মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নেক্কার নারীদের জন্য বিশেষ মর্যাদা

মাওলানা আবদুর রশিদ

আল্লাহ ও রসুল প্রেম তথা ইসলামের জন্য সাহাবাদের ত্যাগের কোনো তুলনা নেই। তেমনি তাদের স্ত্রীদের অবদানও অনস্বীকার্য। আমরা জানি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির মধ্যে হজরত জুবায়ের (রা.) অন্যতম। তাকে রসুল (সা.) অনেক মহব্বত করতেন। রসুল (সা.) বলেছিলেন, জান্নাতে প্রত্যেক নবীর জন্য দুজন করে সঙ্গী থাকবে। আমার সঙ্গে থাকবে তালহা আর জুবায়ের (রা.)। জুবায়ের (রা.) প্রায় সময়ই বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র, সংসার বাদ দিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গেই থাকতেন। তার স্ত্রী আসমা (রা.) কখনো স্বামীকে বাধা দেননি; বরং নিজের অধিকার ত্যাগ করে, স্বামীকে ইসলামের পথে জিহাদ করতে সাহায্য করেছেন। কাজের লোক ছাড়াই তিনি ঘরের কাজ করতেন, ঘোড়া ও উটকে খাবার দিতেন।

আসমা (রা.)-এর বাড়িতে অনেক সময় দু-তিন দিনও খাবার থাকত না। ক্ষুধায় সারা দিন ছটফট করতেন। একদিন আসমা (রা.)-এর এক ইহুদি প্রতিবেশী একটি বকরি জবাই করে। তার রান্না করা গোস্তের সুঘ্রাণ আসে তার নাকে। আর বার বার ক্ষুধায় খালি পেটটি মোচড় দিচ্ছিল। তাই তিনি কিছু সলাকাঠি নিয়ে আগুন আনার বাহানায় প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলেন। প্রতিবেশীটি কাঠিতে আগুন ধরিয়ে দিল; কিন্তু খাবারের কথা কিছুই বলল না। আগুন নিয়ে এসে আর কী করবেন, ঘরে তো কোনো খাবারই নেই। তাই আগুন ফেলে দিয়ে আবার আগুন আনতে গেলেন। এভাবে তিনবার আগুন নিয়ে এলেন এবং আগুন ফেলে দিলেন। কিন্তু ইহুদির স্ত্রী তাকে খাবারের জন্য কিছুই বলল না। এবার তিনি কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ! আমার এ দুঃখের কথা কাকে বলব। একমাত্র তুমিই আছো, তুমিই আমার খবর জানো। এমন সময় ইহুদি স্বামীটি ঘরে ফিরলে তার স্ত্রী একবাটি বকরির গোস্ত সামনে এনে দিল। তখন স্বামী জিজ্ঞাসা করল, আমার ঘরে কি কেউ এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ পাশের বাড়ির মহিলা এসেছিল। স্বামী বলল, যাও গোস্তের বাটিটি সেই মহিলাকে দিয়ে এসো। আসমা যখন নামাজ পড়ে কাঁদছিলেন, তখন দেখলেন ইহুদির স্ত্রী গোস্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই সারাটা জীবন কষ্ট ভোগ করেছেন তবুও স্বামীকে নিজের অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে কোনো দিন আবদার করেননি। তাই হজরত জুবায়ের (রা.) ইসলামের জন্য, নবী করিম (সা.)-এর জন্য, আল্লাহর জন্য জিহাদ করতে পেরে মর্যাদাশীল হয়েছেন। তাই বলে কি বিবি আসমা একাই সাধারণভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন? না, তিনিও তার স্বামীর সঙ্গে মর্যাদাশীল হয়ে সম্মানসহ জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কারণ তিনি দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাসকে বিসর্জন দিয়ে নিজেকে লাভবান করেছেন আখিরাতের জন্য। মহিলাদের আরও কতভাবে সম্মানিত করেছেন আল্লাহ রব্বুল আলামিন, এর কোনো ইয়ত্তা নেই। যত নবী-রসুল (সা.), সাহাবি ও নেক্কার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তার আগে তাদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। স্বামীদের প্রতি তাদের সহায়তা এবং তাকওয়ার জন্য আখিরাতের জীবনে তাদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হবে তা অন্য সবার জন্য ঈর্ষণীয় বলে বিবেচিত হবে।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর