শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুঠোফোনে গণমাধ্যম

শাইখ সিরাজ

মুঠোফোনে গণমাধ্যম

২০১৩ সালে পারিবারিক সফরে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার সিলিকন ভ্যালি ছিল আমাদের গন্তব্য। সঙ্গে ছিল আমার বড় ছেলে অয়ন আর ছোট ছেলে বিজয়। সিলিকন ভ্যালিতে বিখ্যাত সব অফিস রয়েছে যাদের খ্যাতি বিশ্বময়— অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল, ইনটেল, ইয়াহু, লিঙ্কডইন, টুইটার, ইউটিউব- এমন অনেক। আমার চেয়ে আমার দুই সন্তানের আগ্রহই ছিল বেশি। সেখানে গিয়ে বাংলাদেশি কিছু তরুণের সঙ্গেও পরিচয় হয়েছিল। বেশকিছু সময় তাদের সঙ্গে কাটানোর স্মৃতি রয়েছে। তখন গুগল গ্লাস নিয়ে আমাদের অনেক আলাপ হয়েছিল। তারা খুব আগ্রহ নিয়েই আমার মতামত জানতে চাইছিল। মানুষের নিজের সক্ষমতা যেন হেরে যাচ্ছে এই গ্লাসের কাছে, এমনটাই বলেছিলাম তাদের। মানুষ তার নিজের মেধা খাটাবে না, আর গুগল গ্লাস রাস্তা খুঁজে দেবে, দোকানপাট বের করে দেবে— এমনটি আমি মানতে পারিনি তখন। একজন মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এ মুহূর্তে বাইরের তাপমাত্রা কত আছে তা অনুধাবন করবে। যদি গুগল চশমা আমাকে বলে দেয় বাইরের তাপমাত্রা কত, তাহলে আমার নিজস্ব বোধশক্তি তো ক্ষুণ্ন হলো। এমনটাই আমার নিজস্ব মত। পরে জেনেছি মানুষ তেমনভাবে গুগল গ্লাসের এই কনসেপ্ট গ্রহণ করেনি। সবকিছুই প্রযুক্তির ওপর ছেড়ে দিতে নেই। আল্লাহ মানুষকে যে জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাও চর্চা করতে হবে। সিলিকন ভ্যালিতে ট্যুর শেষে যেদিন আমরা নিউইয়র্কে ফিরছি আমার ছোটবোনের বাড়িতে, তখন ডেট্রয়েটে ট্রানজিট ছিল। ডেট্রয়েটের আবহাওয়া খুব খারাপ থাকায় ফ্লাইট ডিলে ছিল চার ঘণ্টা। টিভিতে বসে ডেট্রয়েটে ভারি বর্ষণে পানির ঢল দেখছিলাম। আর দেখছিলাম শত শত অপেক্ষমাণ যাত্রী হয় ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছে না। কেউ কারও সঙ্গে কোনো কিছুই শেয়ার করছে না। যত মনোযোগ ওই ল্যাপটপ আর বিশেষ করে মোবাইল স্ক্রিনের ওপর। হতে পারে তারা মোবাইলে বা ল্যাপটপে টিভি দেখছিল। কিন্তু কারও দৃষ্টি ছিল না লাউঞ্জের টেলিভিশনে। তখন মনে হলো, এ কি একজন মানুষের সঙ্গে অন্যজনের সৌহার্দ্য, এমন দুর্যোগে এ কেমন সামাজিকতা! আগে ট্রানজিট লাউঞ্জে এক দেশের মানুষের সঙ্গে অন্য দেশের মানুষের কথা হতো নানা বিষয়ে। আর প্রযুক্তির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন দিনের পর দিন আমরা দূরে চলে যাচ্ছি। পাশের মানুষটি সম্পর্কে জানছি না কোনো কিছু। ডেট্রয়েটে বিমানের অপেক্ষায় বসে থেকে আর আশপাশের মানুষদের নির্বিকার ভাব দেখে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল। সময়টা এখন ইন্টারনেটের। বড় দ্রুত যে সময় এগিয়ে চলেছে অন্তর্জালে। সেই জাল বিস্তৃত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। বাড়ছে পরিধি। যোগ হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। মানুষের নানান ভাব-ভাবনা, মতামত যুক্ত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আর ওয়েবসাইটের পাতায়। ইন্টার-অ্যাকটিভে দুনিয়ায় মানুষ এখন ওয়েব টু পয়েন্ট ও’র সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক শক্তিশালী অবস্থানে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন অনেকে অ্যাকটিভ। ২ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ইউজার ছাড়িয়েছে বাংলাদেশে। এই যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়ন বা ডিজিটাল মুভমেন্ট তৈরি হয়েছে তার অনেকটাই যেমন ইতিবাচক তেমনি কিছুটা নেতিবাচক প্রভাবও দেখছি সমাজে, রাষ্ট্রে।

ইতিবাচক অগ্রযাত্রার বিষয়টি আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই বলা উচিত ই-কমার্সের বিষয়টি। ওয়েবসাইটের পাতায় পাতায় আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে মানুষ এখন স্বাবলম্বী। কেউ খাবার বিক্রি করে, কেউ পোশাক, কেউ বা বই। এমন অনেক কিছুই বিকিকিনি হয় ইন্টারনেটে প্রতিদিন, প্রতি সেকেন্ডে। চার-পাঁচ বছর আগে ছোট ছেলে বিজয় অনলাইন ভেঞ্চারগুলোয় বেশ আকৃষ্ট ছিল। তখনো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে ওঠেনি। ও প্রায়ই বলত অনলাইন মার্কেটিং বিশাল একটা জায়গায় যাচ্ছে। সে সময় বিষয়গুলো নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাইনি। আর এখন দেখছি, এখানেই তো সব। চারদিকে কত ধরনের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। পাঠক! আমার ভাবনার জায়গায় যেহেতু কৃষক থাকে সবসময় তাই বলি কৃষক যে মধ্যস্বত্বভোগীর খপ্পরে পড়ে, সেখান থেকে তাদের এখনো মুক্তি মেলেনি। অন্য সেক্টরগুলোয় কিছুটা উত্তরণ হয়েছে। তবে আমার একান্ত চাওয়া ছিল কৃষকের জন্য এমন একটি মার্কেট প্লাটফরম থাকবে যা থেকে তাদের যেমন আয় হবে তেমনি বাড়বে প্রচার। একটু বলে রাখি, হূদয়ে মাটি ও মানুষ-এর পক্ষ থেকে আমরা কৃষি মার্কেট ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইট অপারেট করছি। ধীরে হলেও এগোচ্ছে। যা বলছিলাম, এ যুগে একজন মডেল কৃষকের ফেসবুক পেজ থাকবে। থাকবে বাজারদর। ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সব সুবিধা। সে প্রচারণার জায়গায় টেলিভশন এখনো অনেক এগিয়ে রয়েছে। প্রায় চার দশক ধরে টেলিভিশনের কল্যাণে বহু মানুষ জানতে পেরেছে কৃষির নানা দিক, কৌশল এবং কৃষিকাজের নানান পদ্ধতি। প্রধান খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে ডাইভারসিফাইড ক্রপ— সবকিছু সম্পর্কে জানতে পেরেছে তারা।

মানুষের স্বাধীনতা অসীম। আর এ স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করার পর সে যদি তার সঠিক ব্যবহার না করে তাহলে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা। তখন স্বাধীনতার অবমূল্যায়ন হয়। কেউ কেউ মারাত্মক ক্ষতির শিকারও হন। ‘ব্লু হোয়েল গেম’টির কথাই ধরুন। কী সর্বনাশা খেলা। মরণখেলা বললে মোটেও ভুল হবে না। ইন্টারনেটের কারণে ছোট ছোট বাচ্চারা কীভাবে এ গেমে মজে গেল! এ সুইসাইডাল গেমের টার্গেট শিশুরা— ভাবতে পারেন পাঠক? কী এক কঠিন সময়ের ভিতর দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের? আমরা কখনো কি ভেবেছি একটি গেম আসবে যা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে আত্মহননে? অভিভাবকদের অসহায়ত্বও আমাকে ভাবিয়েছে ঢের।

না, পাঠক! এমনটি আমরা কখনই আশা করি না। কখনো করতে পারি না। এখন যদি বলি ডিফেমিংয়ের বিষয়টি তাহলে বলব, যে কোনো ইস্যুতে পাবলিক ফিগারদের পেজে কিছু মানুষ আছে যারা দলবদ্ধ হয়ে কমেন্ট বা অশ্লীল গালাগালি করে। এরা হয় বিশেষ কোনো দলের বা কোনো কোনো দলের সমতে বিশ্বাসী। এ যে গালাগাল আর অশ্রাব্য কথার মিছিল চলছে, এসব দেখার কেউ নেই। সেজন্য এ বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে শুধু উত্থাপন করলাম। এ ঘটনা যে শুধু পাবলিক ফিগারদের বেলায় ঘটছে তা নয়, সাধারণ মানুষের প্রোফাইল বা পেজে খুবই কটু মন্তব্য এবং অশ্রাব্য গালাগাল দেখে মনটা ভীষণ ভেঙে পড়ে। এমন রুচিহীনতার সময় পার করছি আমরা। কীভাবে মানুষ তার ইন্টারনেট স্বাধীনতার এমন দুর্ব্যবহার করছে! আরও একটি উদাহরণ দিই। ধরুন কোনো তারকা দম্পতির বিচ্ছেদ হয়েছে এবং তারা দুজন মিলে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা জানিয়েছেন ফেসবুক বন্ধুদের। কিন্তু এরপর কী হয়। অসংখ্য মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ছে তাদের ওপর। মুখে যা আসছে তাই তারা অকপটে লিখে ফেলছে। অভিভাবকদের প্রসঙ্গে বলি। স্কুলের বাচ্চাদের হাতে বাবা-মায়েরা যে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন এতে কোনো লাভ হচ্ছে কি? এই সামাজিক মাধ্যম, ডিপ গেমস, ডার্ক গেমস— এগুলো বাচ্চারা চিনতে-জানতে পারছে আপনার প্রিয় সন্তানকে যে মোবাইল কিনে দিয়েছেন তা থেকেই।

২০১০ সালে নওগাঁর আত্রাইয়ে অনেকটা ভিতরে চকশিমলাতে যাই কৃষকের ঈদ আনন্দ ধারণ করতে। সেখানে পৌঁছানোর পর অসংখ্য শিশু এসে ভিড় করল গাড়ির পাশে। কারণ তারা কখনো গাড়ি দেখেনি। সেই নিভৃত পল্লীতে কৃষকের ঈদ আনন্দ ধারণ করতে যাওয়ার একটা উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের কাছে সংবাদ ছিল ওই গ্রামে আত্মহত্যার হার বেশি। স্থানীয় থানা থেকে এ খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম আমরা। সেখানে গিয়ে ক্লাস সিক্স পড়ুয়া এক কিশোরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই কিশোর একবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে যায়। জানতে চাই, কেন তুমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে? সে বলল, ‘বাবার কাছে মোবাইল ফোন চেয়েছিলাম, কিনে দেয়নি বলে বিষ খেয়েছিলাম।’ জিজ্ঞাসা করলাম, কী বিষ খেয়েছিলে? বলল, কীটনাশক। এ রকম বেশ কয়েকটি ঘটনা আত্রাইয়ে লক্ষ্য করলাম। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, মোবাইল ব্যবহারের বয়সসীমা নিশ্চয়ই রয়েছে। আবার এই মোবাইল বাবা-মায়েরা ব্যবহার করেও কিন্তু সন্তানকে নানাভাবে শিক্ষিত করতে পারতেন। কিন্তু তা হচ্ছে না। আমরা সময়ের চেয়েও দ্রুত চলতে গিয়ে কিছু হোঁচট খাচ্ছি পদে পদে। বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার বদলে, তাদের মাঠে খেলতে নিয়ে যাওয়ার বিপরীতে আমরা মোবাইল কেন তুলে দিচ্ছি সেই বিষয়টা আমাকে গভীরভাবে পীড়িত করে। আর এসবের ফল যে ভালো হচ্ছে না তা তো চারপাশে তাকালে দেখতেই পাচ্ছি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে আমাদের দেশে খুব বেশি আলোচনায় আসে ফেসবুক ও ইউটিউব। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন উদ্যোক্তা তৈরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক। আমাদের সরকারও কাজ করছে তাদের সঙ্গে। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এতে উপকৃত হবেন যাদের অধিকাংশই আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ফেসবুক বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশ-বিদেশের বাজারে প্রবেশাধিকারে সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশ নিয়ে ফেসবুকের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল সংযোগ বাড়ানোর জন্য নানা কর্মসূচি রয়েছে; যা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করবে ফেসবুক। এ সুযোগগুলো আমাদের লুফে নিতে হবে।

ইউটিউবের দিকে যদি তাকাই সেখানেও দেখছি আমাদের কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বেশ ভালো করছে। বিনোদনের পাশাপাশি অনেক শিক্ষামূলক ও শর্ট ফিল্ম প্রজেক্টস নজরে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এগুলো অবশ্যই পজেটিভ এবং এখানে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আসলে মিডিয়ার এই ট্রানজিশন পিরিয়ড আমাদের ভয় না পেয়ে উপভোগ করাই ভালো। আমি মোটেও বিশ্বাস করি না প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বাংলাদেশ থেকে উঠে যাবে। তেমনটি হওয়ার কথা নয়। বরং আমি মনে করি মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে আরও বেশি শক্তিশালী করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ইতিমধ্যে একটা বিশাল ভূমিকা পালন করছে। এখন দেখবেন কয়েকটি টেলিভিশন তাদের সম্প্রচারের পাশাপাশি নিজস্ব নিউজপোর্টাল চালু করেছে। চ্যানেল আইও রয়েছে। প্রায় তিন বছর হলো চ্যানেলআইঅনলাইন ডট কম তার পথচলা অব্যাহত রেখেছে সফলতার সঙ্গে। পত্রিকাগুলোও যে যার মতো অনলাইন ভার্সনে চলে গেছে। আসলে ওই মুঠোফোনে সারা বিশ্ব যেখানে ঢুকে পড়ছে তার স্রোত থেকে বাংলাদেশ বাদ যায় কী করে।

প্রিয় পাঠক! বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য সম্পর্কে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, দেশে যত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহূত হচ্ছে এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই ফেসবুক। পুরুষ ব্যবহারকারী নারীদের চেয়ে এগিয়ে। আর ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। ৯০ শতাংশের ওপর মানুষ ফেসবুকে অ্যাক্সেস করছে তার মোবাইল ফোন থেকে। তবে মোদ্দা কথা, আমরা আমাদের প্রচার-প্রচারণা, সংবাদ, বিজ্ঞাপন এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে সম্পূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। ফেসবুক, ইউটিউব যে পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ফেসবুক এগুলো করতে পারছে তার নিউজফিড প্রেফারেন্সের কারণে। মানুষকে অর্গানিক পোস্ট তারা আর পৌঁছে দিচ্ছে না। দিলেও খুবই কম। ফেসবুক তার স্ট্র্যাটেজি পাল্টিয়ে ফেলেছে। বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে বুস্ট করতে, মানে টাকা দিতে যাতে বহু মানুষের কাছে সেই পোস্ট তারা পৌঁছে দিতে পারে। এ ঘটনা শুধু পাবলিক ফিগারদের পেজে ঘটছে এমনটি নয়, ঘটছে আজ যে ফেসবুক খুলেছে তার ক্ষেত্রেও। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল আমাদের দেশে এসে ব্যবসা করে যাচ্ছে ভার্চুয়ালি, তাদের কাছে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে বা তাদের কাছে কোনো সুবিধা নেওয়ার প্রয়োজনের জন্য সরকারের হর্তাকর্তাদের কেন সিঙ্গাপুর, ভারত, আমেরিকা দৌড়াতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর শহর যদি ঢাকা হয় তবে এখানে কেন ফেসবুকের অফিস হচ্ছে না। একই কথা প্রযোজ্য ইউটিউব ও গুগলের ক্ষেত্রেও। তাদেরও তো জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে। তাদেরও উচিত আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাক্ট করা, যেমনটি অন্য দেশেও আমরা দেখি। আর এই সেক্টর যে বুমিং তা তো আর কোনো ভাবনার অবকাশ রাখে না। আমি আজও শুটিংয়ের জন্য যখন বের হব, তখন সঙ্গে থাকবে একটা ফুল এইচডি ক্যাম। থাকবে ড্রোন বা ব্রডকাস্ট ইকুইপমেন্টস। কিন্তু মনের ভিতর আমার ইচ্ছা থাকবে কী করে ফেসবুকের জন্য একটা ইন্টারেস্টিং কনটেন্ট তৈরি করা যায় যেখানে লাখ লাখ মানুষের রিচ আসবে। ভিউ হবে। মানুষ কিছু জানতে পারবে। মানুষ সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারবে। শেষ কথা হলো, গণমাধ্যম এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এ কথাটা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সবাইকে। তবে যেহেতু অসংখ্য গণমানুষের মিলনস্থল এখন ফেসবুক তাই এখানে আমাদের আরও সচেতনতার সঙ্গে তা ব্যবহার করতে হবে। অভিভাবকদেরও আরও বেশি সতর্ক হতে হবে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে। ইন্টারনেট বা মোবাইল যেন হুট করেই তাদের নাগালে না চলে আসে। আর সরকারের নিশ্চয়ই ফেক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করার একটি কার্যকর পরিকল্পনা থাকতে হবে যাতে দেশের ভাবমূর্তি কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়। একই সঙ্গে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশ যেন আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য সরকারের সফল পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরও নতুন বিষয় ভাবতে হবে। বাংলাদেশকে ইন্টারনেটের সঠিক হাইওয়েতে রাখার প্রধান দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে তাদের।

লেখক : উন্নয়ন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী

পরিচালক ও বার্তাপ্রধান : চ্যানেল আই।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর