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর