মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামের দৃষ্টিতে হাতপাতা ঘৃণ্য কাজ

যুবায়ের আহমাদ

চলার পথে প্রায়ই দান সংগ্রহকারীর মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় ইসলামের লেবাস বা অনুভূতি। কখনো দেখা যায়, সাহায্য প্রার্থী লোকটি নিজেকে ‘নওমুসলিম’ দাবি করে তাকে সাহায্যের আবেদন করেন। কখনো মসজিদ বা মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্যও যেখানে-সেখানে মানুষের কাছে হাতপাতা হয়। এর বাইরে রয়েছে একটি ব্যবসায়ী ভিক্ষুক শ্রেণি। চরম অলসতা ও কর্মবিমুখতার কারণে অভাবী এসব হতভাগ্য বিনা পুঁজির মাধ্যম হিসেবে নির্লজ্জভাবে বেছে নেয় ভিক্ষার পেশা। কৃত্রিমভাবে ভিক্ষুক সৃষ্টির বিষয়টিও প্রায়ই আসে মিডিয়ায়। বিকলাঙ্গ শিশু, প্রতিবন্ধী বা অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে মাধ্যম বানিয়ে চালিয়ে যান ভিক্ষাবাণিজ্য। ধোঁকাবাজির মাধ্যমে আবার সিন্ডিকেট করে একশ্রেণির লোক একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। যেখানে ভিক্ষা করাও একটা চাকরি। একজন ভিক্ষুক সারাদিন ভিক্ষা করে যা উপার্জন করে সেটা দিয়ে দিতে হয় মালিককে। 

ইসলামের লেবাস কিংবা অনুভূতিকে পুঁঁজি করে বিচিত্র কৌশলে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে দান সংগ্রহকারীরা। অথচ ইসলামে ভিক্ষা কিংবা কারও কাছে হাতপাতা একটি ঘৃণ্য কাজ। পৃথিবীর ধর্মগুলোর মধ্যে ইসলামই ভিক্ষা কিংবা কারও কাছে হাতপাতার বিষয়ে সবচেয়ে কঠোর অবস্থানে। হজরত সামুরা ইবনে জানদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ভিক্ষাবৃত্তি হলো ক্ষতস্বরূপ; এর দ্বারা মানুষ মুখমণ্ডলকে ক্ষতবিক্ষত করে’। (নাসায়ী: ৫/৯৭)। তাই তো রসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের কারও কাছে হাত না পাতার ব্যাপারে শপথ করিয়েছেন। হজরত আউফ ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘আমরা রসুলুল্লাহ (সা.) দরবারে নয়জন, আটজন কিংবা সাতজন ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন : তোমরা কি আল্লাহর রসুলের হাতে বায়াত গ্রহণ করবে না? অথচ আমরা মাত্রই আকাবায় বায়াত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা তো আপনার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন : তোমরা কি আল্লাহর রসুলের হাতে বায়াত গ্রহণ করবে না? আমরা তখন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম- হে রসুল! আমরা তো বায়াত গ্রহণ করেছি। এখন আবার কীসের বায়াত? তিনি বললেন, ‘এই মর্মে শপথ নাও, কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, আমিরের কথা মেনে চলবে। তারপর তিনি নিচু স্বরে একটি গোপন কথা বললেন, আর মানুষের কাছে কোনো কিছু চাইবে না।’ (মুসলিম: ২/৭২১)।

অন্যদিকে অভাব ছাড়া যদি কেউ কারও কাছে হাত পাতে তাহলে ইসলাম একে নিষিদ্ধ করে এর জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা করেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অভাব ব্যতীত ভিক্ষা করল সে যেন জাহান্নামের আগুন ভক্ষণ করল। (মুসনাদে আহমাদ: ২৯/৫১)। কিছু লোক আছে যাদের সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের সম্পদ বাড়ানোর জন্য অন্যের কাছে হাত পাতে। রসুলে করিম (সা.) তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য কারও কাছে ভিক্ষা চায় সে তো জাহান্নামের আগুন ভিক্ষা চায়। তার ইচ্ছা, সে চাইলে জাহান্নামের আগুন কম ভিক্ষা করতে পারে বেশিও ভিক্ষা করতে পারে। (ইবনে মাজা: ১/৫৮৯)।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর