বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের সার্বভৌম অবস্থান কাম্য

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে দেশের বিচার বিভাগ এখন সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন। হাই কোর্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে যে রায় দিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আপিল করলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ কিছু পর্যবেক্ষণসহ তা খারিজ করে দেয়। এর ফলে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা আগের মতো বিচার বিভাগের হাতেই ন্যস্ত থাকবে। স্মর্তব্য, ২০১৪ সালে সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হলে তা বিতর্কের জন্ম দেয়। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ষোড়শ সংশোধনী কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে হাই কোর্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিলের শুনানিতে ১০ জন অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। এর মধ্যে ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মত দেন বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ফিদা এম কামাল, এ এফ হাসান আরিফ, এম আই ফারুকী, এ জে মোহাম্মদ আলী। তবে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন আজমালুল হোসেন কিউসি। শুনানি শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাত সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিলটি সর্বসম্মতভাবে খারিজের রায় দেন। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত ছিল। জেনারেল জিয়ার শাসনামলে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৪ সালের ষোড়শ সংশোধনীতে সে ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। সন্দেহ নেই, ভারত-শ্রীলঙ্কা-মালয়েশিয়াসহ দুনিয়ার বহু দেশে সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। গণতান্ত্রিক চেতনার দিক থেকে তা অসঙ্গতও নয়।  কিন্তু বেশ কিছু দেশে এ নিয়ে সমস্যারও উদ্ভব হয়েছে।  রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের আস্থার সম্পর্ক ও সার্বভৌম অবস্থানের স্বার্থেই বিচারক অপসারণের ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে থাকার বিষয়টি প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর