শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানুষ মানুষের জন্য

বিধ্বস্ত রাঙামাটিতে সম্প্রীতির বন্ধন

পাহাড় ধসে সবুজ নিসর্গের জনপদ রাঙামাটি বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। শতাধিক মানুষের বেঘোর মৃত্যু রাঙামাটির প্রাণচাঞ্চল্যকে কেড়ে নিয়েছে। পাহাড়ি বাঙালি দুই সম্প্রদায়ই শোকে আচ্ছন্ন। পাহাড়ি ঢলে ধস নামায় চট্টগ্রাম রাঙামাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে এক বা দুই মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর জওয়ানরা ধসের ফলে সড়কে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে তা অপসারণের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সহযোগিতা করছে পাহাড়ি বাঙালি দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। মানুষ মানুষের জন্য এ সত্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পাহাড় ধসের ত্রাণ কাজে। পাহাড়ে অনিয়ন্ত্রিত বসতি গড়ে তোলা, নির্বিচারে পাহাড় কাটা, গাছপালা নিধন এবং অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে পাহাড় ধসের বিপর্যয় নেমে আসছে। বারবার মৃত্যু হানা দিচ্ছে পাহাড়ের ঢালে বসত করা গরিব মানুষদের দিকে। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। পাহাড় ধসে মৃত্যু সাংবার্ষিক বিষয় হয়ে দাঁড়ালেও গত সোম ও মঙ্গলবারের পাহাড় ধস অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ছবির মতো সাজানো জনপদ রাঙামাটিকে যেন এবড়ো-থেবড়ো করে দিয়েছে কোনো ভয়াল দৈত্য। রাঙামাটি শুধু নয়, পার্বত্য তিন জেলায় এমন বিপর্যয়কর ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। মাত্র ক’দিন আগে লংগদু উপজেলায় এক বাঙালি যুবকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই সম্প্রদায়কে যেভাবে একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে তা এক আশাজাগানিয়া ঘটনা। বাঙালি পাহাড়ি একে অন্যের জন্য যেভাবে ছোটাছুটি করছেন, একে অন্যের শোকে যেভাবে কাঁদছেন তাতে পাহাড়ি এলাকার হৃদয়ের প্রতিছবিই যেন ফুটে উঠেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংকীর্ণতাকে হটিয়ে মানবিক সত্তাকে সামনে আসতে সাহায্য করেছে। এ সম্প্রীতি বহাল থাকলে পাহাড়ি এলাকার পুনর্বাসন যেমন দ্রুততর করা সম্ভব হবে তেমন গড়ে উঠবে সম্প্রীতির পরিবেশ।  আমরা আশা করব নিজেদের স্বার্থেই পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী পাহাড়ি বাঙালি সব সম্প্রদায়ের মানুষ সম্প্রীতির এ পরিবেশকে যে কোনো মূল্যে এগিয়ে নেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর