শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বালখিল্যের রাজনীতির খিল খিল পরিণতি

গোলাম মাওলা রনি

বালখিল্যের রাজনীতির খিল খিল পরিণতি

আবহমান বাংলার বালকবেলার খেলাধুলার সঙ্গে দেশীয় রাজনীতির অদ্ভুত কতগুলো মিল রয়েছে। পরস্পরকে ধোঁকা দেওয়া, একে অন্যকে ছুঁয়ে দেওয়া কিংবা কুস্তির ছলে প্রতিপক্ষকে বেইজ্জতি করার পাঠ বালখিল্যের মাধ্যমে বাংলার বালকসমাজ খুব ছোটবেলায়ই রপ্ত করে থাকে। কানামাছি, গোল্লাছুট, বউচি, দাঁড়িয়াবান্ধা থেকে শুরু করে কুতকুত খেলা যেমন বালক-বালিকাদের অতীব প্রিয়, তেমনি বাঘ-হাতি, লুডু, ডাঙ্গুলির পাশাপাশি পুতুল খেলা খেলেনি এমন বালক-বালিকা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আপনি নিজেও হয়তো বাল্যকালে ওসব খেলা অনেক খেলেছেন কিন্তু আজ পরিণত বয়সে এসে অতীতের সেই স্মৃতি যখন প্রায় ভুলতে বসেছেন, ঠিক তখনই দেশের রাজনীতির কিছু ঘটনা হয়তো আপনাকে পুনরায় বালখিল্যের স্বাদ-আহ্লাদ ফিরিয়ে দিতে পারে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার আগে বালখিল্য সম্পর্কে সামান্য কিছু বলে নিই। বালক-বালিকারা যখন খেলাধুলা করে তখন প্রায়ই তারা নিয়ম-কানুন মানতে চায় না। দলের মধ্যকার সরদার-প্রকৃতির বালক কিংবা বেপরোয়া বালিকা সুযোগ পেলেই আইন-কানুন বদলানোর চেষ্টা করে। তারা পরাজিত হওয়ার পর বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করে অথবা খেলার শুরুতে নিজের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নানা ফন্দি-ফিকিরের পাশাপাশি অহেতুক হুমকি-ধমকি দিয়ে পরিবেশ অনুকূলে রাখার চেষ্টা করে। খেলার মাধ্যমে নির্মল আনন্দ লাভের পাশাপাশি নিজের কর্তৃত্ব জাহির, অন্যকে হেনস্তা করার দক্ষতা অর্জন এবং ফাঁকি দিয়ে বিজয়ী হওয়ার কূটকৌশলও তারা অর্জন করে। এসব বালক তাদের অবাধ্যতা, দুরন্তপনা এবং একগুঁয়েমি আচরণ দ্বারা যেমন অনেককে কষ্ট দেয়, তেমনি নিজেদের নির্বুদ্ধিতা দ্বারা লোক হাসানোর কাজটি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে প্রায় নিয়মিত করে থাকে। নানাবিধ কারণে পরিণত বয়সের লোকজন সময়-সুযোগ পেলে বালখিল্য থেকে ব্যাপক বিনোদন লাভ করে এবং বুদ্ধিমানেরা বিষয়টিতে মানব মনমানসিকতা ও চিন্তার উপকরণ খুঁজে বেড়ায়।

বালকবেলা নিয়ে আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই এক ধরনের মিথ কাজ করে। কেউ এটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে থাকেন। অনেকে আবার বালক-বালিকাদের নিষ্পাপ বা আগ-বাড়িয়ে দেবশিশু অভিধায় অভিষিক্ত করেন। ফলে তাদের ক্রীড়া-কৌতুক রঙ্গ-তামাশা, মেলামেশা, আড্ডা, আহার-বিহার ইত্যাদি নিয়ে মুরব্বিরা প্রায়ই মাথা ঘামান না। অথচ একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, প্রায় প্রতিটি বালক-বালিকা খেলাধুলা করতে গিয়ে কতটা নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও স্বার্থপরতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায়। তারা ঢিল মেরে মোরগ-মুরগির ঠ্যাং ভেঙে দেয়। খড়ের গাদায় আগুন লাগানো, অকারণে গাছের পাতা ছেঁড়া বা ডালপালা ভেঙে দেওয়া তাদের নিত্যনৈমত্তিক বিনোদনের বিষয়বস্তু। অন্যের গাছের তাল, বেল, নারিকেল, সুপারি চুরি করার পাশাপাশি আম, জাম, কলা, লিচু ইত্যাদি লোপাট করে পিতা-মাতার অর্থভাণ্ডারে হামলা চালানো তাদের কাছে কোনো বিষয়ই নয়।

বালক-বালিকারা অহেতুক কৌতূহল এবং অকারণ অস্থিরতা নিয়ে প্রায়ই বড়দের অনুকরণ করার চেষ্টা করে। তাদের গোপন কার্যাদি দেখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালায় এবং পরবর্তীতে নানারকম লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। পান খাওয়া, বিড়ি-সিগারেটে টান দেওয়া থেকে শুরু করে গাঁজানো তালের রস খেয়ে দুরন্তপনা করে বেড়ানো দস্যু ছেলে বা মেয়েটিকে নিয়ে এলাকাবাসীর ঘুম প্রায়ই হারাম হয়ে যায়।

বালকবেলার খাবার গ্রহণ এবং বর্জ্য ত্যাগে কোনো সংযম বা আব্রুর বালাই থাকে না। অন্যদিকে বালখিল্য করতে গিয়ে মনুষ্যবর্জ্যে কাপড়-চোপড় নষ্ট করেনি এমন বালক-বালিকা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাদের লাজ-লজ্জা, মান-অপমান যেমন অদ্ভুত প্রকৃতির হয়, তেমনি নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের বিপরীতে যে কারও বৃহৎ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে তাদের একটুও সংকোচ বোধ হয় না। আলোচনার এই পর্যায়ে আসুন আমরা রাজনীতির সঙ্গে বালখিল্যের একটি অন্ত্যমিল খোঁজার চেষ্টা করি। রাজনীতির বেশির ভাগ খেলোয়াড় সময় ও সুযোগ পেলে বালখিল্যে মেতে ওঠেন। অকারণ বক্তৃতা-বিবৃতি, অহেতুক দ্বন্দ্ব-ফেসাদ, ঝগড়া-ঝাঁটি এবং মূল্যহীন দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে কতিপয় রাজনীতির খেলোয়াড় নিজেদের বালকদের চেয়েও নিম্নস্তরে নামিয়ে আনেন। বালকরা যেমন প্রকাশ্যে আপন বীরত্ব প্রমাণের জন্য নিজের বস্ত্র উন্মোচন করে প্রতিপক্ষকে গোপন অস্ত্রের বিশালতা প্রদর্শন করে, ঠিক তেমনি পরিণত বয়সে বহু নামকরা রাজনীতিবিদ একই কর্মটি কীভাবে করেন তার বহু নমুনা আজও ইতিহাসের পাঠকদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে তোলে। এ বিষয়ে ইতিহাসের দুটি কাহিনী বলে আজকের শিরোনাম প্রসঙ্গে আলোচনা করব।

প্রথম কাহিনীটি ঘটেছিল দিল্লিতে। ঘটনার নায়ক ছিলেন পারস্য সম্রাট নাদির শাহ। কিংবদন্তির লেখক খুশবন্ত সিং তার বিখ্যাত ‘দিল্লি’ উপন্যাসে কাহিনীটি সংযোজন করেছেন। দ্বিতীয়টি ঘটেছিল চট্টগ্রামে। আর সেই ঘটনার নায়ক ছিলেন মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরী ওরফে ফকা চৌধুরী। বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার বিভিন্ন লেখায় কাহিনীটি একাধিকবার বর্ণনা করেছেন। সম্মানিত পাঠকদের কাছে আমি সেই কাহিনী দুটো পুনরায় বর্ণনা করলে আশা করি আপনাদের খারাপ লাগবে না। প্রথমেই নাদির শাহকে দিয়ে শুরু করা যাক। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম পরাক্রান্ত সম্রাট নাদির শাহ ইরানের সিংহাসনে আসীন হন ১৭৩৬ সালে। ইতিহাসবিদরা তাকে দ্বিতীয় আলেকজান্ডার বা পারস্যের নেপোলিয়ন বলে অভিহিত করেন।

নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে। দিল্লি দখলের পর তিনি শাহি প্রাসাদে উঠে পড়েন। দিল্লির দুর্বল মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহকে তিনি সিংহাসনচ্যুত না করে বরং দিল্লির রাজকোষ, ময়ূর সিংহাসন, কোহিনুর, দরিয়া-ই নূর প্রভৃতি মহামূল্যবান সম্পদ লুট করে পারস্যে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে মুহাম্মদ শাহ ৩০ হাজার নিরীহ দিল্লিবাসীর প্রাণহানি এবং বিভিন্ন যুদ্ধে প্রায় লক্ষাধিক ভারতীয় সৈন্যের আত্মত্যাগ সত্ত্বেও কেবল ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভে নাদির শাহকে জামাই আদরে দিল্লির রাজপ্রাসাদে বরণ করে নেন। নাদির শাহের সম্মানে মুঘল হেরেমের অভ্যন্তরে আয়োজন করা হয় নজিরবিহীন এক জৌলুসপূর্ণ জলসার। ভারতবর্ষের ইতিহাসে একমাত্র নাদির শাহ ছাড়া অন্য কোনো বিদেশি সম্রাট আক্রমণকারী সেনাপতি বা যুদ্ধজয়ী বাদশাহ ক্ষমতাসীন রাজা-বাদশাহ-সুলতান কিংবা সম্রাটের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারেননি।

নাদির শাহকে খুশি করার জন্য সম্রাট মুহাম্মদ শাহের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। সাম্রাজ্যের সেরা সংগীতশিল্পী, সেরা নর্তকী এবং শাহি হেরেমের অপূর্ব সুন্দরী ললনাদের জড় করা হয়েছিল সেই রাতের জলসায়। খানাপিনা, আলোকসজ্জা এবং সুন্দরীদের কলকাকলির সঙ্গে বাহারি সুগন্ধির মন-মাতানো সৌরভে কারও পক্ষে কল্পনাই করা সম্ভব ছিল না যে, আমন্ত্রিত অতিথি গত কয়েক মাসে ভারতবর্ষের লাখো মানুষকে হত্যা করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজকীয় ডাকাতি করতে যাচ্ছেন আর গৃহকর্তা তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ডাকাতকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

মুঘল হেরেমের সেই রাতের জলসায় সম্রাট নাদির শাহ এবং সম্রাট মুহাম্মদ শাহ পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে সুরা পান করছিলেন এবং দুই সম্রাটের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত আরামদায়ক জলসার শতরঞ্জির মাঝখানে সুন্দরী নর্তকীরা স্বল্পবসনে কামোদ্দীপক নৃত্য পরিবেশন করছিল। হঠাৎ কীসে কী হলো কে জানে— দুই সম্রাটই বেসামাল হয়ে বালখিল্য শুরু করলেন। মুহাম্মদ শাহ তার নিম্নাঙ্গের পোশাক ঢিলা করে দিয়ে তার প্রতিপক্ষকে কী যেন দেখানোর চেষ্টা করলেন। এ অবস্থায় নাদির শাহও বসে থাকলেন না। তিনিও একই রূপ ধারণ করে নিজের অঙ্গের স্ফীত অনুরাগের ভয়াল নড়াচড়া তার প্রতিপক্ষকে দেখিয়ে বোঝাতে চাইলেন, পারস্য জাতি সব দিক থেকেই ভারতীয়দের চেয়ে বড়!

নাদির শাহ মুহাম্মদ শাহকে বাদ দিয়ে এবার ফকা চৌধুরীর কথা বলি। আইয়ুব খাঁর আমলে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন। একবার আইয়ুব খান রাষ্ট্রীয় কাজে বিদেশ সফরে গেলে ফকা চৌধুরী পদাধিকারবলে কিছু দিনের জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নিয়ে তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আসেন এবং নিজ এলাকা চট্টগ্রামে আপন ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য বিশাল এক জনসভার আয়োজন করে হম্বিতম্বি মার্কা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ফকা চৌধুরীকে নিয়ে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। একদিকে তিনি যেমন তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন, অন্যদিকে তার বিরোধিতাকারীদের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না। ফলে সেদিনের জনসভায় হট্টগোলের সম্ভাবনা মাথায় রেখে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

সভামঞ্চে নিরাপদ দূরত্বে থেকে ফকা চৌধুরী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন, জনৈক দর্শক বার বার লুঙ্গি উঠিয়ে তাকে অপমান করার চেষ্টা করছে। বীভৎস সেই দৃশ্য দেখে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের মাথা গরম হয়ে গেল। তিনি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। ভুলে গেলেন স্থান-কাল-পাত্র। বালখিল্যের প্রবল অস্থিরতায় তিনি প্রকাশ্য জনসভায় হাজারো মানুষের সামনে নিজের ঢোলা পায়জামা উপরে তুলে বের করে আনলেন নিজের পৌরুষের চিহ্নটিকে! তারপর স্থানীয় ভাষায় গালি দিয়ে বললেন, আয়ারে চ্যাংদ্যাখানা। তোয়ার ইয়ার চাইতে আয়ার ইয়া বড়... হালার পুত হালা!

আপনি যদি উপরোক্ত ঘটনা দুটি পর্যালোচনা করেন, তবে নিশ্চয়ই বালখিল্যের রাজনীতির কতগুলো সুনির্দিষ্ট পরিণতি দেখতে পাবেন। আজকের শিরোনামে আমি সেই পরিণতি বোঝানোর জন্য খিল খিল শব্দ ব্যবহার করেছি। বাংলা ব্যাকরণে খিল শব্দের বহুমাত্রিক অর্থ রয়েছে। প্রথম অর্থটি হলো বিরান ভূমি যাতে চাষাবাদ করা যায় না। অন্যদিকে খিল খিলকে একত্র করে ল-এর নিচে একটি হসন্ত যোগ করলে অর্থ দাঁড়াবে ক্রমাগত বা অবিরত হাসি। রাজনীতিতে যদি বালখিল্য শুরু হয়ে যায়, তবে তার পরিণতিও হয়ে পড়ে দ্বিমুখী। প্রথমত, এটি চারদিকে নানারকম গুজব, কল্পকাহিনী এবং রঙ্গ-তামাশার বিস্তার ঘটায়। রাজনীতির মতো একটি গুরুগম্ভীর সৃজনশীল বিষয়কে মানুষের কাছে ঠাট্টা-মশকরা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। রাজনীতিবিদরা হয়ে পড়েন মানুষের কৌতুক ও বিনোদনের বস্তু। অনেকটা সার্কাসের ভাঁড় বা খেল-তামাশা দেখানো বিশেষ প্রাণীদের মতো।

বালখিল্যের রাজনীতির একটি ভয়ঙ্কর পরিণতি হলো, পুরো রাজনীতির মাঠ হয়ে ওঠে অনুর্বর, চাষাবাদ-অযোগ্য এবং বসবাসের অনুপযোগী বিষাক্ত ও বিরান ভূমির মতো। রাজনীতির মাঠে তখন প্রাণ থাকে না। চারদিকে শুধু হাহাকার, হতাশা এবং পানির জন্য আহাজারির শব্দ ভেসে বেড়ায়। ফলে রাজনীতির মাঠের দীপ্ত প্রাণের ভ্রমরেরা মরে-পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে আর তখন সেগুলো ভক্ষণ করার মতো মাংসাশী জানোয়ার পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে পচা লাশের প্রাকৃতিক সৎকার করার জন্য আকাশে বহুরূপী শকুনের আবির্ভাব ঘটে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

 

সর্বশেষ খবর