সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খাদ্যের নামে আমরা কী খাচ্ছি

কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ প্রতিবেদনে রাজধানীর পথ খাবারের ৯০ শতাংশের মধ্যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু থাকার যে তথ্য উঠে এসেছে তা শিউরে ওঠার মতো। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত ১৮টি করে খোলা ও নয়টি ব্র্যান্ডের সয়াবিনে, একই সংখ্যক খোলা ও ১৩টি ব্র্যান্ডের সরিষার তেলে এবং সমসংখ্যক খোলা ও ২০টি ব্র্যান্ডের ঘি পরীক্ষা করে মাত্র একটি ব্র্যান্ডের ও দুটি খোলা সয়াবিনের নমুনা মানসম্মত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনটি সাধারণ সেমাই ও ১০টি লাচ্ছা সেমাইয়ে মানসম্মত মাত্রার চেয়ে কম প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত ১৫০টি সবজির নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫টিতে পাওয়া গেছে বিভিন্ন রকম কীটনাশক। ভালো করে ধুয়ে ফেলার পর ছয়টি সবজিতে কীটনাশক অক্ষত পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদান থাকা এবং মানহীনতার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। সবচেয়ে আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় হলো, পথ খাবারের ৯০ শতাংশেই ই-কোলাই, সালমোনেলা, ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু থাকার বিষয়টি। ঢাকার বিভিন্ন বাজার ও সুপারশপের ৫৫টি ব্র্যান্ডের নুডলসের গুণগত মান পরীক্ষা করে ১৪টিতে মাত্রার চেয়ে কম প্রোটিন এবং মাত্রার চেয়ে বেশি টেস্টিং সল্ট পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। ‘ই-কোলাই, সালমোনেলা, ইস্ট মোল্ড মানবদেহে নানা রোগের সৃষ্টি করে; যা অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। পথ খাবারের এক বড় অংশের ক্রেতা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পথ খাবারের আসর বসে। টাকার বিনিময়ে আমাদের শিশু-কিশোর তরুণরা যা কিনে খাচ্ছে তাকে বিষ হিসেবে অভিহিত করলেও খুব একটা ভুল হবে না। এসব অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে তারা পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মানহীন অবস্থাও সমানভাবে উদ্বেগজনক। সবজিতে কীটনাশকের আধিক্য দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের জন্য সাক্ষাৎ হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। খাদ্যের নামে আমরা কী খাচ্ছি সে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে। এটি আমাদের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙাতে অবদান রাখবে এমনটিই কাঙ্ক্ষিত।

 

সর্বশেষ খবর