শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্ষুধা সূচকে অগ্রগতি

ভারত-পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে

সুকান্ত ভট্টাচার্যের অমর কবিতার পঙিক্ত ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়।’ ক্ষুধা যে কী ভয়ঙ্কর তা হাড়ে হাড়ে জানে বাংলাদেশের মানুষ। এক সময় দুর্ভিক্ষ আর মঙ্গার দেশ হিসেবে ছিল বাংলাদেশের পরিচিতি। শায়েস্তা খানের আমলে যখন এদেশে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত তখনো দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে বাংলার বাসিন্দারা। আর ব্রিটিশ আমলের দুই দুর্ভিক্ষে বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তান আমলেও ক্ষুধা তাড়িয়ে বেড়িয়েছে দেশবাসীকে। স্বাধীনতার পরও বন্যা ও ফসলহানির কারণে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। দুই দশক আগেও দেশের রংপুর বিভাগে মঙ্গা ছিল সাংবার্ষিক সমস্যা। স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দুই গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাওয়া এবং চাষযোগ্য জমি অর্ধেকে নেমে আসা সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ। জনপ্রতি খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আধাপেট হয়ে খাওয়ার নিয়তি থেকে রক্ষা পেয়েছে এ দেশের গরিব মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বৈশ্বিক ক্ষুধার হার সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল ১১৯টি দেশের মধ্যে গত বছর ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯০। এ বছর দুই ধাপ এগিয়ে ৮৮তম স্থানে দেখানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ক্ষুধা জয়ে বাংলাদেশের এই অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। জনসংখ্যার পুষ্টিহীনতা, শিশু মৃত্যুসহ চারটি সূচকের সমন্বয়ে প্রণীত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ক্ষুধার মাত্রা ২০০০ সালের চেয়ে ২৭ শতাংশ কমেছে। এই প্রতিবেদনে এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের স্থান ১০৭তম, পাকিস্তানের স্থান ১০৬তম ও ভারতের স্থান ১০০তম দেখানো হয়েছে। ভারতের অবস্থান গত বছর ছিল ৯৮। এ তিনটি দেশ ক্ষুধা সূচকে এশিয়ার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দেশ। বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে নেপাল ৭২তম, মিয়ানমার ৭৭তম, শ্রীলঙ্কা ৮৪তম এবং চীন ২৯তম। ক্ষুধা পরিহারে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ঘটনা।  তবে স্বীকার করতেই হবে এ ক্ষেত্রে ৮৭টি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ক্ষুধা জয়ে এগিয়ে যেতে হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি শূন্যের পর্যায়ে আনতে মনোনিবেশ করতে হবে।  ক্ষুধা জয়ে সেটিই প্রকৃষ্ট পথ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর