শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সিকান্দার শাহ

ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর তিন দিন পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিকান্দার শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজ্যের আমির ও সেনাপতিরা সিকান্দার শাহকে সিংহাসনে আরোহণের ব্যাপারে যথেষ্ট সহায়তা করেছিলেন। ফলে সিংহাসন নিয়ে কোনো রক্তপাত ঘটেনি। ফিরোজ শাহ তুঘলক যখন বঙ্গে অভিযান করেন, তখন সিকান্দার শাহ পাণ্ডুয়ার শাসনভার লাভ করেছিলেন। এ সময়ই তিনি ফিরোজ শাহের হাতে বন্দী হন এবং পরে ইলিয়াস শাহ ও ফিরোজ শাহের সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি মুক্তিলাভ করেছিলেন। অতঃপর তিনি পিতার অনুমতিক্রমে সোনারগাঁ শাসন করতে থাকেন। ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস শাহের মৃত্যু হলে তিনি বাংলার সিংহাসনে উপবিষ্ট হলেন।

 

সিকান্দার শাহ তার পিতার মতো যোগ্য, পরাক্রমশালী, সাহসী এবং প্রজাহিতৈষী নরপতি ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণ করেন। দিল্লির সঙ্গে বিবাদ করে স্বীয় ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করা কিংবা অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব নয়, তা তিনি বিলক্ষণ বুঝেছিলেন। তাই সিংহাসনে আরোহণের পরই তিনি আলম খান নামক জনৈক রাজদূতকে দিল্লির দরবারে প্রেরণ করেছিলেন। এর কয়েক মাস পর তিনি দিল্লির রাজদূত মালিক সাইফউদ্দিনকে পাঁচটি হাতি উপঢৌকন দিয়ে দিল্লির রাজদরবারে পাঠান। দিল্লির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখাই ছিল সিকান্দার শাহের উদ্দেশ্য। কিন্তু তার সব প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

১৩৫৩-৫৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান ফিরোজ শাহ বঙ্গের বিরুদ্ধে অভিযান করেন। সিকান্দর শাহ পিতার কৌশল অনুসরণ করে একডালা দুর্গে আশ্রয় নিলে একডালা দুর্গ অবরুদ্ধ হলো। দিল্লির সুলতান দুর্গ অধিকার করতে ব্যর্থ হলেন। অবশেষে ফিরোজ তুঘলক ও সিকান্দার শাহের মধ্যে সন্ধি হলো। সন্ধির শর্তানুসারে স্থির হলো—

ক. ফিরোজ শাহ তুঘলক যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সিকান্দার শাহের কাছ থেকে ৪০টি হাতি এবং অনেক মূল্যবান উপঢৌকন লাভ করবেন।

খ. জাফর খানকে সোনারগাঁয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

গ. সিকান্দার শাহ দিল্লিতে নিয়মিত বার্ষিক কর প্রদান করবেন।

সন্ধি চুক্তি সম্পাদনের পর ফিরোজ শাহ তুঘলক দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এই সময় থেকে প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত বঙ্গদেশ সম্পূর্ণরূপে দিল্লির কর্তৃত্বমুক্ত ছিল।

সিকান্দার শাহ একজন সুদক্ষ শাসক ছিলেন। তার আমলে দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিনি একজন শিল্পানুরাগী সুলতান ছিলেন। পাণ্ডুয়ার আদিনা মসজিদ, পীর সিরাজউদ্দিনের মসজিদ ও সমাধি, গৌড়ের কোতোয়ালি দরোজা ও গঙ্গারামপুরের মোল্লা আতার মসজিদ তার পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত হয়েছিল। এসব নির্মাণকাজে সিকান্দার শাহের স্থাপত্যশিল্পের প্রতি অনুরাগের পরিচয় বহন করে। তার আমলের বিভিন্ন ধরনের বহুসংখ্যক মুদ্রা পাওয়া গেছে; এসব মুদ্রা তার শাসনকালের সাক্ষ্য।           

জাফর খান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর