মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী : সমস্যা এবং সমাধান

ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী : সমস্যা এবং সমাধান

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে লাখ লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকেই আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিপীড়নের শিকার হয়ে আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর ভার এসে পড়েছে বাংলাদেশের ওপর।

মিয়ানমারের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। এ দেশের যেমন আদি সংস্কৃতি রয়েছে এবং তা বিকশিত হয়েছে, তেমন মৌর্য-গুপ্ত শাসনামলে ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা একে প্রভাবিত করেছে। মিয়ানমার থেকে লোকজন যেমন বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছে, তেমন বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও লোকজন মিয়ানমারে গেছে। আরাকান রাজ্য ১৪৩০ সালে ইসলাম ধর্মাবলম্বী শাসকের অধীনে ছিল। পরে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী শাসকদের অধীন চলে যায়। মোগল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা আরাকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর দিল্লির সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর রেঙ্গুনে নির্বাসিত শেষ জীবন কাটান। ভারতীয় প্রভাবে একসময় এ দেশের নাম ছিল ব্রহ্মদেশ। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশের হাতে সর্বশেষ রাজা পরাজিত হন। অবসান হয় বৌদ্ধ রাজতন্ত্রের এবং সূচনা হয় দীর্ঘমেয়াদি ঔপনিবেশিক শাসনের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান দেশটি দখল করে নেয়। প্রসঙ্গত, ভারতবর্ষের মহান স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিয়ানমার হয়ে ভারতের ইনফল পর্যন্ত এসেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের সময় দেশটির নামকরণ হয় বার্মা।

সামরিক সরকার ১৯৮৯ সালে দেশটির নাম পরিবর্তন করে মিয়ানমার রাখে। মিয়ানমারের জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। এর মধ্যে ৮৯ শতাংশ বৌদ্ধ, ৫ শতাংশ মুসলিম, ৪ শতাংশ খ্রিস্টান ও ২ শতাংশ হিন্দুধর্মাবলম্বী। এ দেশে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মি জনগোষ্ঠী জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ। নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে ১৩৫টি নৃগোষ্ঠী রয়েছে। যারা জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে শান, কারান, চিন, মন, রাখাইন, কাহিস ও তাইয়া জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিকে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা জানি, আধুনিক জাতি-রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরস্পরের পরিপূরক। যার বিকাশ ঘটছে প্রায় ৩০০ বছর ধরে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পৃথিবীকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে, পৃথিবী হয়েছে অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু এই ব্যবস্থার ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতার দিক হলো জাতি-রাষ্ট্রে যেসব সংখ্যালঘু জাতীয় ও ধর্মীয় গোষ্ঠী বাস করে, তাদের অনেক ক্ষেত্রে হিসাবের মধ্যে নেওয়া হয় না। যেসব রাষ্ট্র এই সংখ্যালঘু জাতীয় ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করতে পেরেছে এবং সংস্কৃতি বিকাশে সুযোগ করে দিয়েছে, সেসব দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।

দেশটির অবিসংবাদিত নেতা অং সান এবং তার কয়েকজন বিশিষ্ট সহযোগী স্বাধীনতার প্রাক্কালে গুপ্তহত্যার শিকার হন। ১৯৬২ সালে সেনাপ্রধান নে উইন ক্ষমতা দখল করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে ব্যাপক গণআন্দোলন হয়। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি জয়লাভ করলেও সেনা শাসনের অবসান হয়নি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি আবার বিরাট সাফল্য অর্জন করে। সেনাসমর্থিত বর্তমান সংবিধানে পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, সীমান্ত নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ও সেনাদের হাতে সমর্পিত রয়েছে। এটা মেনেই অং সান সু চি স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনের সময় সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি।

মিয়ানমারের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধও করেছে। ৮টি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ৭টির সঙ্গে আলোচনা চলছে। দেশে ১৪টি প্রদেশ রয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম সমস্যার সমাধানের চেষ্টা হয়নি। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের বেড়াজালে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ২০১২ সালেও ব্যাপক দাঙ্গা হয়েছে। বিগত নির্বাচনে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ১৯৭৮ সাল থেকেই নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের বিতাড়ন করা হচ্ছে। এরা মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত ও কিছু হিন্দুও রয়েছে। তারা অধিকারহীন অবস্থায় নিপীড়নের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে তাদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ২০১৫ সালের আদমশুমারি থেকে বিরাটসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে বিদ্রোহী সংগঠন আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) অতর্কিত হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযানের নামে হত্যা, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর ফলে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। প্রায় ২ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আর্সা এর আগে ফেইথ মুভমেন্ট বা আরাখা আল ইয়াখিন নামে তত্পরতা চালাত। আল ইয়াখিন গত বছরের অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসে। সংগঠনটি মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা এবং তারা আইএসআইর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আতাউল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা। যার জন্ম করাচিতে। আল ইয়াখিন চলতি বছর আরসা নাম ধারণ করে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে। পাকিস্তানে ৩ লাখ, সৌদি আরবে ২ লাখ, মালয়েশিয়ায় দেড় লাখ ও ভারতে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এ ছাড়া ইউএই, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে। মিয়ানমারে এখনো ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আমরা জানি, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি দ্বারা মিয়ানমার প্রভাবিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের সময় বার্মা উপমহাদেশের সঙ্গে অধিভুক্ত হয়। ১৯৩৭ সালে বার্মা পৃথক প্রশাসনের আওতায় আসে। বিভিন্ন সময় একদিকে যেমন মিয়ানমারের লোক এই উপমহাদেশের অন্য অঞ্চলে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে; আবার এই উপমহাদেশের অন্য অঞ্চলের লোকজনও মিয়ানমারে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। ১৯৪৮ সালে দেশটি স্বাধীনতার প্রাক্কালে অং সানসহ তার সহযোগীদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে। ১৯৬২ সাল থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। সামরিক শাসকশ্রেণি দমন-পীড়ন, সমঝোতা ও ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেও জাতীয় ঐক্য জোরদার করতে পারেনি। সামরিক শাসনের অধীনে প্রণীত শাসনতন্ত্রের আওতায় ২০১০ সাল থেকে সংস্কার কর্মসূচি চলছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। আশা করা গিয়েছিল গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে; কিন্তু বিগত কয়েক বছরের কর্মকাণ্ড থেকে প্রমাণিত হয়, দেশ গতানুগতিকভাবে চলছে। গণতন্ত্রের বিকাশ হচ্ছে না। উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী মনোভাব প্রাধান্য পাচ্ছে। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হচ্ছে না। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ অন্য ধর্মাবলম্বীকে ন্যূনতম নাগরিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে এবং নিপীড়ন চলছে। বিগত এক মাসে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় ৪ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ হিন্দু রোহিঙ্গাও রয়েছে। ১৯৭৮ সাল থেকেই এই ধারা ব্যাপকভাবে অব্যাহত থাকলেও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না।

২৫ আগস্ট আরসার ৩০টি চৌকিতে হামলা এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে সাড়ে ৪ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে এবং সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মিয়ানমারকে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ ওআইসিভুক্ত দেশগুলো এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য করণীয় বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিত্সার ব্যবস্থা করছে এবং নিবন্ধের কাজও চলছে। জাতীয় সংসদ এই নৃশংস ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সমস্যা মিয়ানমারের, তাদেরই ফিরিয়ে নিয়ে স্থায়ী সমাধান করতে হবে এবং কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন এ ব্যাপারে ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।’

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ একত্রে লড়াই করেছে। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশই আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য সার্ক ও বিমসটেক গঠিত হয়েছে। ভারতে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিকটতম প্রতিবেশী দেশ। মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। লোকসংখ্যার তুলনায় আয়তন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেনাশাসনের সময় বৃহৎ দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র চীনই তখন মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। বিগত কয়েক বছরে বিশেষ করে সংস্কার কর্মসূচির পর ভারতের সঙ্গে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে একত্রে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্ব ও জাপান বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রাথমিক শর্ত মিয়ানমারে বসবাসরত সব জনগোষ্ঠীর সমঅধিকার, সমমর্যাদা নিশ্চিত করে ঐক্য ও সংহতি জোরদার করতে হবে; যা আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাথমিক শর্ত। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এভাবেই এগিয়ে চলছে এবং অগ্রগতি অর্জন করছে। মিয়ানমারের যেসব অঞ্চলে সংঘাত রয়েছে এর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। শান্তিকামী জনগণ মনে করে, কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ সমস্যা সমাধান করবে না; বরং আরও জটিল করবে। বিশ্ব আজ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সব ধরনের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে।’ তবে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। যেখানে তাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়েছে। একে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হতে হবে— এটাই সবার কাম্য।

লেখক : সাবেক কূটনীতিক।

সর্বশেষ খবর