সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সব দোষ ইঁদুর ও প্রকৃতির

পাউবোর কর্তারা সাধু যুধিষ্ঠির

হাওর এলাকায় লাখ লাখ মানুষের সর্বনাশের জন্য দায়ী ইঁদুর নামের নোংরা ক্ষুদ্র প্রাণী এবং প্রকৃতি। ‘বেতমিজ’ কৃষকদের দায়ও কোনো অংশে কম নয়। হাওর এলাকার সাংবার্ষিক ফসলহানির জন্য সব মানুষের আঙ্গুল যখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দিকে, তখন তারা নিজেদের দায় এড়াতে ঠাকুর ঘরে কে রে ‘আমি কলা খাই না’ জাতীয় জবাব দেওয়ার কসরত চালাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা নিজেদের পূত-পবিত্র রেখে সব অপকর্মের দায় চাপিয়েছেন ইঁদুর, প্রকৃতি এবং বোকা কৃষকের ওপর। পাউবোর অভিমত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার হাওরে আগাম অতিবৃষ্টি হয়েছে। আর কাটা ধান নির্বিঘ্নে নৌকায় করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁধের আটশ জায়গা কেটে ফেলে কৃষকেরা। এতেই ধান ডুবেছে, মাছ ও হাঁস মরেছে, ঘর ভেঙেছে। সবারই জানা, এবারের মতো ছয় জেলায় একযোগে না হলেও গত বছরও প্রায় একই ধরনের ঢল নেমেছিল সুনামগঞ্জে। নষ্ট হয়েছিল প্রায় দুই লাখ টন ধান। তখন পাউবো দোষ চাপিয়েছিল ইঁদুরের ওপর। দুষ্টু ইঁদুরের দল নাকি হাওরের বাঁধ ফুটো করে দিয়েছিল। আর ওই ফুটো দিয়ে পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে যায়। পাউবোর ‘ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না’ জাতীয় জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি যেমন হাওরবাসী তেমন দেশের আমজনতা। বলা হয়ে থাকে পাউবো মানেই লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র। হাওর এলাকায় পাউবোর পোস্টিং নিতে ব্যয় হয় লাখ লাখ টাকা এটি একটি ওপেন সিক্রেট। প্রতি বছর সরকারি অন্য সব সংস্থা বাঁধ নির্মাণে গাফিলতিকেই সাংবার্ষিক ফসলহানির মূল কারণ হিসেবে অভিহিত করলেও পাউবোর কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের সজ্জন সাধু যুধিষ্ঠির প্রমাণেই ব্যস্ত। তারা নিজেদের তদন্তে ইঁদুর ও প্রকৃতির ওপর দোষ চাপানোর কসরত করে চলছেন হাস্যকরভাবে। পাউবোর কর্তাদের আবিষ্কার ইঁদুর বাঁধে গর্ত করায় বাঁধ ভেঙে যায়। পাউবোর তদন্ত নিয়ে বোদ্ধাজনরা টিপ্পনি কাটলেও আমাদের বিশ্বাস হাওরের বাঁধ রক্ষায় ইঁদুর ধরার কল বসানোর কোনো বিকল্প নেই। পাউবোর ভয়াল ইঁদুরদের না ধরা পর্যন্ত হাওরের বিপর্যয় থেকেই যাবে। তা এড়ানোর কোনো উপায় থাকবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর