শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাননীয় দুই নেত্রী অনেক তো হলো

মেজর জিল্লুর রহমান (অব.)

মাননীয় দুই নেত্রী অনেক তো হলো

দেশের মানুষ কি শুধু লীগভুক্ত আর বিএনপি জোটভুক্ত দ্বিধারায় বিভক্ত? দেশের মালিক-মোক্তার জনগণ ব্যাকরণহীন রাজনীতির নামে দল ভারী করার ঘটনা নীরব দর্শকের মতো উপভোগ করবে, নাকি রাজনীতির কোনো গ্রামার আছে তা শিখতে বাধ্য করবে। জনগণ জানে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির ছাত্ররা হন শিক্ষক। দ্বিতীয় সারির ছাত্ররা হন প্রশাসক। বাকিরা হন তুখোড় রাজনীতিক। কর্মজীবনে পেছনের সারি চালায় দ্বিতীয় সারি, দ্বিতীয় সারি চালায় প্রথম সারি। চোখ বন্ধ করলে তো প্রলয় বন্ধ হবে না। প্রতিবাদ করলে লীগ বলবে দেশদ্রোহী প্রতিক্রিয়াশীল। বিএনপি বলবে দালাল। মাঝখান থেকে আপনি নাকাল। নগদ নারায়ণ প্রাপ্তির মোহে অন্যায়ের প্রতিবাদের ভাষা দেশের মানুষ ভুলে গেছে। জুলুমের বিরুদ্ধে ম্রিয়মাণ, নিষ্প্রভ শুকনা গলার ভূমিকা কোনো জাতির মঙ্গল ডেকে আনে না। কোনো এক কবিতায় শুনলাম, যখন যা দেখেন, মনে যা আসে, যখন যা ইচ্ছা অমনি বলতে নেই। এমনি বাজারে ছেড়ে দিলে কুড়ি টাকার মুটেগিরি জুটত না যে বেটার, রাজনীতির সোনার কাঠির ছোঁয়ায় গাড়িবাড়ি করে মাথায় উঠে ব্রেক ড্যান্স দিচ্ছে। গলাটা উসখুস করবে, কুটকুট করবে, তবু বলতে নেই। তার পরও বলতে হবে জাতির স্বার্থে। টাউটদের কোনোভাবে আশকারা দেওয়া যাবে না। জাতীয়তাবাদী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জেনারেল (অব.) রুহুল আলমের ত্রাণবাহী গাড়িবহরের ওপর হামলা রাজনীতিকদের বন্ধ্যত্বের বার্তা বিদ্যুত্গতিতে ছড়িয়েছে। এককথায় গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে। এ হামলাই বলে দেয় রাজনীতি সব গুণ্ডাপাণ্ডার হাতে চলে গেছে। কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল, কি সুশীলসমাজ, কি সাধারণ মানুষ— বিবেকবান সবাইকে দগ্ধ করেছে। কিছু সাদা পোশাকধারী সনদপ্রাপ্ত শিক্ষিত লোক তাদের উসকে দিচ্ছে। ঘটনাটি দেশের সব নাগরিককে ব্যথিত করেছে। এমন দুজন সাদা মানুষ সব দলে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। তাদের ওপর আগ্রাসী হামলা লীগের কত লোকসান হলো এটা বুঝতে পেরেছেন ঝানু রাজনীতিক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত করে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাতীয় নেতার মতোই কথা বলেছেন। আর এক রাজনীতিক তিনি ওই সময় এলাকায় উপস্থিত থেকে খাল কেটে কুমির আনার মতো বিপদ ঘটিয়েছেন। তিনি বেশ হাস্যরসের খোরাক জাতিকে উপহার দিয়েছেন। তিনি মুখ ফসকে বললেন বিএনপি প্রযোজিত পরিচালিত নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এমন মোটা মাথার স্থূল চিন্তার বক্তারা কোটা প্রথায় মন্ত্রী হন কিনা জানতে ইচ্ছা করে। সাদেক হোসেন খোকার মাথা ফেটেছিল পুলিশি অ্যাকশনে, তখন লীগের এক মন্ত্রী বলেছিলেন গরু জবাইয়ের রক্ত মাথায় মাখিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর থামানো হয়েছে। সম্প্রতি বহরের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। প্রকাশ্যে হামলাকারীদের পশ্চাৎ পকেটে পিস্তল দেখা গেছে, সে আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলারও তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। বিএনপি বলেছিল বিরোধী দলের নেত্রী ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়েছিলেন সভায়। এ কথা পাগলেও বিশ্বাস করে না। দুই দলকে তাদের অপকর্মের জন্য জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে সচেতন নাগরিক। নির্ভীকরা সাহস হারিয়ে ফেলছেন। গতকাল খুলনার এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার অপরাধে মামলা খেয়েছেন। এমন শায়েস্তা করার রেডিমেড দৈত্য আইন হাতের নাগালে থাকলে প্রতিবাদের মুখে কুলুপ আঁটতে বেগ পেতে হয় না, হোক সে কয়লার মতো কালো আইন। উভয় দলের নেত্রী বিভিন্ন সময় হামলার শিকার হয়েছেন কিন্তু হামলাকারীদের জামাই আদরে দুই নেত্রী আঁচলের তলে ঠাঁই দিয়ে মাথায় তুলেছেন। আজ অবধি কারও বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি। অনেক ধাপ্পাবাজ মুজিবকোট পরে রাতারাতি লীগের নেতা বনে গেছেন। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের মিছিলে এক পুলিশ অফিসার উত্তরবঙ্গে গুলি চালিয়ে আইয়ুব খানকে গদিচ্যুত করে তিনি কিন্তু বহাল তবিয়তে চাকরিতেই ছিলেন। রাজনীতির নামে ক্ষমতার আস্ফাালনের জাঁতাকল থেকে জনগণকে মুক্তি দিন।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর