শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

সব উম্মতের জন্যই রোজা ছিল

হাফেজ কারি মাও. রফিক আহমদ ওসমানী

সব উম্মতের জন্যই রোজা ছিল

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওহে! তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করবে।  (সূরা বাকারাহ : ১৮৩।) এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, পূর্ববর্তী সব উম্মতের শরিয়তে রোজা ফরজ ছিল। আর এর উদ্দেশ্য ছিল তাকওয়া অর্জন। বুখারিতে হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। এ আয়াত নাজিল হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তাবেয়ী হাসান বসরী (রহ.) বলেন, ‘রমজানের রোজা পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ ছিল।’ এ সম্পর্কে একটি হাদিসও রয়েছে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের আগেও রমজানের রোজা ফরজ ছিল।’ (ইবনে কাসীর।) তাফসিরে মাজহারিতে কাজী সানাউল্লাহ (রহ.) লেখেন, ‘খ্রিস্টানদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ ছিল। গ্রীষ্মে পিপাসা আর শীতে ক্ষুধা— এ দুই কারণে রোজা রাখা তাদের কাছে কষ্টকর মনে হলো। খ্রিস্টান আলেমরা ঠিক করল তারা বসন্তকালে রোজা রাখবে আর ১০টি রোজা বাড়িয়ে রাখবে। এভাবে রোজার সংখ্যা দাঁড়াল চল্লিশে। এরপর এক বছর তাদের রাজা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা মানত করল রাজা সুস্থ হলে আর সাতটি রোজা বাড়িয়ে রাখবে।  মহান আল্লাহতায়ালা তাদের মানত পুরো করলেন। তারা আর তিনটি বাড়িয়ে মোট ৫০টি রোজা রাখতে লাগল। অন্য বর্ণনায় মুজাহিদ (রহ) বলেন, এক বছর মহামারী দেখা দেয়। তখন তারা এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ১০টি রোজার মানত করে। এরপর আর ১০টি বাড়িয়ে নেয়। এতে তাদের রোজা সংখ্যা হয়ে গেল ৬০, মতান্তরে ৭০। এত বেশি রোজা রাখা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।’ পূর্ববর্তীদের রোজার নিয়ম ছিল, এশার পর ঘুমিয়ে পড়লে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার এবং কামাচার হারাম হয়ে যেত। এভাবেই মাহে রমজানের রোজা শুরু হয়েছিল ইসলামী শরিয়তে। একবার হজরত ওমরসহ (রা.) একাধিক সাহাবি এ নিয়মটি ভঙ্গ করেন। ওমর (রা.) বাড়ি ফিরে দেখেন তার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়েছে। স্ত্রীকে জাগিয়ে তারা নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করে। আরেক সাহাবি খুব ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়লে পরদিন না খেয়ে রোজা রাখেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রোজা ভেঙে ফেলেন। বিষয়টি তাদের ভিতরে ভিতরে খুবই কষ্ট দিচ্ছিল। তখন আল্লাহতায়ালা নাজিল করেন, ‘তোমাদের জন্য রমজানের রাতে স্ত্রী গমন বৈধ করা হলো।  তারা তোমাদের পোশাক তোমরা তাদের পোশাক।’ (সূরা বাকারাহ : ১৮৭।)

লেখক : খতিব, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আবাসিক এলাকা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কুর্মিটোলা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর