শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

মানুষকে ভালোবাসলে মিলবে আল্লাহর ভালোবাসা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মানুষকে ভালোবাসলে মিলবে আল্লাহর ভালোবাসা

‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’। আসলে বলা উচিত, ‘ব্যবহারে মুসলমানের পরিচয়’। কোরআনের পাতায় পাতায় এবং রসুল (সা.)-এর জীবনের বাঁকে বাঁকে এ সত্যটিই উঠে এসেছে নানাভাবে। সুন্দর ব্যবহার, ভালো আচরণ ছড়িয়ে দেওয়া ছিল রসুল (সা.)-এর নবুয়াতি মিশন। রসুল (সা.) বলেছেন,  ‘আমাকে পাঠানোই হয়েছে মানুষকে ভালো আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার খুটিয়ে খুটিয়ে শেখানোর জন্য।’ (মুআত্তা মালেক) ‘তাই যে মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, আচরণের মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়, সে আমার চোখে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উম্মত। কেয়ামতের দিন এ ধরনের উম্মতকে আমার শাফায়াত ও হাউজে কাওসারের পানি থেকে দূরে থাকতে হবে। আর আমি নবী থেকে যে দূরে থাকবে জান্নাত তার কপাল থেকে চিরতরে মুছে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ।)

হে মুসলমান! ভালো ব্যবহার ও সুন্দর আচরণের গুরুত্ব বোঝা জরুরি। আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আদম সন্তানের আমলনামায় নামাজ রোজা হজ জাকাতের চেয়েও ভারী যে আমল হবে তা হলো সুন্দর ব্যবহার। আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মোটেই পছন্দ করে না, যে মুখের কথায় মানুষকে কষ্ট দেয়।’ (তিরমিজি) অন্য হাদিসে নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের চোখে রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় এবং দিনভর নফল সিয়াম পালনকারী সুফির মর্যাদা কতই না বেশি। অথচ আল্লাহর কাছে তারচেয়ে বেশি মর্যাদাবান ওই ব্যক্তি, যে মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করে এবং মানুষকে নিজের ব্যবহার দিয়ে কষ্ট দেয় না। (আবু দাউদ) সুন্দর ব্যবহার ও চারিত্রিক মাধুর্য যার আছে সে কতই না ভাগ্যবান মানুষ। তার কতই না মর্যাদা মহান আল্লাহপাকের কাছে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে, যার ব্যবহার সবচেয়ে ভালো, কোমল।’ (বুখারি ও মুসলিম) অন্যত্র নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা ওই ব্যক্তি, যার আচার-আচরণ মধুময়। ব্যবহার মিষ্টি। কথা নরম।’ (তাবারানি)।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষ। বাড়ছে মসজিদ। শবেবরাত-শবেকদর-জুমাসহ যে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাড়ছে মানুষের উপস্থিতি। কিন্তু বাড়ছে না সুন্দর আচরণের মুসলমান। মুসলমান নামাজ-রোজাকেই ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ‘সুন্দর ব্যবহার’— যা ছেড়ে দিলে নবীজীর শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হতে হবে, তা আজ আমরা ভুলতে বসেছি। আমরা আচার-ব্যবহার, কথাবার্তায় মানুষকে কেবল কষ্ট দিয়েই চলছি। নামাজ-রোজায় তুমি যত অগ্রগামীই হও না কেন হে মুসলমান, যদি ব্যবহার তোমার ভালো না হয় তবে তোমাকে আর কোনো ইবাদত এগিয়ে নেবে না। যে নবীর উম্মত বলে গর্ব কর সে নবীর আদর্শ কি আছে তোমার চরিত্রে? নবীজীর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলছেন, ‘হে নবী! আপনি তো মহান চরিত্রের অধিকারী। যুগে যুগে যারাই আপনার অনুসারী দাবি করবে, তাদেরও এই চরিত্র ধারণ করে আপনার খাঁটি উম্মত হতে হবে।’ (সূরা কলম এর ৩নং আয়াতের ভাব অনুবাদ)।

সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়। দিলের দোয়া লাভ করা যায়। টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, ভালো খাবার খাইয়েও মানুষের মন পাওয়া যায় না। একটু সুন্দর মিষ্টি হেসে কথা বললেই মানুষ খুশি হয়ে যায়। আপনার অনুপস্থিতিতে মন্তব্য করে, অমুক বড় ভালো মানুষ। কী সুন্দর ব্যবহার। মনকাড়া হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করে ‘ভাই কেমন আছেন?’ ঠিক এমনই একটি হাদিস এসেছে বুখারি শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘অঢেল সম্পদ বিলিয়েও তুমি মানুষের মন পাবে না, সুন্দর ব্যবহার ও মিষ্টি হাসি দিয়েই কেবল মানুষের হৃদয়ে আসন পেতে বসতে পারবে।’ (ফাতহুল বারী)। লেখা শেষ করার আগে আরেকটি হাদিস শুনিয়ে যাই। নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘যার ব্যবহার সুন্দর নয়, তোমরা বুঝে নিও তার ইমানও পরিচ্ছন্ন-বিশুদ্ধ নয়।’  (তিরমিজি)। তাই আসুন! আমরা কোমল ব্যবহারের অধিকারী হই। মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করি।  কোনো একটি সৃষ্টিও যেন আমার ব্যবহারে কষ্ট না পায়, এ হোক জীবনে ব্রত।

 

লেখক : মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর