আল্লাহ আমাদের রব : আল্লাহ আমাদের রব, তিনি আমাদের খালিক ও মালিক। সব সৃষ্ট জীবের স্রষ্টা। এই মর্মে আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, আল্লাহই প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সব সৃষ্ট জীবের রব। রব্বুল আলামিন বিশ্বজগতের পালনকর্তা, প্রতিটি সৃষ্ট জীবের তাদের চাহিদা অনুযায়ী রিজিক সরবরাহ করেন। আল কোরআনে এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে, দুনিয়ায় যত জীব রয়েছে তাদের রিজিক আল্লাহর জিম্মায়। তিনি তাদের অবস্থান ও প্রস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত, প্রতিটি বস্তুই লিপিবদ্ধ রয়েছে সুস্পষ্ট গ্রন্থে।
আল্লাহর অন্য নাম রহমান ও রহিম : আল্লাহর অন্য নাম রহমান ও রহিম, তাই তিনি অতি দয়ালু ও পরম মমতাময়। তার দয়া-মায়া-মমতার কোনো শেষ নেই। তিনি তার প্রতিটি সৃষ্টিকে অতি দয়ার সঙ্গে লালন-পালন করেন, রিজিক প্রদান করেন। যাকে বলা হয় মাতৃস্নেহ। সব মাতৃস্নেহ হাজার গুণ বৃদ্ধি করে আল্লাহ নিজের মাঝে ধারণ করেন। সেই রব স্নেহ দ্বারা তিনি তার সৃষ্টিকে প্রতিপালন করেন। আল কোরআনে এই মর্মে ইরশাদ হচ্ছে, সব স্তুতি-প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্য যিনি রহমানুর রহিম, পরম দয়ালু ও অনন্য মমতাময়। তার রহমতের বারিধারা অঝরে বর্ষিত হয়। প্রত্যেকে তা অনুভব করে। তাই আল্লাহ ইরশাদ করেন, তিনি পরম দয়ালু তার সম্পর্কে জ্ঞাতদের জিজ্ঞাসা করুন। (সূরা ফুরকান : ৫৯)।
দয়াকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন : আল্লাহ দয়ালু ও মেহেরবান, তাই দয়াকারীকে পছন্দ করেন। তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে দয়া করলে খুশি হন। দয়াকারীর প্রতি দয়া করেন। যারা দয়ালু তাদের প্রতি স্বয়ং রহমান দয়া করেন। সুতরাং দুনিয়াবাসীর প্রতি তোমরা দয়া কর তবেই আসমানবাসী তোমাদের প্রতি দয়া করবে। (আবু দাউদ)।দয়ার নাম সদাচরণ এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ : দয়ার অন্য নাম সদাচরণ, একে আরবিতে হুসনুল খুলক বা খুলুকুল আজিম বলে। সদাচরণ আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল। ফরজ ইবাদতের পর সর্বোত্কৃষ্ট কাজ। তাই সদাচরণকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে যেমন প্রিয় হয় তেমনি মানুষের কাছেও প্রিয়। আর এ কারণে প্রিয়নবী (সা.) একটি হাদিসে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মুমিন বান্দা তার সদাচরণের মাধ্যমে রোজাদার ও রাত জেগে ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করে। (আবু দাউদ)।
সদাচরণের মাধ্যমে ইমানের পূর্ণতা লাভ হয় : সদাচরণ কেবল যে উত্তম আমল তাই নয় বরং একে পূর্ণ ইমানের পরিচয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একটি হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, সবচেয়ে পরিপূর্ণ ইমানদারদের অন্তর্ভুক্ত ওই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো এবং যে আপন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নম্র আচরণকারী।
সদাচারের মাধ্যমে নেকির পাল্লা ভারী হয় : সদাচরণ নেকির পাল্লা ভারী করে দেয়। একটি হাদিসে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মুমিনের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে বেশি ভারী কোনো জিনিস থাকবে না। (আবু দাউদ)।
সদাচরণের মাধ্যমে রসুল (সা.)-এর প্রিয় পাত্র হওয়া যায় : সদাচরণের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় পাত্র হওয়া যায় এবং কিয়ামতের দিন তার নিকটবর্তী স্থানে বসার সৌভাগ্য লাভ হবে। এই মর্মে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের সবার মধ্যে আমার কাছে অধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী স্থানে বসার সুযোগ লাভ করবে ওইসব লোক যারা তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবে। (তিরমিজি)।
সদাচারী হওয়ার নির্দেশ : আর এ কারণে নবী করিম (সা.) সাহাবিদের সদাচারী ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, হে মুয়াজ! মানুষের জন্য তোমার চরিত্র সুন্দর কর। (মুয়াত্তা)।
সৃষ্টির সেবার ফজিলত ও লাভ : সদাচরণ থেকে সৃষ্টির সেবার মনোভাব গঠিত হয়। তাই আল্লাহতায়ালা সদাচরণকারী ও সৃষ্টির সেবাকারীদের জন্য আপন মহব্বত, মাগফিরাত ও জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আর তোমরা আপন রবের ক্ষমার দিকে দ্রুত অগ্রসর হও এবং ওই জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান-জমিনের প্রশস্ততা সমতুল্য। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকি ও আল্লাহভীতদের জন্য যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় নেক কাজে সম্পদ খরচ করে, রাগ হজম করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে আর আল্লাহ এ ধরনের উত্তম সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩-১৩৪)।
সদাচার ও সৃষ্টির সেবার ব্যাপকতা : সদাচার ও সৃষ্টির সেবার পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত। পিতা-মাতা, ভাইবোন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখী, অনাথ-মুসাফির সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করো না। আর তোমরা পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার কর এবং আরও সদাচার কর আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে, আরও সদাচার কর তোমাদের অধীনস্থদের সঙ্গে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপছন্দ করেন যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অহংকার করে। (সূরা নিসা : ৩৬)।
উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে সদাচার ও সৃষ্টির সেবার কিছু দিক আলোচনা করা হয়েছে। ১. সৃষ্ট জীবের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তার দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি প্রদান করা। ২. তার অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করা। ৩. কোনো প্রাণীর কোনো আচরণে কষ্ট পেলে তখন উত্তেজিত না হয়ে ক্রোধ সংবরণ করা। ৪. সর্বাবস্থায় সবার সঙ্গে ক্ষমাসুন্দর আচরণ করা। সৃষ্টির সেবাকারীর আল্লাহর সাহায্য লাভ হয়। সৃষ্ট জীবের যে কোনো ধরনের সেবা প্রদান আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয় আমল।