শিরোনাম
সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নামাজের ফরজ ওয়াজিব সুন্নত মুস্তাহাব

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

নামাজের কিছু ফরজ আছে। ওয়াজিব আছে, সুন্নত আছে এবং মুস্তাহাব আছে। এগুলো ঠিকমতো আদায় করলে দুটি বিশেষ লাভ আছে। ১. নামাজের ভিতর রুকুতে গিয়ে রুকুর কথা চিন্তা করবে, সেজদায় গিয়ে সেজদার কথা চিন্তা করবে, ফরজ আদায়ের সময় ফরজের কথা চিন্তা করবে, ওয়াজিব আদায়ের সময় ওয়াজিবের কথা চিন্তা করবে, সুন্নত আদায়ের সময় সুন্নতের কথা চিন্তা করবে, মুস্তাহাব আদায়ের সময় মুস্তাহাবের কথা চিন্তা করবে, নামাজের ভিতর এগুলো নিয়ে চিন্তা করার ফলে মন অন্য কোনো দিকে যাওয়ার সুযোগই পাবে না। মনে বাইরের কোনো কাজের কথা স্মরণ  হবে না।

বর্তমানে আমরা যেহেতু নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাবের প্রতি কোনো খেয়ালই করি না বরং অন্যরা নামাজ পড়ছে দেখে নিজেরা নামাজ পড়ি। অন্যরা রুকু সেজদা করছে দেখে তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও রুকু-সেজদা করি তাই আমাদের মন নামাজে থাকে না। মন শুধু অন্যদিকে ছুটে বেড়ায়। ২. ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত-মুস্তাহাব এগুলো হচ্ছে নামাজের অত্যাবশ্যকীয় মাসায়ালা। এ সবগুলো মাসায়ালা বিদ্যমান থাকলে নামাজের মাঝে ইখলাস এবং খুশু-খুজু সৃষ্টি হবে। তাই যে নামাজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত-মুস্তাহাব ঠিকমতো পালন করা হয় না, তাতে খুশু-খুজু এবং মনোযোগ সৃষ্টি হয় না। যে নামাজে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত-মুস্তাহাব ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করা হয় সেই নামাজ বস্তুত, হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নামাজের ন্যায় খুশু-খুজু ও ইখলাসওয়ালা নামাজে পরিণত হয়। এক যুদ্ধে হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর পায়ে তীর বিঁধলে কিছুতেই তা খোলা সম্ভাব হচ্ছিল না। তীর ধরতেই তিনি ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠতেন। প্রচণ্ড ব্যথায় পা ফুলে যাচ্ছে। অবশেষে হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সাথীদের বললেন, আমি যখন নামাজে দাঁড়াব, তখন আমি নামাজে থাকা অবস্থাতেই তোমরা তীরটি খুলে নিও। তাই করা হলো। তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে এমনভাবে আল্লাহর ধ্যানমগ্ন হলেন যে, সজোরে টান দিয়ে তীরটি খুলে ফেলা হলো, অথচ তিনি বিন্দুমাত্রও টের পাননি। কারণ তারা ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত-মুস্তাহাবগুলো যথাযথভাবে আদায় করে নামাজ পড়তেন। ফলে তারা আল্লাহর ধ্যানে এমনভাবে মত্ত হয়ে পড়তেন যে, নামাজে দাঁড়ানোর পর দুনিয়াবি কোনো কথা তাদের স্মরণই হতো না। এক সাহাবিকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট দোয়ার শিক্ষা দিয়ে বলেছিলেন, এই দোয়াটি তুমি সব সময় পড়বে, তাতে নামাজের প্রতি তোমার মনোযোগ সৃষ্টি হবে। তোমার নামাজে খুশু-খুজু আসবে। দোয়াটি হচ্ছে— ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত ক্বলবি আলা দীনিকা’ অর্থাৎ : হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে দ্বীনের কাজে লাগিয়ে দাও। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে নামাজের ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নত-মুস্তাহাবগুলোকে যথাযথভাবে আদায়করত পূর্ণ ইখলাস ও খুশু-খুজু সহকারে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর