শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশুরার রোজার ফজিলত

মুফতি আবু হোরাইরা রায়পুরী

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জাহিলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা রাখত। মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের আগে আশুরার রোজা রাখতেন। মদিনায় হিজরতের পর নিজেও এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদেরও রাখার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে তিনি তা ছেড়ে দেন। এরপর থেকে যার ইচ্ছা রাখত, যার ইচ্ছা রাখত না (মা সাবাতা বিস সুন্নাহ)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) মদিনায় এসে ইহুদিদের আশুরার রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এটা কিসের রোজা রাখ? তারা উত্তরে বলল, আশুরা একটি বড় দিন। এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তিদান করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিল। ফলে মুসা (আ.) ওই দিন রোজা রেখেছিলেন। আর আমরা তার অনুকরণ করে এ রোজা রেখে থাকি। মহানবী (সা.) তাদের বললেন, তোমাদের তুলনায় মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে আমাদের হক বেশি। অতএব, মহানবী (সা.) নিজে আশুরার রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রাখার নির্দেশ দিলেন। (মিশকাত)

অধিকাংশ উলামার মতে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ায় আশুরার রোজা রহিত হয়ে যায়। তবে নফল রোজা হিসেবে এর অনেক ফজিলত রয়েছে। অর্থাৎ আশুরার রোজার ফলে অতীতের এক বছরের সমস্ত সগিরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়। উলামাদের মতে, শুধু আশুরার দিন একটি রোজা রাখা মাকরুহ। কেননা, এতে ইহুদিরাও রোজা রাখে বিধায় তাদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন আশুরার রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সাহাবাদেরও রাখতে বললেন, তখন সাহাবারা আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এ দিনটিকে ইহুদিরা বড় মনে করে থাকে। উত্তরে মহানবী (সা.) বললেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখও রোজা রাখব। (মিশকাত) মহানবী (সা.) আরও বলেন, তোমরা আশুরায় রোজা রাখ এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করে এর আগে এবং পরে একটি করে রোজা রাখ। (মা সাবাতা বিস সুন্নাহ)।

আল্লামা ইবনুল হুমাম (র.) বলেন, ১০ তারিখের সঙ্গে আগের এক দিন অথবা পরের একদিন মিলিয়ে রোজা রাখা মুস্তাহাব। শুধু ১০ তারিখের রোজা রাখা মাকরুহ। (মিরকাত)। বায়হাকিতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আশুরার দিন পরিবার-পরিজনের জন্য প্রশস্ত হাতে খরচ করবে, আল্লাহ তাকে সারা বছর সচ্ছল এবং প্রশস্ত রাখবেন। (মিশকাত)।

এ ছাড়া আশুরাকে কেন্দ্র করে যত ধরনের বাজে প্রথা প্রচলিত আছে, যেমন রাফেজিরা শোক পালন করে, বিলাপ করে হায় হুসাইন! হায় হুসাইন! বলতে থাকে। এমনিভাবে খারেজি সম্প্রদায় আহলে বায়আতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।  এসব কাজ থেকে দূরে থাকা উচিত। কেননা, এসব কাজ পরিত্যাগ করাই সুন্নাত। আল্লামা লাখলবি (র.) লিখেছেন, আশুরার দিন সহিহ হাদিস কর্তৃক সুন্নাত ও মুস্তাহাব হিসেবে প্রমাণিত রোজা পালন এবং অন্য হাদিসে প্রমাণিত পরিজনের জন্য প্রশস্ত হাতে খরচ করা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করা উচিত নয়।  (মাজমুয়ায়ে ফতোয়া)

লেখক : পরিচালক, ইস্পাহানী দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা, আগানগর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর