রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জোড়া খুনের দুটি ঘটনা সামাজিক অস্থিরতার যে চিত্র তুলে ধরেছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। জোড়া খুনের ঘটনায় কাকরাইলে খুন হয়েছেন মা ও ছেলে। ধনাঢ্য পরিবারের গৃহবধূ ও তার ইংরেজিমাধ্যম পড়ুয়া পুত্রের হত্যাকাণ্ডের রেশ না কাটতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাড্ডার একটি বাড়িতে খুন হয়েছেন বাবা ও মেয়ে। উচ্চবিত্ত পরিবারের মা ও ছেলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা ও মেয়ের হত্যাকাণ্ডে পারিবারিক বিরোধ জড়িত বলে ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত। মূল্যবোধের অবক্ষয় মানুষের পারিবারিক জীবনেও সংকট সৃষ্টি করছে। অবক্ষয়ের ভয়াবহতার প্রকাশ ঘটেছে দুটি জোড়া খুনের ঘটনায়। এ ঘটনা রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার জন্য যেমন বিসংবাদ সৃষ্টি করেছে, তেমন জনজীবনে সৃষ্টি করেছে অনভিপ্রেত আতঙ্ক। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটি জোড়া খুন গণমানসে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দিলেও এটি ব্যতিক্রমধর্মী কোনো ঘটনা নয়। এ ধরনের অঘটন প্রায়ই ঘটছে। কালের বিবর্তনে পারিবারিক বন্ধন যত শিথিল হচ্ছে, পরস্পরের প্রতি মমত্ববোধ ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে। কৃষি ও গ্রামভিত্তিক সমাজব্যবস্থা পেছনে ফেলে মানুষ দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে নগরজীবনে। কৃষিভিত্তিক সমাজের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতার যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করত, তা ক্রমেই অপসৃত হচ্ছে। মানুষ ক্রমেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। আত্মীয়স্বজন দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের প্রতিও মমত্ববোধ অনুভব করছে না। কাকরাইলে মা ও ছেলে হত্যাকাণ্ডের জন্য স্বামী ও তার তৃতীয় স্ত্রীকে সন্দেহ করছে পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, নিহত গৃহবধূ শামসুন্নাহারের স্বামী আবদুল করিম একের পর এক বিয়ে করেছেন স্ত্রীকে না জানিয়ে। বহু নারীর সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিল। স্বামীকে সুধরে আনার চেষ্টা করার কারণেই শামসুন্নাহার প্রতিহিংসার শিকার হন। বাড্ডায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে স্ত্রীর পরকীয়া জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে তা ঠেকাতে মূল্যবোধের লালন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি কেন এই অবক্ষয় দানা বেঁধে উঠছে, সে বিষয়েও সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা করে কারণ উদ্ঘাটনে ব্রতী হতে হবে। অবক্ষয় রোধে যা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।