এই সেই জীবন বিশ্বাসী গ্রাম যেখানে শায়িত আছেন স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবহমান বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবহমান বাংলার শাশ্বত জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে, সবার স্মৃতিতে অম্লান অমর হয়ে, এ ছোট্ট গ্রামটিতে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাতেই হয়তো একদিন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন তার সেই কবিতাটি লিখেছিলেন—
তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে
আমাদের ছোট গাঁয়গাছের ছায়ার লতায় পাতায়
উদাসী বনের বায়।
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গৃহখানি রহিয়াছে ভরি
মায়ের বুকেতে বোনের আদরে
ভায়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই— যাবে মোর সাথে
আমাদের ছোট গাঁয়।
এই সেই গ্রাম, নাম তার টুঙ্গিপাড়া। এ গ্রামটিতেই জন্ম তার, আর এখানেই শায়িত থেকে তিনি বুকে জড়িয়ে রেখেছেন এদেশের ১৬ কোটি মানুষকে, যাদের তিনি আপন করে নিয়েছেন নিজের জীবন উৎসর্গ করে। রয়েছেন গ্রামবাংলার, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশার মাঝে সহজ-সরল মানুষগুলোর চিরসঙ্গী হয়ে। পল্লীর গ্রামীণ জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছেন তিনি সাধারণ জীবনের মাঝে অসাধারণ প্রতীক হয়ে। একদিন দরিদ্র পল্লীবাসীর সাদামাটা জীবন তার নিজের জীবনের কমল-হীরার দ্যুতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তিনি ছিলেন কালজয়ী মহামানব, সাধারণ মানুষের আশা-নিরাশা, স্বপ্ন-বাস্তবতা, আনন্দ-বেদনার মূর্ত প্রতিরূপ।
এমন একদিন ছিল যেদিন বাংলার দুঃখিনী মা শত চেষ্টা করেও দারিদ্র্য ও ব্যাধির করাল গ্রাস থেকে তার স্নেহের ধনকে বাঁচাতে পারেনি। কবির ভাষায়—
পার্শ্বে জ্বলিয়া মাটির প্রদীপ
বাতাসে জমায় খেল
আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার
ফুরায়ে এসেছে তেল।
একদিন এ করুণ পরাজয় ছিল বাংলার গ্রামীণ জীবনের প্রতিদিনের অমোঘ পরিণতি, ছিল বঞ্চনা আর শাসন শোষণ, দারিদ্র্য, অভাব অনটন আর ব্যথা বিহ্বল করুণ অসহায়তা। তারপর সেদিন গ্রাম্য মানুষটির স্পর্শে গ্রামীণ জীবন থেকে এক নতুন প্রত্যাশায় প্রতিভাত হয়ে উঠেছিল। তিনিই বলেছিলেন, গ্রামই বাংলাদেশের প্রাণ, বলেছিলেন, গ্রামের মানুষের ভাগ্য ফেরানোর কথা। তিনি গ্রামের মানুষের আনন্দ-উল্লাসকে অমূল্য মানবিক সত্তাকে আপন সত্তা বলে গ্রহণ করেছিলেন। তাই তো তিনি গ্রামকেই বেছে নিয়েছেন তার চিরস্থায়ী আবাসস্থল হিসেবে। তিনি তার নিজস্ব জীবন প্রবাহের মাঝে তুলে ধরেছিলেন দারিদ্র্য, শোক-দুঃখ জর্জরিত অথচ জীবনের জয়গানে ভরপুর পল্লী বাংলার নিত্যদিনের কথা। মানুষের প্রতি অটল বিশ্বাস-ভালোবাসার মহামন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে একমাত্র তিনিই সমগ্র জাতিকে এক ঐক্যবদ্ধ চেতনায় একই মোহনায় একত্রিত করেছিলেন।
তাই চলুন ১৫ আগস্টের প্রাক্কালে সবাই ওই ছোট্ট গ্রামটিতে সমবেত হয়ে দোয়া করি।
হাত জোড় করে দোয়া চাই সবে
আয় খোদা দয়াময়
জাতির পিতার তরেতে যেন
বেহেশত নসিব হয়।
টুঙ্গিপাড়ার এ কবরটি হোক বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক। আজ জাতীয় ঐক্যই আমাদের সবার বড় প্রয়োজন।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।